State News

অভিষেকের মন্তব্যে পুরুলিয়া তপ্ত, বিজেপির পাশে থাকার ঘোষণা কংগ্রেস বিধায়কের

বিরোধী দলগুলির টিকিটে যাঁরা জয়ী, তাঁদের দলবদল করানোর চেষ্টা সহজে সফল হতে দেওয়া হবে না। ঘোষণা কংগ্রেস বিধায়কের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৮ ১৬:০০
Share:

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যেরই তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বিরোধী শিবিরে।

হাতছাড়া জেলার অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত। ২০টার মধ্যে মাত্র ৮টা পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ডে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা মিলেছে। যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি তবু বলেছেন, পুরুলিয়ায় তৃণমূলের ফল খারাপ হয়নি। ১ জুন পুরুলিয়ায় গিয়ে জেলাকে বিরোধীশূন্য করবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো। মঙ্গলবার সূর্যাস্তের আগে এই মন্তব্য করেছিলেন অভিষেক। সূর্যাস্ত হতেই শুরু হয়ে গিয়েছে হামলা। বলরামপুরে খুন হয়ে গিয়েছেন বিজেপি কর্মী। ফের তেতে গিয়েছে জঙ্গলমহলের রাজনীতি। পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়কের ঘোষণা, অভিষেককে রুখতে বিজেপির পাশে দাঁড়িয়ে লড়বেন তিনি, প্রয়োজনে যোগও দেবেন বিজেপি-তে।

Advertisement

বেশ কয়েক বছর ধরেই পুরুলিয়ায় দলের দাপট নিরঙ্কুশ করে তুলতে সক্রিয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বামেরা নয়, মূল প্রতিপক্ষ ছিল কংগ্রেসই। জেলায় গিয়ে একাধিক বার অভিষেক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে এসেছিলেন দাপুটে কংগ্রেস নেতা তথা দীর্ঘ দিনের বিধায়ক নেপাল মাহাতোকে। নেপালকে তৃণমূলে ভেড়ানো যায়নি। কিন্তু ২০১১ সালে পারা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন যে উমাপদ বাউড়ি, তাঁকে দলে টেনে নিয়েছিলেন অভিষেকরা। ২০১৬-র ভোটে পারা তৃণমূলের দখলেই যায়। কিন্তু বাঘমুন্ডিতে নেপাল মাহাতোকে হারানো যায়নি। পুরুলিয়া সদর বিধানসভা কেন্দ্রেও জিতে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের সুদীপ মুখোপাধ্যায়। অভিষেক মঙ্গলবার মিশন বিরোধীশূন্য পুরুলিয়া ঘোষণা করতেই পাল্টা হুঁশিয়ারি সেই সুদীপের।

‘‘মগের মুলুক ভেবে নিয়েছেন তো। ওই জন্যই বলছেন বিরোধীশূন্য করবেন। আসুন পুরুলিয়ায়। এলেই বুঝতে পারবেন, পরিস্থিতিটা এখন কেমন।’’ বুধবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে ঠিক এই ভাষাতেই চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক।

Advertisement

আরও পড়ুন
পুরুলিয়া বিরোধীশূন্য করতে চান অভিষেক

গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে মোট ১৯২১টি আসনে ভোট হয়েছে পুরুলিয়ায়। তৃণমূল জিততে পেরেছে ৮৩৮টি আসনে। প্রায় চিহ্ন ছিল না যাদের, সেই বিজেপি প্রায় সেয়ানে সেয়ানে টক্করে। ৬৪৪টি আসন পেয়েছে বিজেপি। এত দিন জেলায় মূল বিরোধী দল ছিল যে কংগ্রেস, তারা পেয়েছে ১৭৮টি আসন। বামেরা ১৫০টি।

পঞ্চায়েত সমিতি স্তরেও প্রায় একই ছবি। তৃণমূল জিতেছে ২৩৪টি আসনে। বিজেপি ১৪২টিতে। কংগ্রেস পেয়েছে ২৫টি। বামেরা ৩৩টি।

ফলাফলে স্পষ্ট, পুরুলিয়ায় শাসক দলের ভোটব্যাঙ্কে বিপুল ক্ষয় হয়েছে। আর আচমকা উঠে এসেছে বিজেপি। গেরুয়া উত্থানে ধাক্কা খেয়েছে কংগ্রেস-বামও। কিন্তু নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে তা নিয়ে খুব একটা উদ্বেগ নেই। বরং তৃণমূলের বিরুদ্ধে একজোট থাকার তাগিদ প্রায় গোটা বিরোধী শিবিরে। কংগ্রেস বিধায়কের কথাতেই সে ইঙ্গিত স্পষ্ট।

মঙ্গলবার ঠিক কী বলেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? বলেছিলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামে ফল খারাপ হয়েছে বলা হচ্ছে। বিজেপি-কে নিয়ে কিছু মাতামাতি হচ্ছে। তৃণমূলের ফল খারাপ হয়নি।’’ ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ আরও বলেন, ‘‘১ জুন আমি যাব। পুরুলিয়া বিরোধীশূন্য করে আসব।’’

আরও পড়ুন
যারা যত খেয়েছে, তারা তত হেরেছে জঙ্গলমহলে!

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যেরই তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বিরোধী শিবিরে। বিজেপি-র রাঢ়বঙ্গ জোনের আহ্বায়ক নির্মল কর্মকার বললেন, ‘‘উনি সকালে হুমকি দিয়েছেন। রাত থেকেই হামলা শুরু হয়ে গিয়েছে। বলরামপুরে আমাদের কর্মীকে খুন করে দিয়েছে।’’ বিধায়ক সুদীপও মনে করছেন, অভিষেকের মন্তব্যেই পরিবেশ তপ্ত হয়ে উঠছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কী করে বিরোধীশূন্য করবে? সবে তো ভোট হয়ে গেল। ভোটে তো জিততে পারেনি। ভোট তো আবার পাঁচ বছর পরে। ১ জুন পুরুলিয়ায় এসে তা হলে গোটা জেলাকে বিরোধীশূন্য করে ফেলবে কী ভাবে?’’ তার পরে নিজেই জবাব দিলেন নিজের প্রশ্নের। বললেন, ‘‘সবাই জানে কী পদ্ধতিতে তৃণমূল পুরুলিয়াকে বিরোধীশূন্য করার কথা ঘোষণা করছে। গ্রামে গ্রামে সন্ত্রাস হবে, ভয় দেখানো হবে, হামলা হবে, খুন-জখম হবে। তার পরে পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগাবে। যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদেরই মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেবে। তার পরে চাপ দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দলবদল করতে বাধ্য করবে।’’

বিরোধী দলগুলির টিকিটে যাঁরা জয়ী, তাঁদের দলবদল করানোর চেষ্টা সহজে সফল হতে দেওয়া হবে না। ঘোষণা কংগ্রেস বিধায়কের। বললেন, ‘‘বিজেপি একা নয়। আমরা সবাই রয়েছি। সব বিরোধী দল পুরুলিয়ায় হাত মিলিয়ে লড়বে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।’’

পুরুলিয়ার তৃণমূল নেতারা বলছেন, সুদীপ মুখোপাধ্যায় বিজেপির পাশে থাকার কথা বলছেন, কারণ তিনি বিজেপির দিকে পা বাড়িয়েই রয়েছেন। সুদীপ বললেন, ‘‘বিজেপি-তে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা আপাতত আমার নেই। তবে তৃণমূলকে রুখতে যা করার দরকার, সবই করব। যদি দেখি পরের ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের পথে এগোচ্ছে, তা হলে বিজেপি-তেও যেতে পারি। তৃণমূলের সঙ্গে কোনও আপোস করব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন