হাসপাতালে ডাক্তারদের জন্য রক্ষী-ব্যূহ মুখ্যমন্ত্রীর

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে চিকিৎসক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা জানান, চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মীকে নিগ্রহ করা যে দণ্ডনীয় অপরাধ, হাসপাতালের জনবহুল এলাকায় তা হোর্ডিং দিয়ে জানানোর নির্দেশ ডিজি এবং পুলিশ কমিশনারকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৫৯
Share:

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে ডাক্তারেরা। নিজস্ব চিত্র

কর্মস্থলে মারমুখী বিক্ষোভ, নিগ্রহ থেকে বাঁচতে নিরাপত্তা চাইছিলেন তাঁরা। দাবি আদায়ের আন্দোলনে অনশনও করছিলেন তাঁদের অনেকে।

Advertisement

সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের জন্য অবশেষে সাড়ে চার হাজার নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। সোমবার তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে রাজ্যের চিকিৎসক সংগঠনগুলির দাবি।

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে চিকিৎসক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা জানান, চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মীকে নিগ্রহ করা যে দণ্ডনীয় অপরাধ, হাসপাতালের জনবহুল এলাকায় তা হোর্ডিং দিয়ে জানানোর নির্দেশ ডিজি এবং পুলিশ কমিশনারকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আক্রান্ত ডাক্তার বা হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দায়ের করলে থানাকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার এবং প্রয়োজনে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

শুধু তা-ই নয়। চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিদের দাবি, উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকলে এ বার নিজের চেম্বারেই জরুরি রোগীদের চিকিৎসা করা যাবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। চিকিৎসক সংগঠনগুলির অভিযোগ, নতুন ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইন চিকিৎসক-বিরোধী। তা সত্যি কি না, মুখ্যসচিব ও স্বাস্থ্যসচিবকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।

সরকারের উপরে চিকিৎসকদের চাপ ক্রমেই বাড়ছিল। পরিস্থিতি এমন দিকে যাচ্ছিল যে, অবিলম্বে পদক্ষেপ না-করলে সরকারের পক্ষে চিকিৎসকদের ব়ড় অংশের ক্ষোভ সামাল দেওয়া মুশকিল হত। তাই এ দিন চিকিৎসক সংগঠনগুলিকে ডেকে তাদের অভাব-অভিযোগের কথা শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। তৎক্ষণাৎ সমস্যা সমাধানের নির্দেশও দেন বৈঠকে উপস্থিত মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে।

পাঁচ প্রতিশ্রুতি*

• হাসপাতালে চিকিৎসকদের জন্য নিরাপত্তাকর্মী।

• চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মীকে নিগ্রহ করা যে দণ্ডনীয় অপরাধ, তা জানিয়ে হোর্ডিং।

• দ্রুত ব্যবস্থা নিতে, প্রয়োজনে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার নির্দেশ থানাকে।

• উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকলে সঙ্কটাপন্ন রোগীকে চেম্বারে চিকিৎসা।

• নতুন আইন ডাক্তার-বিরোধী কি না, মুখ্যসচিব ও স্বাস্থ্যসচিবকে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ।

২০১৭ সালে চিকিৎসকদের সংগঠনগুলি ‘ডক্টর্স ইউনিটি ফোরাম’ মঞ্চ তৈরি করেছিল। সেই মঞ্চের তরফে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হয়: ডাক্তার-নিগ্রহ রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক সরকার। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে যাতে ৩০৪ (অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানো) ৩০৪এ (গাফিলতিতে মৃত্যু ঘটানো), পকসো ধারা প্রয়োগ করা না-হয়, তা নিশ্চিত করা হোক। চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য চিকিৎসাকর্মীর শূন্য পদ পূরণ করতে হবে অবিলম্বে। কথায় কথায় সাসপেন্ড বা বদলি প্রতিরোধ, স্বেচ্ছাবসরের অধিকার ফেরানো, পদোন্নতির সুষ্ঠু নীতি চালু করার দাবিও তোলেন ডাক্তার-প্রতিনিধিরা।

সংগঠন-প্রতিনিধিদের দাবি, নতুন ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইন চালু হওয়ার পরে চিকিৎসক-নিগ্রহ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ২০১৬ সালে বছরে ১৮ জন নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন। এখন প্রতি মাসে অন্তত ছ’জন ডাক্তারকে হেনস্থা করা হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালে ১৫ শতাংশ ডাক্তার নিগৃহীত হচ্ছেন। সরকারি ক্ষেত্রে সেই হার ৮৫ শতাংশ। এমনকী থানায় হেনস্থার অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করছে না। সংগঠনের নেতারা জানান, ভাল চিকিৎসকেরা যাতে রাজ্য ছেড়ে চলে না-যান, তা নিশ্চিত করতে অনুরোধ করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।

সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘জেলায় জেলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি ব্যাপক। প্রায় ৫০ শতাংশ চিকিৎসক নেই। অথচ দিকে দিকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ গড়া হচ্ছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে এটাও দেখতে বলেছি।’’

সংগঠনের এক নেতার কথায়, ‘‘সরকার আশ্বাস দিয়েছে। সরকারকেও সুযোগ দেওয়া উচিত।’’ প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা নির্মল মাজির কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এ দিন যে-সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাতে চিকিৎসকদের আর কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন