পর্যাপ্ত বিচারপতি নিয়োগ হলে জমে থাকা মামলার সংখ্যা কমবে, এই যুক্তিতে কর্মবিরতির পক্ষে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের বড় একটি অংশ। কিন্তু টানা কর্মবিরতিতে জমে থাকা মামলার প্রায় কিছুই নিষ্পত্তি হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন বিচারপ্রার্থীরা। তাঁদের মতে, হাইকোর্ট খোলা থাকলে তবুও কিছু মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সম্ভাবনাও থাকছে না। আইনজীবী এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের একাংশ মনে করছেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতি প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে বিচারপ্রার্থীদের ভবিষ্যতকেই।
দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টে জমে রয়েছে কয়েক লক্ষ মামলা। কলকাতা হাইকোর্টেই দু’লক্ষেরও বেশি মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে এ রাজ্যের হাইকোর্টে বিচার ব্যবস্থা থমকে থাকায় সেখানকার আইনজীবীদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন বিচারপ্রার্থীদের একটি বড় অংশ। তাঁদের মতে, হাইকোর্ট খোলা থাকলে তবুও কিছু মামলার নিষ্পতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু একটানা কর্মবিরতিতে তা-ও থাকছে না।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, কর্মরত বিচারপতিদের একাংশও এই পরিস্থিতিতে অধৈর্য হয়ে উঠেছেন। কর্মবিরতির মেয়াদ ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত করার সিদ্ধান্তে তাঁরা যথেষ্ঠ উদ্বিগ্ন। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করছেন, লাগাতার কর্মবিরতি কলকাতা হাইকোর্টের গৌরবকেই ক্ষুণ্ণ করছে না, বিচারপ্রার্থীদের চোখেও ছোট হচ্ছে তার মর্যাদা। প্রবীণ এক আইনজীবী জানান, এই কর্মবিরতিতে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জামিনপ্রার্থী বিচারাধীন বন্দি অথবা সাজাপ্রাপ্ত আপিল মামলার আবেদনকারীদের। সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা।
বকেয়া মামলা
দেওয়ানি
•কর্মবিরতির আগে: ১,৬৪,৩৯৫
•পরে: ১,৬৬,০০০
ফৌজদারি
•কর্মবিরতির আগে: ৩৯,৫৮৭
•পরে: ৪০,২০০
* হাইকোর্ট সূত্রে অানুমানিক সংখ্যা
হাইকোর্টের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সাধারণ পরিস্থিতিতে দিনে গড়ে জামিন বা আগাম জামিন সংক্রান্ত শ’দু’য়েক মামলার নিষ্পত্তি হয়। দৈনিক আপিল মামলার নিষ্পত্তি হয় ১৫-২০টি। এ ছাড়া অন্য মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয় শ’দেড়েক। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সুযোগও নেই। হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রবীণ সদস্য অবশ্য মনে করেন, ৭২ জন বিচারপতির কাজ ৩৩ জন বিচারপতি করতে পারেন না। তাঁরা যদি সেই কাজ করতে যান, বিচারপ্রার্থীরা নির্ভুল বিচার পাবেন না। সেই কারণে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি সিদ্ধান্ত সঠিক ও সঙ্গত। বিচারপ্রার্থীরা যাতে সুবিচার পান, তা দেখাই আইনজীবীদের কাজ।
কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত অন্য এক বিচারপতি বলেন, ‘‘দেশের সংবিধান আইনজীবীদের বিচার ব্যবস্থা স্তব্ধ করার অধিকার দেয়নি। সুপ্রিম কোর্টও একাধিকবার জানিয়ে দিয়েছে, ধর্মঘট বা কর্মবিরতি আইন বিরুদ্ধ। আইনজীবীরা নিজেদের দেশের সংবিধানের চেয়েও বড় বলে মনে করলে তা গভীর দুশ্চিন্তার।’’