রাজ্যে ডিমের জোগান ও চাহিদার ফারাক প্রায় ৭০ লক্ষ। তবে চলতি আর্থিক বছরেই সেই ফারাক কমে যাবে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশনের যদিও দাবি, আগের থেকে ডিমের উৎপাদন বাড়লেও ‘স্বনির্ভর’ হতে এখনও ২-৩ বছর সময় লাগবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেসরকারি সংস্থার মতো প্রাণিসম্পদ বিকাশ উন্নয়ন নিগমও বাণিজ্যিক ভাবে ডিম উৎপাদনে জোর দিয়েছে। বছর দু’য়েক আগে কল্যাণী ও বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় মুরগি ও হাঁসের খামার তৈরি করে ষাট কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল রাজ্য সরকার। এ বার বীরভূমের রাজনগরের বেগমপুর মৌজায় হাঁসের খামার তৈরির জন্য ২২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে প্রাণিসম্পদ বিকাশ উন্নয়ন নিগম। ২৫ একর জায়গার উপর তৈরি হবে খামারটি। সেখানে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লক্ষ ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে নিগম। এ ছাড়াও প্রাণিবিকাশ সম্পদের হাতে থাকা বেশ কিছু খামারের পরিধি বাড়িয়ে বাণিজ্যিক উৎপাদন করার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। পোলট্রি ফেডারেশনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। উদ্যোগপতিদের বিভিন্ন পর্যায়ে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া হবে।’’ তিনি জানান, ৫০টি সংস্থা এ রাজ্যে ডিম উৎপাদন করার জন্যে আবেদন করেছে। তাদের আবেদনগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তারপরে মূলধনী অনুদানে ভর্তুকি দেওয়া হবে। পাশাপাশি মুরগির সুষম খাবার প্রস্তুতকারক সংস্থারাও যাতে রাজ্যে বিনিয়োগ করে সেই চেষ্টাও চালাচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর।
এ রাজ্যে প্রতিদিন আড়াই কোটির মতো ডিমের প্রয়োজন হয়। সংগঠিত ও অসংগঠিত পোলট্রি মিলিয়ে প্রায় এক কোটি ৮০ লক্ষ ডিম পশ্চিমবঙ্গে উৎপাদন হয়। বাকি ডিমের বড় অংশ আসে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। কিছুটা তেলেঙ্গানা ও ওডিশা থেকে আমদানি করা হয়। জোগানে ঘাটতি হলে ডিমের দাম বাড়ে, তেমনি মুরগির খাবার অপ্রতুল হলেও ডিমের দাম বেড়ে যায়। পোলট্রি ফেডারেশনের দাবি, এখন মুরগির খাবারের টান পড়তে শুরু করেছে, সে জন্য ডিমের দাম বাড়ছে। কৃষি দফতর জানিয়েছে, ভুট্টা চাষের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, মুরগির মাংসের চাহিদা অনুযায়ী জোগান দিতে পারলেও ডিম উৎপাদনে বরাবর পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশনের সভাপতি সমেন্দ্রনারায়ণ সেনের দাবি, ‘‘আমাদের রাজ্যে মুরগির মূল খাবার ভুট্টার চাষ কম, সে জন্য খামার তৈরিতে উৎসাহ কম ছিল। তবে গত ২-৩ বছরে সরকার নানা ভাবে সাহায্য করছে।’’ পোলট্রি ব্যবসায় যুক্ত ব্যবসায়ীদেরও দাবি, মুরগির খাবার ভিন্ রাজ্য থেকে আমদানি করতে হয়। মুরগি পালনের খরচ বাড়ায় অন্ধ্রপ্রদেশের সঙ্গে ডিমের দামের ফারাক দাঁড়ায় প্রায় ১ টাকা। লভ্যাংশে টান পড়ায় ডিম উৎপাদনের চেয়ে মাংস উৎপাদনেই খামার মালিকদের উৎসাহ বেশি। ওই সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতির দাবি, ‘‘রাজ্য সরকার যে নীতিতে এগিয়ে চলেছে, তাতে সামনের ২-৩ বছরের মধ্যে আমরা ডিম উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে উঠব। এ বছরেই ৩৬টি জায়গাতে নতুন করে বড় খামার তৈরি হচ্ছে।’’