ডিভিসি-র জলাধারের জন্য টাকা চাইল রাজ্য

মঙ্গলবারই বিধানসভায় লিখিত বিবৃতিতে রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসি-র জল ছাড়াকে দায়ী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, ড্রেজিং করে জলাধারগুলির জলধারণ ক্ষমতা না বাড়ালে পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন সম্ভব নয়। এ বার মুখ্যসচিবের চিঠিও গেল দিল্লিতে।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৭ ০২:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

ডিভিসি-র জলাধারগুলির সংস্কারের জন্য কেন্দ্রের কাছে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানাল রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সম্প্রতি মুখ্যসচিব মলয় দে এ বিষয়ে চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎসচিব অজয়কুমার ভাল্লাকে।

Advertisement

মঙ্গলবারই বিধানসভায় লিখিত বিবৃতিতে রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসি-র জল ছাড়াকে দায়ী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, ড্রেজিং করে জলাধারগুলির জলধারণ ক্ষমতা না বাড়ালে পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন সম্ভব নয়। এ বার মুখ্যসচিবের চিঠিও গেল দিল্লিতে।

ডিভিসি যদিও লাগাতার দাবি করে আসছে, জলাধারগুলির সংস্কার সম্ভব নয় এবং এই ধরনের সংস্কারের নজিরও নেই। তা ছাড়া, পলি তুলে ফেলতে গেলে জমিও লাগবে।

Advertisement

এ বিষয়ে রাজ্যের বক্তব্য, তারা জলের তলা থেকে পলি তোলার দাবি করছে না। গ্রীষ্মের সময়ে জলাধারগুলির জলতল অনেকটা নেমে যায়। মাটি বেরিয়ে পড়ে। সেই মাটি কেটে জলাধারের চারপাশে ফেলে অতি সহজেই পাড় উঁচু করা যায়। তাতে সব দিক দিয়েই জলাধারের জলধারণ ক্ষমতা বাড়বে। নবান্নের এক কর্তার দাবি, পাঞ্চেত এবং মাইথন— দু’টি জলাধারের আশেপাশেই কোল ইন্ডিয়ার অনেক পরিত্যক্ত খোলা-মুখ খনি পড়ে রয়েছে। অতিরিক্ত মাটি সেই খনিগুলিতে ফেলে ভরাট করে দেওয়া যায়।

ডিভিসি-র জলাধারের জন্য রাজ্য কেন চিঠি লিখল? নবান্নের বক্তব্য, ডিভিসি-র সেই আর্থিক অবস্থা নেই যে, তারা নিজেরাই জলাধারগুলির সংস্কার করতে পারে। তাই বিদ্যুৎ মন্ত্রকের অধীনস্থ রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থার জলাধারগুলির সংস্কারের জন্য কেন্দ্রকেই অর্থ মঞ্জুর করতে হবে। রাজ্যের লক্ষ-লক্ষ মানুষের স্বার্থেই সেটি প্রয়োজন।

প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, বছর দুয়েক আগেও ডিভিসি-র জলাধার সংস্কারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সাড়া দেয়নি কেন্দ্র। রাজ্য এ বার তাই চাপ বাড়ানোর পথেই হাঁটছে। ওই কর্তার যুক্তি, জলাধারগুলি রাজ্যের হলে সরকার যেখান থেকে হোক অর্থের সংস্থান করে পাঞ্চেত ও মাইথন সংস্কারের কাজে হাত দিত। মুখ্যমন্ত্রীও তাতে আপত্তি করতেন না। আইনত তা সম্ভব নয় বলেই বিশ্ব ব্যাঙ্কের ঋণ এবং নিজেদের কোষাগারের কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে নিম্ন দামোদর উপত্যকার নদী-নালাগুলির পলি তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। কিন্তু ডিভিসি-র জলাধারগুলির ধারণ ক্ষমতা না বাড়লে প্রকল্পটির সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।

চলতি বছরে টানা তিন দিন ভারী বর্ষণের পরে ডিভিসি-র পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়। তাতে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলা ভেসে গিয়েছে। ফসল নষ্ট হয়েছে কয়েক লক্ষ হেক্টর কৃষিজমির। ভেঙে গিয়েছে বহু ঘর-বাড়ি, রাস্তা, সেতু। নবান্নের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ ১০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর জন্য ডিভিসি-কেই দায়ী করে এই বন্যাকে ‘ম্যান মেড’ বলে আখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন