বলল হাইকোর্ট

টোটো-ভ্যানো দুর্ঘটনায় ক্ষতি মেটাক রাজ্য

টোটো বা ভ্যানোর যাত্রীরা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে রাজ্য সরকারকেই তাঁদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ভাবতে হবে, অন্তত যত ক্ষণ না টোটো-ভ্যানো পরিবহণ আইনের আওতাভুক্ত হচ্ছে— এমনটাই মনে করে কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৭:২৪
Share:

টোটো বা ভ্যানোর যাত্রীরা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে রাজ্য সরকারকেই তাঁদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ভাবতে হবে, অন্তত যত ক্ষণ না টোটো-ভ্যানো পরিবহণ আইনের আওতাভুক্ত হচ্ছে— এমনটাই মনে করে কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছে, দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের বিষয় নিয়ে পরিকল্পনাও করতে।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্য জুড়ে এখন কমবেশি এক লক্ষ দশ হাজার টোটো-ভ্যানো চলে। সেগুলি পরিবহণ আইন মেনে চলাচল করে না বলে অভিযোগ তুলে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে হাইকোর্টের বিভিন্ন বিচারপতির আদালতে। জনস্বার্থে মামলা দায়ের হয়েছে প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চেও। ৬ মে প্রধান বিচারপতি অবৈধ, বেআইনি টোটো-ভ্যানো চলাচল রুখতে রাজ্যকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। বেআইনি চলাচলে লাগাম দিতে ওই দিন উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কমিটি গড়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন। টোটো-ভ্যানো সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে শুক্রবার রাজ্য হলফনামা পেশ করে আদালতে জানাল, নতুন করে টোটো-ভ্যানো রাস্তায় নামাতে উৎসাহ দেওয়া হবে না।

রাজ্য এ কথা বললেও, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন হাইকোর্ট। রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্ত এ দিন আদালতে জানান, রাজ্য বিভিন্ন বিমা সংস্থার সঙ্গে এ নিয়ে প্রাথমিক কথা বলেছে। তা শুনে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘বিমার প্রিমিয়াম কে দেবে? যাত্রীরা বিমার আওতায় আসবেন কি? তাঁরা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে রাজ্য কি করবে?’’ লক্ষ্মীবাবু জানান, কমিটির বৈঠকে সে সব নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি।

Advertisement

এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন রাজ্যের পরিবহণ দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি আদালতে জানান, টোটোর প্রযুক্তিকে কী করে আরও উন্নত করে তাকে গণপরিবহণের অঙ্গ করা যায় তা নিয়েও ভাবছে রাজ্য। কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রকের কাছে ইতিমধ্যেই এ নিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তা জেনে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, এ সব করতে সময় লাগবে। প্রধান বিচারপতি জানতে চান, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন যে কমিটি গড়ার কথা বলা হয়েছিল, সে বিষয়ে কি হল। লক্ষ্মীবাবু জানান, হলফনামায় বিস্তারিত বলা হয়েছে।

হলফনামায় বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব ওই কমিটির চেয়ারম্যান। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন, পরিবহণ দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, রাজ্য পুলিশের ডিজি, বিধাননগর, হাওড়া ও ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার।

হলফনামায় আরও লেখা রয়েছে, ২০ মে কমিটির প্রথম বৈঠক হয়। বৈঠকে আলোচনা হয়, টোটো-ভ্যানোর বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কয়েক লক্ষ পরিবারের জীবনধারণের প্রশ্ন। হঠাৎ করে টোটো-ভ্যানো চলাচল বন্ধ করে দিলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। এটি একটি আর্থ-সামাজিক সমস্যা। তবে কমিটি ঠিক করেছে, নতুন করে টোটো-ভ্যানো রাস্তায় নামাতে উৎসাহ দেবে না। যেগুলি চলছে সেগুলিকে নথিভূক্ত করবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বিডিও ও পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসারেরা। টোটো পরিবেশবান্ধব হলেও কী করে টোটোর যন্ত্রাংশ বা তার প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করা যায় তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য টেকনিক্যাল কমিটি গড়বে। তারা টোটোর যাত্রীদের নিরাপত্তার দিকটিও যাচাই করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন