হেস্তনেস্তর হুমকি মমতার, ঘর গুছোতে লড়াই এ বার বাংলা জুড়ে

নোট বাতিলের প্রতিবাদে লড়াই চালিয়ে যেতে ফের দিল্লি যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি মোদী-বিরোধী আন্দোলনে গোটা বাংলার মানুষকে এ বার পাশে পাওয়ার চেষ্টায় নামলেন তৃণমূল নেত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩০
Share:

ফের পথে। শনিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

নোট বাতিলের প্রতিবাদে লড়াই চালিয়ে যেতে ফের দিল্লি যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি মোদী-বিরোধী আন্দোলনে গোটা বাংলার মানুষকে এ বার পাশে পাওয়ার চেষ্টায় নামলেন তৃণমূল নেত্রী।

Advertisement

মানুষের দুর্ভোগ খতিয়ে দেখতে শনিবার ফের কলকাতার পথে নামেন মমতা। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, ক্যানিং স্ট্রিট চত্বর, বড় বাজার এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি। তাঁকে সামনে পেয়ে নোট-সঙ্কট নিয়ে ব্যবসায়ী-দোকানদারা ক্ষোভ উগরে দিলে, সেটিকে হাতিয়ার করে এ দিনও কেন্দ্রকে তুলোধোনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। তার পর হেস্তনেস্ত করে ছাড়ব।’’ এর পরই তৃণমূলের তরফে ঘোষণা করা হয়, কেন্দ্রের এই ‘তুঘলকি সিদ্ধান্তের’ প্রতিবাদে আগামী ২৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার কলকাতায় মিছিল করবে শাসক দল। কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হয়ে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে শেষ হবে ওই মিছিল। পর দিন একই ভাবে জেলায় জেলায় মিছিল করবে তৃণমূল। তার পর দিন শনিবার রাজ্যের সমস্ত ব্লকে নোট বাতিলের বিরোধিতায় মিছিল করবেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা।

এ দিন মমতা যখন পথে ছিলেন, তখন সংসদের অলিন্দে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কংগ্রেসের সঙ্গে দৌত্যে ব্যস্ত ছিলেন তৃণমূলের দুই নেতা— সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুখেন্দুশেখর রায়। ইন্দিরা গাঁধীর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সংসদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাঁরা। ওই অনুষ্ঠান শেষে সুদীপ-সুখেন্দু এ দিন সেন্ট্রাল হলে বৈঠক করেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ এবং সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলের সঙ্গে। নোট-তর্কে মোদী সরকারকে কোণঠাসা করার কৌশল নিয়েই কথা হয়। প্রসঙ্গত কাল, সোমবার সরকার-বিরোধী দলগুলির বৈঠক ডেকেছে কংগ্রেস। ‘বৃহত্তর বিরোধী ঐক্যের স্বার্থে’ ওই বৈঠকেও থাকছে তৃণমূল। মমতাও ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রয়োজনে দু-এক দিনের মধ্যে ফের দিল্লি যাবেন তিনি।

Advertisement

অনেকে অবশ্য বলছেন, তাঁর সাম্প্রতিক দিল্লি সফরটি আশানুরূপ হয়নি বলেই কৌশলে বদল আনছেন মমতা। তাঁর আশা ছিল, নোট বাতিলের বিরোধিতায় বিরোধী দলগুলির নেতৃত্ব দেবেন তিনিই। বাস্তবে হয়েছে উল্টো। নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে তৃণমূল যে পথ নিয়েছিল, তার সঙ্গে মতের ফারাক রয়েছে কংগ্রেস, বাম, সংযুক্ত জনতা, সপা-র মতো দলের। ফলে বাকি বিরোধীরা যখন এককাট্টা হয়ে সংসদে সরকারকে বিঁধছিলেন, তখন রাইসিনা অভিযানে কেবল অরবিন্দ কেজরীবাল এবং ওমর আবদুল্লাকে দেখা গিয়েছে মমতার সঙ্গে— সংসদে যাঁদের শক্তি নামমাত্র! তাই আপাতত নেতৃত্বের ইচ্ছা ছেড়ে বৃহত্তর বিরোধী জোটের শরিক হতে চাইছেন মমতা। কেজরীবালের পরিবর্তে সমন্বয় বাড়িয়েছেন কংগ্রেসের সঙ্গে। আর পাশাপাশি ঘর গুছোতে চাইছেন বাংলায়। নোট-সঙ্কটকে পুঁজি করে রাজ্যে মোদী-বিরোধী রাজনীতির মুখ হয়ে উঠতে চাইছে তৃণমূল। কলকাতা ও জেলায় মিছিলের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে এই কারণেই।

তবে রাজনীতির কৌশল যা-ই থাক, মুখ্যমন্ত্রী আচমকা পথে নামায় এ দিন দুপুরে মধ্য ও উত্তর কলকাতায় হঠাৎই সাড়া পড়ে যায়। বেলা দেড়টা নাগাদ নবান্ন যাওয়ার পথে তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে নেমে পড়েন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে। ব্যাঙ্কে কত টাকা রয়েছে জানতে চান রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্মী-অফিসারদের কাছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে আমার কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু নোট যেন পর্যাপ্ত থাকে, তা নিশ্চিত করুন। বাজারে লেনদেন মার খাচ্ছে।’’ সেখান থেকে বেরিয়ে প্রথমে বড় বাজার ও পরে ক্যানিং স্ট্রিটে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর সাংবাদিকদদের সামনে কেন্দ্রের তুমুল সমালোচনা করেন। বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ কি প্লাস্টিক (প্লাস্টিক মানি) খাবে? ক্রেডিট, ডেবিট কার্ড আছে মাত্র ৪% লোকের। বাকি ৯৬ শতাংশ মানুষের কী হবে?’’ মমতা এ-ও অভিযোগ করেন, নোট সরবরাহ নিয়ে বাংলার সঙ্গে বৈষম্য হচ্ছে। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে ৫০০ টাকার নতুন নোট পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বাংলায় এখনও আসেনি। তবে এ দিন আর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ফেরানোর দাবি করেননি মমতা। শুধু বলেন, ‘‘নতুন আর পুরনো, ৫০০ টাকার দুটো নোটই চলুক। ১০০০ টাকার পুরনো নোটও কিছু দিন চালু থাকুক।’’

অবশ্য মমতাকে পাল্টা সমালোচনা করতে ছাড়েননি প্রতিপক্ষরা। বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘কষ্ট হলেও মানুষ নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। মানতে পারছেন না কেবল মুখ্যমন্ত্রী।’’ তাঁর কথায়, ‘‘উনি কথা বলছেন বড়বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে! তাঁরা কি গরিব?’’

সংসদে কংগ্রেস-তৃণমূল সমন্বয় চললেও এ ব্যাপারে তৃণমূলকে ছেড়ে কথা বলেননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। মমতাকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘গরিবের চিন্তা থাকলে তৃণমূল সারদার টাকা লুঠ করত না। মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারছেন না, কী করলে লুঠের টাকা বাঁচাতে পারবে তৃণমূল। মানুষের হয়রানি ও দুর্ভোগ দেখবে কি, তৃণমূল নিজেই হয়রান!’’

মমতাকে খোঁচা দিয়ে আবার সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘আসলে মোদীর সঙ্গে দর কষাকষি করছেন তৃণমূল নেত্রী। সফল হলে তাঁর লাভ। ঠিক যেমন, এর আগে সারদায় সিবিআই তদন্ত থমকে গিয়েছে। নারদা কাণ্ড নিয়ে এথিক্স কমিটির বৈঠকও হচ্ছে না।’’

তবে বিরোধীদের জবাব দিয়ে মুকুল রায় বলেন, ‘‘ওঁরা কী বলছেন যায় আসে না। কারণ, মাটির সঙ্গে ওঁদের আর যোগ নেই। তাই জানেনও না মানুষ কতটা অসুবিধায় পড়েছেন। দিদি তা অনুভব করতে পারছেন বলেই সবার আগে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন