জমি-জট কাটছে না। আবার রাস্তাও চওড়া করতে হবে। অগত্যা পাঁচটি শহরে জাতীয় সড়কের উপর উড়াল পথ বা ‘এলিভেটেড করিডর’ তৈরি করতে চায় রাজ্য। নবান্নের যুক্তি, এতে এক ছটাক জমি না-নিয়েও তিন বা চার লেনের সড়ক নির্মাণ সম্ভব। তবে খরচ হবে ছ’গুণ বেশি। রাজ্য সরকারের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে জমি সমস্যার কথা মাথায় রেখে এই বিকল্প পরিকল্পনায় প্রাথমিক ভাবে সম্মতি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক।
কেন্দ্রের অনুমোদনের পরে বারাসতের উপরে প্রথম উড়াল পথের পরিকল্পনা হয়েছে। বাকিগুলি হবে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার আমতলা ও ডায়মন্ড হারবারে, হাওড়ার কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে এবং শিলিগুড়ি শহরে। উড়াল পথের নীচ দিয়ে চলবে শহরের মধ্যে চলাচলকারী যানবাহন। উড়াল পথে চলবে দূরপাল্লার যান। সব মিলিয়ে উড়াল পথের দৈর্ঘ্য হবে অন্তত ১০ কিলোমিটার।
নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘বহু চেষ্টা করেও জবরদখল হটিয়ে জমি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দীর্ঘদিন আটকে রয়েছে সম্প্রসারণের কাজ। জাতীয় সড়কে সাধারণত উড়াল পথ নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয় না। কিন্তু ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির কথা জেনে মন্ত্রক বাড়তি বরাদ্দে রাজি হয়েছে।’’ পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সারা দেশে ৫৫টি শহরকে চিহ্নিত করা হয়েছে যার উপর দিয়ে জাতীয় সড়ক গিয়েছে। এই ৫৫টি শহরেই উড়াল পথ তৈরি করা হবে।’’
উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতার সংযোগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। বহু চেষ্টায় এয়ারপোর্ট এক নম্বর গেট থেকে মধ্যমগ্রাম পর্যন্ত চার লেন রাস্তা তৈরি হয়েছে। তার পর রাস্তার চেহারা সরু সুতোর মতো। জমির সমস্যায় সড় সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় মধ্যমগ্রাম থেকে বারাসত অতিক্রম করে ফের জাতীয় সড়কে মিলবে প্রস্তাবিত উড়াল পথ। এর পর থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত ৮৪ কিলোমিটার পথে সম্প্রসারণ হবে।
১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণে বাধা আমতলা এবং ডায়মন্ডহারবারের ঘিঞ্জি এলাকা। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে শিলিগুড়ির পরিস্থিতিও একই। তাই সেখানে ঘোষপুকুর থেকে বাগডোগরা মোড় এবং দার্জিলিং মোড় থেকে সেবক রোড হয়ে সেনা ছাউনি পর্যন্ত রাস্তাটি উড়ালপথে জোড়া হবে। আবার কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উনসানি মোড়ের রেলওয়ে সেতু থেকে সাঁতরাগাছি ওভারব্রিজের উপর দিয়ে হাওড়া গেট পর্যন্ত চার লেনের উড়াল পথ হবে।
জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণে দুই থেকে চার লেন করতে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয় ১৫ কোটি টাকা। কিন্তু এক কিমি উড়াল পথ তৈরির খরচ প্রায় ১০০ কোটি। অর্থাৎ, পাঁচটি উড়াল পথ করতে অন্তত ১০০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এর পুরো অর্থই কেন্দ্র দিতে রাজি বলে দাবি পূর্ত কর্তাদের।