আফতাব আনসারি শুধু নয়, কলকাতার জেলে বসে পাকিস্তানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখত লস্কর জঙ্গি আসাবুদ্দিন ওরফে শৌকত! দিল্লি পুলিশ আজ এই তথ্য জানিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, কলকাতার জেলগুলি থেকে সম্প্রতি প্রচুর ফোন উদ্ধার করা হলেও, আসাবুদ্দিনের বিদেশে ফোন করার কথা তাঁদের জানা নেই। কারা দফতর সূত্রে খবর, আজ সন্ধেয় বিষয়টি নিয়ে দিল্লি পুলিশের কাছে তথ্য চেয়েছে রাজ্য।
আফতাব ও আসাবুদ্দিন, দু’জনেই খাদিম-কর্তা পার্থ রায়বর্মণ অপহরণের মামলায় অভিযুক্ত। আফতাবের মতো আসাবুদ্দিনও ছিল আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। দিল্লি পুলিশ সম্প্রতি তাকে হেফাজতে নিয়েছে অন্য এক মামলায়। দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে জেরা করা হচ্ছে তাকে। সেই সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই আব্দুল সুভান নামে আসাবুদ্দিনের এক আত্মীয় তথা লস্কর নেতাকে সম্প্রতি পাকড়াও করা হয়েছে দিল্লির সরাই কালে খান রোড থেকে। এ বার জানা গেল কলকাতার জেলে বসে আসাবুদ্দিনের ফোন করার কথা।
দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, আলিপুর সংশোধনাগার থেকে মোবাইলে পাকিস্তানে লস্কর জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত আসাবুদ্দিন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশ সুভানকে জানাত। এই সুভান আদতে হরিয়ানার মেওয়াটের বাসিন্দা। গত বছর অগস্টে প্যারোলে ছাড়া পেয়ে আসাবুদ্দিন সেখানে গিয়েছিল। মেওয়াটে বসেই দিল্লির কয়েক জন কর্পোরেট কর্তাকে অপহরণ ও জঙ্গি হামলার ছক কষে তারা। অপহরণের মাধ্যমে লস্করের জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য অর্থ জোগাড় করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
শুধু তাই নয়, দিল্লি পুলিশের এক কর্তার কথায়, “দিল্লি ও আশপাশের এলাকায় লস্করের মডিউল তৈরি করে লালকেল্লায় হামলাও করতে চেয়েছিল সুভান।” তাঁর দাবি, ২০১৩ সালের দিল্লি বিধানসভা ভোটের সময়ে রাজধানীতে হামলার ছক কষেছিল সুভান ও তার সঙ্গীরা। কিন্তু তার দুই সহযোগী মহম্মদ শাহিদ ও কারি রশিদ গ্রেফতার হওয়ায় সেই ছক বানচাল হয়ে যায়।
আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে আসাবুদ্দিনের পাকিস্তানে ফোন করা নিয়ে কোনও তথ্য জানা নেই বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ ও কারা দফতর। রাজ্য পুলিশের এডিজি (কারা) অধীর শর্মা বলেন, “গত ৪ মাসে কলকাতার জেলগুলিতে প্রায় ৪০০ মোবাইল উদ্ধার হয়েছে বন্দিদের কাছ থেকে। উদ্ধার হওয়া মোবাইলগুলির কললিস্ট আমরা পরীক্ষা করেছি। সেখান কোনও বন্দি আইএসডি কল করেছে, এমন কোনও তথ্য আমাদের কাছে আসেনি।” কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-ও জানিয়েছে, দিল্লি পুলিশের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়, এমন কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই।
দিল্লি পুলিশের একটি দল কলকাতায় এসে আসাবুদ্দিন ও আর এক বন্দিকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়েছিল। আদালত প্রথম জনকে তাদের হাতে দেওয়ার অনুমতি দেয়। পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন এই বিষয়ে দিল্লি পুলিশকে সহযোগিতাই করেছিল। কিন্তু আসাবুদ্দিনকে জেরা করে পাওয়া তথ্য পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনকে না জানিয়ে আগেভাগে সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করায় এ রাজ্যের পুলিশ ও কারা দফতরের কর্তারা বিস্মিত। কোন মোবাইল নম্বর থেকে আসাবুদ্দিন পাকিস্তানে ফোন করছিল, তা জানতে চেয়ে কারা দফতর এ দিন সন্ধেয় দিল্লি পুলিশকে বার্তা পাঠিয়েছে ।
খাদিম-মামলার মূল আসামি আফতাব আনসারি এখনও আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। বছরখানেক আগে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ-এর গোয়েন্দারা আড়ি পেতে ধরে ফেলেন আফতাব কলকাতার জেলে বসেই করাচিতে তার স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছে। তার পরে বিভিন্ন সতর্কতাও নেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও যে লস্করের জঙ্গি নেটওয়ার্ক থেকে পশ্চিমবঙ্গের জেলগুলিকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি, সেটাই স্পষ্ট হল এ বার। সৌজন্যে দিল্লির পুলিশ।