(বাঁ দিকে) পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘বন্ধু’। মেনে নিলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ও। সাড়ে তিন বছর জেল খাটার পর মঙ্গলবার পার্থ বাড়ি ফিরেছেন। বুধবার সংবাদমাধ্যমে ‘সদর্পে’ ঘোষণা করেছেন, অর্পিতা তাঁর বান্ধবী। ‘পারিবারিক বান্ধবী’। অর্পিতাও তাতে সায় দিলেন। জানিয়ে দিলেন, বান্ধবীতে অসুবিধার কিছু নেই। এটা পরকীয়া নয়।
বুধবার দুপুরে আনন্দবাজার ডট কম-এর তরফে অর্পিতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। পার্থ এই প্রথম প্রকাশ্যে তাঁকে ‘বান্ধবী’ বলে স্বীকার করেছেন শুনে অর্পিতা বলেন, ‘‘যদি উনি আমাকে বান্ধবী ভাবেন, আমি তো বন্ধু বলে মানবই। উনি তো আমার বন্ধুই। বান্ধবীতে তো অসুবিধার কিছু নেই। এটা পরকীয়া নয়। বান্ধবী থাকা অন্যায় নয়।’’ শুধুই বন্ধু? না বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু? সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।
জেলফেরত পার্থের সঙ্গে এখনও কথা হয়নি অর্পিতার। কথা বলবেন কি না, সে বিষয়েও নিশ্চিত নন। ২০২২ সালে তাঁর দু’টি ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছিল ইডি। তাঁকে এবং পার্থকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তার পরেই। পার্থ বার বার দাবি করেছেন, টাকা তাঁর নয়। বুধবারও এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘আমার বাড়ি থেকে তো টাকা পাওয়া যায়নি। বান্ধবীর কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে। বান্ধবীই তার জবাব দেবে।’’ কী জবাব দেবেন? অর্পিতা বলেন, ‘‘আমি তো কোনও ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই। এটা বিচারাধীন একটা বিষয়। বিচারের উপর আমাকে আস্থা রাখতেই হবে।’’
গ্রেফতারি প্রসঙ্গে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অর্পিতা। ক্ষোভ রয়েছে সংবাদমাধ্যমের উপরেও। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ২ বছর ৪ মাস জেল খেটেছি। বাংলার একটা মেয়েকে সকালে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হল, কেউ তো কিছু বলল না সেটা নিয়ে!’’ একটু থেমে তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার কারও প্রতি রাগ বা অভিমান নেই। কাউকে দোষারোপ করছি না। সত্য কী, সেটা সময়ই বলবে।’’
বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
পার্থ কি রাজনীতিতে ফিরবেন? বন্ধুর উদ্দেশে কী বার্তা দিতে চান? অর্পিতা রাজনীতি নিয়ে কোনও মন্তব্যে আগ্রহী নন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পার্থের একান্ত নিজস্ব বলে মনে করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁর রাজনীতি দেখে তো আমি বন্ধুত্ব করিনি। আমাকে কি ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে কখনও দেখেছেন? চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে দেখেছেন? পার্থদার সঙ্গে আমাকে দেখা যেতেই পারে। আমি বান্ধবী হিসাবে তাঁর সঙ্গে থেকেছি। কিন্তু রাজনীতির কোনও মানুষকে চেনা মানেই তো রাজনীতির লোক হয়ে যাওয়া নয়!’’ জেলমুক্তির পর পার্থকে স্বাগত জানাতে চান অর্পিতা? তিনি বললেন, ‘‘আগামীর লড়াইয়ে উনি যেন এগিয়ে যেতে পারেন। মানুষের কাছে এখন ওঁকে অনেক কিছু প্রমাণ করতে হবে। মানুষের সম্মুখীন হতে হবে ওঁকেই।’’
পার্থের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব নিয়ে সমাজমাধ্যম এবং সংবাদমাধ্যমের জলঘোলায় অর্পিতা অসন্তুষ্ট। বলেছেন, ‘‘বয়সের পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু যে ভাবে ওঁর সঙ্গে আমাকে জড়ানো হয়েছে, আমাকে জড়িয়ে ওঁকে যে ভাবে কালিমালিপ্ত করা হয়েছে, তা দুঃখের।’’ তা হলে সত্যিটা কী? অর্পিতার কথায়, ‘‘সত্য কী, সেটা উনি জানেন। উনি জীবন আমার চেয়ে অনেক বেশি দেখেছেন। উনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন বলেই আমার ধারণা। উনি অসুস্থ মানুষ। এখন ওঁর পাশে থাকা দরকার।’’
অর্পিতা প্রসঙ্গে বুধবার পার্থ মনে করিয়ে দিয়েছেন বান্ধবীর অন্য পরিচয়ও। জানিয়েছেন, অর্পিতা অভিনেত্রী। ৩০ থেকে ৩৫টি ওড়িয়া ছবিতে তিনি কাজ করেছেন। পার্থের কথায়, ‘‘আমার স্ত্রী প্রয়াত। তার পরে কোনও মহিলা যদি আমার সঙ্গে পারিবারিক বন্ধুত্ব করতে চান, সে ক্ষেত্রে কি কারও কোনও আপত্তি থাকতে পারে? অর্পিতার পরিচয় তো শুধু আমার বান্ধবী নয়! সে অভিনেত্রী। দিনের পর দিন যে ভাবে তাঁকে অসম্মান করা হয়েছে, তা অন্যায়।’’ দলের অন্য নেতাদের প্রসঙ্গ টেনে যুক্তি সাজিয়েছেন পার্থ। বলেছেন, ‘‘কারও দুটো বৌ থাকতে পারে, আমার একটা বান্ধবী থাকতে পারে না?’’
জেল থেকে ফিরেই রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন পার্থ। বেহালা পশ্চিমের মানুষের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখেছেন। বলেছেন, তাঁদের কাছেই ‘বিচার’ চাইবেন, যাঁরা ভোট দিয়ে পাঁচ বার তাঁকে বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত করেছেন। এমনকি, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছেন, কেন তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পার্থের এই রাজনৈতিক জীবন থেকে আপাতত নিজেকে দূরেই রাখতে চাইছেন তাঁর বান্ধবী।