বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।
বোলপুর থানার আইসিকে ‘হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে। ভাইরাল হয়েছে একটি অডিয়ো ক্লিপ, যেখানে এক জনকে অনুব্রতের নাম নিয়ে আইসিকে হুমকি দিতে শোনা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে আইসির উদ্দেশে অশ্রাব্য গালিগালাজ। শুক্রবার সকালে সেই ভাইরাল অডিয়ো নিয়ে আনন্দবাজার ডট কমে মুখ খুললেন অনুব্রত নিজে। উড়িয়ে দিলেন যাবতীয় অভিযোগ।
অনুব্রতকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘‘ভাইরাল অডিয়োর কণ্ঠস্বর কি আপনার?’’ জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না।’’ তবে কি কেউ সাজিয়ে সমাজমাধ্যমে এই অডিয়ো ছড়িয়ে দিয়েছে? অনুব্রতের জবাব, ‘‘সেটা বলতে পারব না।’’ এর পরে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘‘আপনি নাকি আইসিকে হুমকি দিয়েছেন?’’ অনুব্রত বলেন, ‘‘আমি কেন আইসিকে হুমকি দেব? আইসি এক জনকে মেরে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। আমি ফোন করলে বলে, ফোন রাখ্।’’ তার পরের প্রশ্ন আর করার সুযোগ দেননি অনুব্রত। তিনি ফোন কেটে দেন।
বোলপুরের আইসি লিটন হালদারকে নিয়ে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন অনুব্রত। বৃহস্পতিবার দলীয় একটি কর্মসূচি শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আইসি এফআইআর করতে গেলেও টাকা চান। গত দু’মাস ধরে এই আইসিকে সরানোর জন্য আমি এসপি, অ্যাডিশনাল এসপি এমনকি ডিজি রাজীব কুমারকেও বলেছি।’’ অর্থাৎ, দু’মাস ধরে চেষ্টা করেও আইসিকে সরাতে পারেননি অনুব্রত। বীরভূম তৃণমূলে একসময় অনুব্রতই ছিলেন শেষ কথা। অনেকে বলতেন, সংগঠনের পাশাপাশি তিনি বীরভূমের প্রশাসনকেও নিয়ন্ত্রণ করেন। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বার পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল ২০১৩ সালে। সেই সময়ে ‘পুলিশের গাড়িতে বোম’ মারার নিদান দিয়ে প্রথম বার রাজ্য রাজনীতির খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন অনুব্রত। এর পরেও একাধিক বার তাঁর মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। তবে সময় বদলেছে। গরুপাচার মামলায় দীর্ঘ দিন জেল খাটতে হয়েছে অনুব্রতকে। কারাবাসের পর ফিরে এসে জেলার রাজনীতিতে আবার আগের মতো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর জেলা সভাপতি পদটিই তুলে দিয়েছে তৃণমূল। বীরভূমে সাংগঠনিক দায়িত্ব এখন শুধু কোর কমিটির, অনুব্রত যার সদস্য মাত্র। আইসি বদল নিয়ে অনুব্রত যে ভাবে প্রকাশ্যে আক্ষেপ করেছেন, তা অতীতে শোনা যায়নি। তাই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দল এবং প্রশাসনে অনুব্রতের নিয়ন্ত্রণ কি একেবারেই চলে গেল?
বীরভূমে তৃণমূলের কোর কমিটির অন্যতম সদস্য কাজল শেখ, অনুব্রতের সঙ্গে যাঁর ‘মধুর’ সম্পর্ক কারও অজানা নয়। ইতিমধ্যে বীরভূমের রাজনীতিতে অনুব্রতের ‘পাল্টা মুখ’ হিসাবে মাথা তুলতে শুরু করেছেন তিনি। ভাইরাল অডিয়ো নিয়ে অনেকে এ-ও দাবি করছেন, ‘আইসি কাজলের লোক’। আনন্দবাজার ডট কমের তরফে শুক্রবার সেই কাজলের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। সবটাই অভিযোগ। এর সত্যতা জানা নেই।’’ তবে আইসি-বিতর্কে দল যে খুব একটা স্বস্তিতে নেই, তা স্পষ্ট। বীরভূমের এক নেতা একান্ত আলোচনায় বলেন, ‘‘আগামী ১৪ তারিখ সিউড়িতে কোর কমিটির বৈঠক হবে। এর মধ্যে যদি এ নিয়ে নাড়াচাড়া না হয়, তবে কোর কমিটির বৈঠকে বিষয়টি তোলা হতে পারে।’’