গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। সেটা আদালতে প্রমাণিত। তার তদন্ত যেমন চলছে, চলবে। তবে তার প্রভাব যেন চাকরিরত শিক্ষকদের উপরে না পড়ে। ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল মামলার রায়ে এমনই বলেছে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ। বুধবার প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ খারিজ করে আদালত জানিয়েছে, ওই ৩২ হাজার শিক্ষকই আগের মতো শিক্ষকতা করবেন। আদালতের এই রায়ে খুশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রায় ঘোষণার অনতিবিলম্বে তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘চাকরি দেওয়া দরকার, খেয়ে নেওয়া নয়।’’
হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, দুর্নীতি হয়েছে বলে সকলের চাকরি বাতিল করা যায় না। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘২০১৬ সাল থেকে ২০২৫ সাল, প্রায় ৯ বছর চাকরি করার পর যদি কারও চাকরি বাতিল হয়, তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’’ আদালত এ-ও বলেছে, চাকরি করার সময় ওই চাকরিপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেনি। কয়েক জনের জন্য গোটা নিয়োগপ্রক্রিয়ার ক্ষতি করা যায় না।
২০১৪ সালের ‘টেট’-এর ভিত্তিতে ২০১৬ সালে ৪২৫০০ শিক্ষক নিয়োগ হয় প্রাথমিক স্কুলগুলিতে। ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় বেনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দায়ের হয় মামলা। ২০২৩ সালের ১২ মে সংশ্লিষ্ট মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। নিয়োগে দুর্নীতির কারণ দেখিয়ে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেয় একক বেঞ্চ। ঘটনাক্রমে ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। মামলা করেন চাকরিহারাদের একাংশও।
এর পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। পাশাপাশি নিয়োগের সময়সীমা ৩ থেকে বাড়িয়ে ৬ মাস করে তারা। কিন্তু এর পরে সুপ্রিম কোর্টে যায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। নতুন করে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় শীর্ষ আদালত। বলা হয়, মামলাটি শুনবে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
মামলাটি বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে উঠেছিল। কিন্তু ওই মামলা থেকে সরে দাঁড়ান বিচারপতি। এর পর গত ১২ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানি হয় বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে।