রাজ্য যা খুশি করবে, মানতে হবে কি: কোর্ট

আবার কলকাতা হাইকোর্টের তিরস্কারের মুখে রাজ্য সরকার।শিশু ও নাবালিকাদের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ সংক্রান্ত একটি মামলায় হলফনামা পেশ নিয়ে শুক্রবার রাজ্য সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে হাইকোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ০৩:৩৮
Share:

আবার কলকাতা হাইকোর্টের তিরস্কারের মুখে রাজ্য সরকার।

Advertisement

শিশু ও নাবালিকাদের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ সংক্রান্ত একটি মামলায় হলফনামা পেশ নিয়ে শুক্রবার রাজ্য সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে হাইকোর্ট। সরকার কী কারণে আদালতের নির্দেশ মানবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে। সেই সঙ্গে তাঁর ক্ষুব্ধ মন্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার যা খুশি তা-ই করে যাবে, আর আদালতকে কি তার সব মেনে নিতে হবে!?’’ আইনজীবী শিবিরের পর্যবেক্ষণ, হাইকোর্ট যে-সব সরকারি আধিকারিককে হলফনামা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিল, তাঁদের বদলে অন্যদের দিয়ে হেলাফেলা করে হলফনামা পেশের কাজটি সেরে ফেলায় বিচারপতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

ওই মামলায় জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলার পুলিশ সুপারদের হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ। একই সঙ্গে হলফনামা দিতে বলা হয়েছিল সরকারের বিভিন্ন দফতরের শীর্ষ কর্তাদেরও। কিন্তু পুলিশ সুপারের বদলে ডেপুটি পুলিশ সুপার বা শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার অফিসারেরা হলফনামা পেশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি মাত্রে। এই মামলায় অভিযোগ উঠেছে পুলিশের দায়িত্ব নিয়েও। গত ২৭ জানুয়ারির শুনানিতে বিচারপতি মাত্রে সরকারি কৌঁসুলির উদ্দেশে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘পুলিশের কথা বলবেন না। পুলিশ কী করে, তা জানা আছে।’’ ওই দিনই মামলার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দেন বিচারপতি মাত্রে।

Advertisement

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার শিশু ও নাবালিকাদের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে এবং তার প্রতিকার চেয়ে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করেছে দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরাম। সংগঠনের সম্পাদক অমিত সরকার জানান, কোনও ক্ষেত্রে চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যু, কোথাও কোথাও যথাযথ চিকিৎসা না-হওয়া, কোথাও বা নাবালিকা পাচার আটকাতে না-পারা অথবা নাবালিকাদের বিয়ে রুখতে না-পারার মতো অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের হয়েছে।

সংগঠনের আইনজীবী মধুসূদন সাহারায় জানান, রাজ্যের শিশু কল্যাণ কমিশনার, জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি, সমাজকল্যাণ বিভাগ, জেলা প্রশাসন-সহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গাতেই এই বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে। ওই আইনজীবী এ দিন আদালতে অভিযোগ জানান, প্রশাসনের যে-সব কর্তাকে হলফনামা পেশ করতে বলা হয়েছিল, তাঁরা হলফনামা দেননি। তার বদলে অন্যদের দিয়ে আদালতে যে-সব হলফনামা পেশ করা হয়েছে, তা-ও অত্যন্ত দায়সারা। সরকারি কৌঁসুলি অসীম গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য জানান, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি হিসেবেই ডেপুটি পুলিশ সুপার হলফনামা পেশ করেছেন। আর এ ক্ষেত্রে শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের যুগ্মসচিবেরই হলফনামা পেশ করার কথা।

এই বক্তব্য শুনেই বিচারপতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে পুনরায় যথাযথ ভাবে হলফনামা পেশ করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন