গণতন্ত্র কই, প্লেনামে তোপ দিনভর

কেউ দাবি তুলছেন, সাধারণ সম্পাদককে এখনই সাংসদ-পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে! কেউ বলছেন, প্রবীণদের জন্য অবসর বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেউ প্রশ্ন তুলছেন, এত কম টাকা ভাতা নিয়ে সর্ব ক্ষণের কর্মীরা কাজ করবেন কেন? কেউ তোপ দাগছেন, নেতারা অসহিষ্ণু এবং অ-সংবেদনশীল!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৫
Share:

কেউ দাবি তুলছেন, সাধারণ সম্পাদককে এখনই সাংসদ-পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে! কেউ বলছেন, প্রবীণদের জন্য অবসর বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেউ প্রশ্ন তুলছেন, এত কম টাকা ভাতা নিয়ে সর্ব ক্ষণের কর্মীরা কাজ করবেন কেন? কেউ তোপ দাগছেন, নেতারা অসহিষ্ণু এবং অ-সংবেদনশীল! কারও অভিযোগ, উপরের তলার নেতাদের ব়়ড্ড বেশি খবরদারিতে গণসংগঠন বা অন্য যে কোনও স্তরে স্বাধীন সত্তা বিকশিত হচ্ছে না!

Advertisement

এ সবই হচ্ছে দলের শীর্ষ নেতাদের নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে! যাঁর যা অভিযোগ, যাঁর যা ‘মন কি বাত’, মঞ্চে উঠে মাইকের সামনে বলে আসছেন। শুধু নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম করে গেলে সভাপতিমণ্ডলী ঘণ্টা বাজিয়ে বক্তৃতা বন্ধ করে দেবে। যেমন বিধানসভা বা সংসদে হয়। খোলাখুলি তাই অভিযোগের ডালা মেলে ধরেছেন সিপিএমের প্লেনামের প্রতিনিধিরা। তবে তাঁদের সকলেরই প্রায় এক সুর— দলে গণতন্ত্র নেই! গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতারই রমরমা!

সমালোচনা শুনতে শুনতেই বিস্মিতও হচ্ছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এত গাল খেয়েও কি না দলের ভিতরে-বাইরে শুনতে হবে, সিপিএমে গণতন্ত্র নেই! স্মিত হাস্যে ইয়েচুরি বলছেন, ‘‘এটাই আমাদের দলের বৈশিষ্ট্য। সকলেই খোলা মনে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত হয়, সিদ্ধান্তের আবার পর্যালোচনা হয়। আর কোন দলে এ জিনিস আছে?’’

Advertisement

তৃণমূলের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে কেউ তাঁর ইস্তফার দাবি তুলছেন— এমন দৃশ্য কল্পনাও করা সম্ভব কি না, জানতে চাইছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য! শুধু তৃণমূলই কেন, জয়ললিতার এডিএমকে, মুলায়মের সমাজবাদী পার্টি বা মায়াবতীর বিএসপি-র মতো বহু দলেই একই পরিবেশ বলে সিপিএম নেতাদের দাবি। তবু দলীয় সহকর্মীদের সমালোচনাকে তাঁরা স্বাগত জানাচ্ছেন বলেই মুখে অন্তত দাবি করছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

প্লেনামের তৃতীয় দিনের অবসরে দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমও যেমন এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা একটা ব্যবস্থা। ধারাবাহিক সমালোচনার মধ্যে দিয়েই আমরা সেই ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করি।’’

প্লেনাম-বিতর্কে মঙ্গলবারও দিনভর নানা রাজ্যের প্রতিনিধিরা দলের নেতৃত্বকেই কাঠগড়ায় তুলে তোপ দেগেছেন। বাংলায় এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস বলেছেন, যে কোনও পরিস্থিতিতে উচ্চ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে কাজ করাই দুষ্কর! মহারাষ্ট্রের মরিয়ম ধওলে প্রশ্ন তুলেছেন, নেতাদের কথাই সব সময় চাপিয়ে দেওয়া হবে কেন? তেলঙ্গানার সুদর্শন দাবি করেছেন, সাংসদ-পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত ইয়েচুরির। কারণ, সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি বেশি ঝোঁকই নাকি পার্টির সর্বনাশ করছে!

আবার বিহারের অজয় কুমার পাল্টা বিঁধেছেন প্রকাশ কারাটদের। তাঁর বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশ বা বিহারের মতো হিন্দি বলয়ে দল যে কিছু করতে পারল না, তার জন্য শুধু ব্যর্থতা কবুল করলেই হবে না। কারা, কী ভাবে তার জন্য দায়ী, সে সব নিয়েও খোলামেলা আলোচনা চাই। যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা সকালের বিমানে গিয়ে রাতেই ফিরে এলে কি আর সংগঠন বাড়ে?

মঞ্চে বসে হাসতে হাসতেই শুনছেন কারাট-ইয়েচুরিরা!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement