অর্থলগ্নি তদন্ত

বাংলায় সক্রিয় সিপিএম, ত্রিপুরায় প্রশ্ন তৃণমূলের

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তে সিবিআই ফের সক্রিয় হতেই সম্মুখ সমরে জড়িয়ে পড়েছে বিজেপি এবং তৃণমূল। কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলের এই তরজার মাঝে রাজনৈতিক পরিসরে ফের জমি ফিরে পেতে সিপিএম যখন তৎপর, সেই সময়েই রোজভ্যালি-কাণ্ডকে হাতিয়ার করে তাদের পাল্টা চাপে ফেলতে সরব হল তৃণমূল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩১
Share:

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তে সিবিআই ফের সক্রিয় হতেই সম্মুখ সমরে জড়িয়ে পড়েছে বিজেপি এবং তৃণমূল। কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলের এই তরজার মাঝে রাজনৈতিক পরিসরে ফের জমি ফিরে পেতে সিপিএম যখন তৎপর, সেই সময়েই রোজভ্যালি-কাণ্ডকে হাতিয়ার করে তাদের পাল্টা চাপে ফেলতে সরব হল তৃণমূল। বাংলায় সিপিএম যখন পথে নেমে অর্থলগ্নি কেলেঙ্কারিতে রাঘব বোয়ালদের গ্রেফতার দাবি করছে, তখন ত্রিপুরায় তৃণমূলের প্রশ্ন— সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার-সহ একাধিক নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সিবিআই কেন নীরব?

Advertisement

গত দু’বছর ধরে ত্রিপুরায় ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা রোজভ্যালি-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানানো হয়েছে, এ কথা বলে তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণ বুধবার বলেন, এখনও পর্যন্ত কোনও সংস্থারই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। তাঁর অভিযোগ, রোজভ্যালির ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিকবাবু -সহ তাঁর মন্ত্রিসভার বিভিন্ন সদস্য প্রকাশ্যে প্রচারের কাজ করেছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তাঁদেরকে কেন সিবিআই বা ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করছে না?’’

তৃণমূলের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মানিকবাবু, মন্ত্রিসভার সদস্য বিজিতা নাথ, তপন চক্রবর্তী, প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্তমান সাংসদ জিতেন্দ্র চৌধুরী, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার পবিত্র কর-সহ সিপিএমের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতা ২০০৮ থেকে রোজভ্যালি-সহ বিভিন্ন বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার গুণগান গেয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রকাশ্য সভায় সওয়াল করেছেন। বস্তুত, এই অভিযোগ আদপেই নতুন নয়। কংগ্রেসে থাকার সময়েও সুদীপবাবু একই অভিযোগ বারবার করে এসেছেন। আর মুখ্যমন্ত্রী মানিকবাবু তার জবাবে আনন্দবাজারকে বলেছিলেন, আমন্ত্রিত হয়ে শিশুদের জন্য একটি পার্কের উদ্বোধনে তিনি গিয়েছিলেন। কোনও সংস্থা বাচ্চাদের জন্য কাজ করলে তিনি সচরাচর সেখানে গিয়ে থাকেন। কিন্তু রোজভ্যালির মতো সংস্থার অর্থলগ্নির ব্যবসার জন্য তিনি কোনও সওয়াল করেননি। সুদীপবাবুরা তৃণমূলে গিয়ে ফের সেই অভিযোগ তোলায় এ রাজ্যের বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী এ দিন পাল্টা বলেছেন, ‘‘ওঁরা বরং মানিক সরকারের নামে এফআইআর দায়ের করুন!’’

Advertisement

নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়াপেটার জেরেই সারদা-সহ নানা তদন্তের কাজ প্রায় আড়াই বছর থমকে ছিল, এই অভিযোগে এ রাজ্য সরব বামেরা। আর ত্রিপুরায় তৃণমূলের পাল্টা তোপ, বিজেপি এবং সিপিএমের মধ্যেই বিশেষ সখ্য গড়ে উঠেছে! সুদীপবাবুর দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিকবাবুর মধ্যে গত দু’বছরে প্রায় ৭ বার একান্ত আলোচনা হয়েছে। অথচ রাজ্যের বিধায়কেরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় চাইলে মিলছে না!’’

সিবিআইয়ের সক্রিয়তা ঘিরে বাংলায় বিজেপি-তৃণমূল ধুন্ধুমারের মাঝেই এ দিন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাম বিধায়কেরা। রাজ্যপালের কাছে তাঁদের অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই যখন তদন্ত করছে, সেই সময়ে রাজ্য জুড়ে গুন্ডামি করে তৃণমূল তদন্তকে প্রভাবিত করতে চাইছে। সুজনবাবুর কথায়, ‘‘আমড়া গাছে ল্যাংড়া ফলে না! তারা বন্‌ধ-অবরোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না বলে দাবি করেও তৃণমূল প্রতারকদের পক্ষ নিয়ে গুন্ডামি চালাচ্ছে। যতই রাজনৈতিক পার্থক্য থাক, বিরোধী দলের দফতরে হামলা কোনও ভাবেই সমর্থন করা যায় না।’’ পরে প্রতারকদের শাস্তি ও প্রতারিতদের টাকা ফেরতের দাবিতে ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত বামেদের মিছিলে ভিড় হয়েছিল ভালই। স্বয়ং মমতা বলেছিলেন, সুজন-সহ সিপিএমের কিছু নেতাকেও গ্রেফতার করা উচিত। যার জবাবে সুজনবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে আমরা বরাবর প্রস্তুত। আর সারদার ঘটনা সামনে আসার পরে রাজ্য পুলিশের সিট গড়ে তৃণমূলের সরকারই তো বিরোধী নেতাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল। সিবিআই তো পরের কথা, সিট কেন তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে আমাদের ধরতে পারেনি? জবাবটা মুখ্যমন্ত্রী দিন!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement