INDIA Alliance

‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটিতে থাকলেন না ইয়েচুরি, কারণ কি ‘বাংলার চাপ’? মুচকি হাসছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট

মুম্বইয়ে শুক্রবার ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে পৃথক চারটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তিনটি কমিটিতে রয়েছেন সিপিএমের প্রতিনিধিরা। তাঁরা কেউই কোনও রাজ্যে দলের সাংগঠনিক কাজের সঙ্গে যুক্ত নন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৩
Share:

‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে থাকলেও সমন্বয় কমিটিতে রইলেন না সীতারাম ইয়েচুরি। — ফাইল চিত্র।

পটনা এবং বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী জোটের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে একাসনে সীতারাম ইয়েচুরির উপস্থিতি বঙ্গ সিপিএমের নিচুতলায় তীব্র ক্ষোভ তৈরি করেছিল। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সেই বার্তা দিয়েও এসেছিলেন বাংলার নেতারা। তার পর মুম্বইয়ে শুক্রবার ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে গঠিত সমন্বয় কমিটিতে ইয়েচুরির অনুপস্থিতি নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, বাংলার পার্টির ‘চাপ’ই কি ইয়েচুরির ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটিতে না থাকার কারণ?

Advertisement

বাংলার সিপিএম নেতারা অবশ্য প্রকাশ্যে এ নিয়ে কিছু বলছেন না। তাঁদের বক্তব্য, দলে আলোচনা করেই সমন্বয় কমিটির জন্য নাম দেওয়া হবে। তবে আড়ালে মুচকি হাসছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় অনেকে স্বীকারও করে নিচ্ছেন যে, ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ কৌশলে সমন্বয় কমিটিতে নিজে থাকেননি ইয়েচুরি। শুক্রবার ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে পৃথক চারটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে তিনটি কমিটিতেই রয়েছেন সিপিএমের প্রতিনিধি। এর মধ্যে সংবাদমাধ্যম ও সমাজমাধ্যম সম্পর্কিত দু’টি কমিটিতে রাখা হয়েছে প্রাঞ্জলকে। তিনি সিপিএমের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তরফে সমাজমাধ্যম দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। প্রচার বিষয়ক কমিটিতে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অরুণ কুমার। তিনি সিটুর সর্বভারতীয় সভাপতি কে হেমলতার ছেলে।

ঘটনা হল, এই দু’জনের কেউই কোনও রাজ্যে দলের সাংগঠনিক কাজের সঙ্গে যুক্ত নন। রাজনৈতিক মহলে তাঁদের বিশেষ পরিচিতিও নেই। অনেকের মতে, বাংলায় ‘অস্বস্তি’ এড়াতেই এই পথে হেঁটেছেন ইয়েচুরি। ১৪ জনের যে মূল সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়েছে, সেখানে আপাতত সিপিএমের কেউ নেই। তবে ওই জায়গাটি ফাঁকাই রাখা হয়েছে সিপিএমের জন্য। ইয়েচুরি বলেছেন, পরে তাঁদের দলের প্রতিনিধির নাম দেবেন। তাই ১৪ নম্বর জায়গাটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। সিপিএমের অন্দরে আলোচনা করে ওই নাম দেওয়া হবে বলে খবর। প্রসঙ্গত, এই কমিটিতেই রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

বঙ্গ সিপিএমের কেউ কেউ আবার পাল্টা যুক্তি দিতে গিয়ে বলছেন, যে হেতু ওই সমন্বয় সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রথম সারির নেতা-নেত্রীদের কেউ নেই, তাই ওই কমিটিতে ইয়েচুরি থাকতে চাননি। কারণ, তিনি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক তথা বর্ষীয়ান রাজনীতিক। যদিও এর পাল্টা যুক্তিও আছে। যে যুক্তি বলছে, ওই কমিটিতে শরদ পওয়ার, হেমন্ত সোরেনের মতো দলীয় প্রধানেরা রয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, যে দলের গর্ভ থেকে ইয়েচুরির দলের জন্ম, সেই সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজাও রয়েছেন সমন্বয় কমিটিতে।

অনেকে মনে করছেন, সমন্বয় কমিটিতে অভিষেকের নাম থাকায় ইয়েচুরি আরও ‘চাপে’ পড়ে যান। যে কারণে কৌশলে পরে নাম জানানোর কথা বলেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। পরে কার নাম জানাতে পারে সিপিএম? দলের একাংশের অনুমান, সিপিএম এমন কোনও নেতার নাম ওই কমিটিতে যুক্ত করতে পারে, যাঁকে বাংলায় খুব একটা লোকে চেনে না। রাজনৈতিক ‘বাধ্যবাধকতা’র কারণেই কেরলের কোনও নেতাও ওই কমিটিতে যুক্ত হতে চাইবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ সেখানে শাসক সিপিএমের মূল লড়াই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। সে ক্ষেত্রে অন্ধ্রপ্রদেশ বা তামিলনাড়ুর কোনও নেতাকে ও সমন্বয় কমিটিতে পাঠাতে পারে সিপিএম।

প্রসঙ্গত, জুন মাসে পটনায় বিরোধী দলগুলির প্রথম বৈঠক হয়েছিল। দ্বিতীয় বৈঠক হয় বেঙ্গালুরুতে, জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে। তার পর তৃতীয় বৈঠক হল মুম্বইয়ে। এর পরে বৈঠকটি রাজধানী দিল্লিতে করা হতে পারে বলে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এরই পাশাপাশি আরও চারটি শহরে বৈঠক হওয়ার কথা। তবে কলকাতায় বৈঠক হবে না। সূত্রের খবর, মমতা কলকাতায় ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকের প্রস্তাব দিলেও ইয়েচুরি তাতে রাজি হননি। তিনি শুক্রবারের বৈঠকে জানান, কলকাতায় ওই বৈঠক হলে তাঁর পক্ষে সেখানে যোগ দেওয়া সম্ভব হবে না।

কেন ইয়েচুরি কলকাতায় বৈঠক হলে সেখানে থাকতে অপারগ, তা-ও সহজবোধ্য। কলকাতায় এসে ইয়েচুরির পক্ষে মমতা বা অভিষেকের সঙ্গে একই ফ্রেমের অংশ হওয়া কঠিন তো বটেই। প্রায় অসম্ভব। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সঙ্গে একই জোটে থাকা নিয়ে ইয়েচুরি-সহ সিপিএমের শীর্ষনেতৃত্বকে বাংলায় দলের নিচুতলার কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। সেই ক্ষোভ প্রশমিত করতে রাজ্য সিপিএমকে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিতে হচ্ছে। দলের নেতারা বার বার নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের কোনও জোট, আপস বা সমঝোতা হবে না। কিন্তু মমতা-ইয়েচুরির কাছাকাছি দাঁড়ানোর ফ্রেম তাতে বাগড়া দিচ্ছে। অন্তত তেমনই অভিমত দলের একাংশের। সেই সঙ্গে বিজেপির টিপ্পনিও জারি রয়েছে। ঘটনাচক্রে, পটনা থেকে মুম্বই বৈঠক পর্যন্ত সময়কালে কোনও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে বাংলায় আসেননি ইয়েচুরিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন