মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন নোট বাতিলের গেরোয় চেকপোস্টে পচনশীল কৃষিপণ্য যেন আটকে না থাকে। কিন্তু বাস্তবে ভিন্ রাজ্যের সীমানাবর্তী ১০ চেকপোস্ট দিয়ে সোমবার থেকে কোনও রকম নজরদারি ছাড়াই শুরু হয়েছে সব পণ্যের যাতায়াত। প্রাথমিক ঘোষণা অনুযায়ী এই ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে ১৭ তারিখ পর্যন্ত। এবং তার জেরে বহু কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হবে বলে রাজ্যের অর্থ দফতর সূত্রের খবর। অর্থ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘শুধু রাজস্ব ক্ষতিই নয়, এখন যা পরিস্থিতি তাতে ভিন রাজ্য থেকে কী ঢুকছে তার উপর নজর থাকা জরুরি ছিল। বিশেষ করে যেখানে রাজ্যের সীমানা রয়েছে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তর-পূর্বের সঙ্গে।’’
এ রাজ্যে অর্থ দফতরের ১০টি বড় চেকপোস্ট রয়েছে। মেদিনীপুরে চিঁচিড়া, সোনাকানিয়া, আসানসোলের ডুবুরডিহি, পুরুলিয়ার বেড়মা ও চাষমোড়ে রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের চেকপোস্টগুলি। অন্য দিকে উত্তরবঙ্গে চেকপোস্ট রয়েছে ডালখোলা, মেলি, বারবিশা, বক্সিরহাট এবং ফাঁসিদেওয়াতে। পড়শি রাজ্য থেকে পণ্য আসার সময় এই চেকপোস্টগুলিতে ওয়েবিল পরীক্ষা হয়। দেখা হয় পণ্যের ঘোষিত পরিমাণ ঠিক আছে কি না। পণ্যের যে দাম বলা হয়েছে বাস্তবে সেটা ঠিক কি না এবং যে পণ্য আনা হচ্ছে বলে উল্লেখ রয়েছে সেটিই আনা হচ্ছে কি না। বাণিজ্য কর বিভাগের কর্তারা এ সব পরীক্ষা করেন। তিনটি ক্ষেত্রের কোনওটিতে অন্যথা হলেই জরিমানা ধার্য হয়।
৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের জেরে গত ক’দিন জরিমানা মেটানো নিয়ে সমস্যায় পড়েন লরিচালকেরা। ফলে রাজ্যের সীমানায় হাজারো লরি আটকে যায়। ওড়িশা সীমানাতেই প্রায় আড়াই হাজার ট্রাক আটকে রয়েছে বলে সরকারি সূত্রে খবর। আটকে থাকা লরিগুলির মধ্যে পেঁয়াজ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আনারস, কমলালেবুর মতো কৃষিপণ্যবাহী গাড়িও রয়েছে। ফলে সেগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এই অবস্থায় কৃষিপণ্যবাহী লরিগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হোক, চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সব গাড়িকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে সোমবার থেকে।
এতে অসন্তুষ্ট অর্থ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, এখন অনলাইন ওয়েবিল চালু হয়েছে। ফলে বারকোড মেশিনের সাহায্যে চেকপোস্টগুলিতে গাড়ির পরীক্ষা করতে বেশি সময়ও লাগে না। এমনকী জরিমানার টাকাও অনলাইনে দেওয়া যায়। ফলে ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিলের ফলে পণ্য পরিবহণে বিশেষ কোনও প্রভাব পড়ার কথা নয়। তা ছাড়া, কৃষিপণ্যের উপর কোনও কর বসানো হয় না। তাই কৃষিসামগ্রীর গাড়িগুলি ছেড়ে দিলে সমস্যা হতো না। সব গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না।
স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা অবশ্য অর্থ-কর্তাদের যুক্তি পুরোপুরি মানতে নারাজ। তাঁদের যুক্তি, এ রাজ্যে অনলাইন ব্যবস্থা চালু হলেও প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে এখনও নগদেই কর ও জরিমানার টাকা চেকপোস্টে জমা নেওয়া হয়। ফলে নগদের সমস্যায় পড়ে গত কয়েকদিনে রাজ্যের সীমানায় হাজার হাজার লরি আটকে গিয়েছিল। আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির। দিনে কয়েক কোটি রাজস্বের চেয়ে সীমানায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এখন অনেক জরুরি। সেই কারণেই পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে।
অর্থ দফতরের কর্তাদের আশঙ্কা, অবাধ গাড়ি চলাচলের খবর পেয়ে ওয়েবিল ছাড়াই আগামী তিন-চার দিন পণ্য আনা মারাত্মক বেড়ে যাবে। তা ছাড়া, আগামী কয়েকদিন রাজ্যে কী ঢুকল আর কী বেরিয়ে গেল তার উপরেও কোনও নজরদারি থাকবে না। দফতরের এক কর্তা জানান, এ দিনই এমন বহু সংস্থার গাড়ি অবাধে সীমানা পেরিয়ে গিয়েছে যাদের সঙ্গে রাজ্যের বকেয়া কর নিয়ে মামলা চলছে। সেই সব সংস্থার প্রতিটি গাড়ি খুঁটিয়ে দেখার নির্দেশ ছিল। ওই কর্তার কথায়, ‘‘এই তিন দিনে রাজ্যে কী আসবে, আর কী চলে যাবে বিহার-ঝাড়খণ্ড বা উত্তর-পূর্বে, তা ঈশ্বরই জানেন!’’