West Bengal Recruitment Case

পার্থদের মামলা ‘আইনের প্রেসক্রিপশন নয়’! রাজ্যের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন, কেন জামিন খারিজ হাই কোর্টে

পার্থ চট্টোপাধ্যায়দের জামিন মামলা ঝুলে ছিল হাই কোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে। মঙ্গলবার সেখানে ধাক্কা খান তাঁরা। তাঁদের জামিন মঞ্জুর করায় বাধা কোথায়, তা-ও জানান বিচারপতি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:৩০
Share:

রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের মামলায় মঙ্গলবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়-সহ পাঁচ জনের জামিন খারিজ হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে। কেন তাঁদের জামিন মঞ্জুর করা হল না, তা নিয়ে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চের কিছু পর্যবেক্ষণ রয়েছে। বিচারপতি জানান, অন্যান্য মামলার সঙ্গে এই মামলা এক করলে চলবে না। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘পার্থদের মামলা আইনের প্রেসক্রিপশন হিসাবে দেখলে চলবে না।’’ এই মামলায় রাজ্যের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি চক্রবর্তী।

Advertisement

পার্থ, কল্যাণময় ছাড়াও শান্তিপ্রসাদ সিন্‌হা, সুবীরেশ ভট্টাচার্য এবং অশোককুমার সাহার জামিন মামলা ঝুলে ছিল হাই কোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে। তাঁদের জামিন নিয়ে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এক মতে পৌঁছতে না পারায় মামলা যায় বিচারপতি চক্রবর্তীর বেঞ্চে। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জামিনের পক্ষে রায় দিলেও ভিন্ন সুর শোনা গিয়েছিল বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের গলায়। গত ২০ নভেম্বরে রায়দানের সময় তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘এই সংক্রান্ত মামলার তথ্য দেখে মনে হচ্ছে, রাজ্য সরকারের একাংশ অভিযুক্তদের পরোক্ষ ভাবে বাঁচাতে চাইছে। এই অবস্থায় তাঁরা জামিন পেলে তা খুবই দুর্ভাগ্যের হবে।’’

কেন বিচারপতি সিংহ রায় এই কথা বলেছিলেন? এই মামলায় সিবিআই আদালতে জানিয়েছিল, পার্থদের মামলার ট্রায়াল শুরু করা যাচ্ছে না। পার্থ প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে ট্রায়াল শুরু করার জন্য রাজ্যপালের অনুমতি প্রয়োজন হয়। তা মিলেছে ইতিমধ্যেই। একই ভাবে বাকি অভিযুক্তেরা রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজন হয় মুখ্যসচিবের অনুমতি। সেই অনুমতি এখনও মেলেনি, আদালতে জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। এর ভিত্তিতেই বিচারপতি জানিয়েছিলেন, সরকারের একটি অংশ অভিযুক্তদের আড়াল করতে চাইছে বলে তাঁর মনে হচ্ছে। মঙ্গলবারের শুনানিতে বিচারপতি চক্রবর্তী জানান, গত বছর ২৯ নভেম্বর কল্যাণ একটি মামলায় জামিন পেয়েছিলেন। তার পর ট্রায়ালের জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে অনুমতি চেয়েছিল সিবিআই। চার মাস কেটে গেলেও মুখ্যসচিব এ ব্যাপারে অবস্থান জানাননি। কোর্ট বার বার নির্দেশ দিলেও কাজ হয়নি। ফলে এমন পরিস্থিতিতে পার্থদের জামিন মামলার রায়ে বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের পর্যবেক্ষণ সঠিক।

Advertisement

বিচারপতি চক্রবর্তীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘পার্থের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু বাকিদের ক্ষেত্রে রাজ্যের তরফে সেই অনুমোদন পাওয়া যায়নি।’’ তার পরই তিনি বলেন, ‘‘মামলাকারীদের বিরুদ্ধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ রয়েছে। এই মামলায় আর্থিক অপরাধ এবং দুর্নীতির নানা দিক রয়েছে। ওই অপরাধ আইনের প্রেসক্রিপশন হিসাবে দেখলে চলবে না। ফলে এ ক্ষেত্রে আদালত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না।’’

রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি মঙ্গলবার তাদের দায়িত্ব কী কী তা-ও স্মরণ করিয়ে দেন বিচারপতি চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করা রাজ্যের দায়িত্ব। সত্য উদ্ঘাটনে তাদের সহযোগিতা করা উচিত। কিন্তু এই মামলায় রাজ্যের গা-ছাড়া মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।’’ নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি যে একে বারেই কাম্য নয়, তা-ও উঠে এসেছে বিচারপতির পর্যবেক্ষণে। তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষায় দুর্নীতি করে কোনও অযোগ্য প্রার্থীকে চাকরি দিলে তা শুধু যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয় তা নয়, যাঁরা পরীক্ষার জন্য কঠিন পরিশ্রম করেছেন তাঁদের প্রতি অসততা করা হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement