ভরা পৌষেও বাজারে পর্যাপ্ত টাটকা আনাজের দেখা নেই। যেটুকু আছে, তার দাম যথেষ্ট চড়া।
ঠিক গত বারের ছবি ভেসে উঠেছে এ বছরেও। ভরা পৌষেও বাজারে পর্যাপ্ত টাটকা আনাজের দেখা নেই। যেটুকু আছে, তার দাম যথেষ্ট চড়া। শহর বা গ্রাম, ছবিটা সর্বত্র এক।
এমনিতে বাঙালি জানে, শীত মানেই ৫০ টাকায় ব্যাগভর্তি আনাজ। ধপধপে টাটকা ফুলকপি, গাঢ় সবুজ পাতায় মোড়া নারকোলি বাঁধাকপি, হাল্কা ওজনের লম্বা লম্বা সবুজ বেগুন, বোঁটাসুদ্ধ মিষ্টি মটরশুঁটি, সরু সরু ঝাঁঝালো পেঁয়াজকলি, হাত রাঙিয়ে দেওয়ার মতো বিট, সঙ্গে গাজর। শীত মানে কচি পালংশাক, টম্যাটো, আরও কত কী! শীত এলে পাতে নব বসন্তের ছোঁয়া লাগবে— নস্টালজিক বাঙালি সেই স্বপ্নেই বুঁদ হয়ে থাকে। আছেও।
কিন্তু বাজারে গেলে সেই স্বপ্ন ধাক্কা খেয়ে যাচ্ছে। ঝুড়ি উপচানো সেই আনাজই বা কই, আর যেটুকু আছে তার দামই বা পড়ছে কই! কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যের গড় বাজারদর এখন: বড় মাপের ফুলকপি ২০-২৫ টাকা, বাঁধাকপি ২৫-৩০ টাকা, মটরশুঁটি ৫০-৬০ টাকা, লাল টম্যাটো ৫০ টাকা, পেঁয়াজকলি ও বিট-গাজর ৫০-৬০ টাকা কেজি। বেগুন ৩০-৪০ টাকা।
কেন এই অবস্থা?
এর জন্য মূলত আবহাওয়াকেই দায়ী করেছেন কৃষিবিজ্ঞানী এবং আনাজচাষিরা। এ বছর ডিসেম্বরে শীত তেমন পড়েনি। উল্টে নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্তের বৃষ্টির ধাক্কায় মার খেয়েছে চাষ-আবাদ। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিজ্ঞানী কৌশিক ব্রহ্মচারীর বক্তব্য, অসময়ের বৃষ্টি বাগড়া তো দিয়েছেই। সেই সঙ্গে শিশিরের অভাব, রাতের চড়া তাপমাত্রাও আনাজ চাষের অনুকূল ছিল না। গত বছর ঘন কুয়াশায় মার খেয়েছিল চাষ। ‘‘শীত আসার আগেই চাষিরা আনাজের যে ‘জলদি’ চাষ করেন, সেই ফলনটাই এ বার প্রতিকূল আবহাওয়ায় মার খেয়েছে। এখন জাঁকিয়ে শীত পড়ায় ফেব্রুয়ারিতে ভাল ফলন পাওয়া যেতে পারে,’’ আশা প্রকাশ করেন কৌশিকবাবু।
প্রায় একই বক্তব্য হরিণঘাটার কৃষক আলিবুদ্দিন মণ্ডলের। ছ’বিঘে জমিতে আনাজ চাষ করেন তিনি। বললেন, ‘‘আনাজ চাষে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। এ বছর প্রথম থেকেই বৃষ্টির জন্য সেই চাষ নষ্ট হয়েছে। ফলে এক বিঘে জমিতে ফলন পাওয়া গিয়েছে অর্ধেক!’’ একই সুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের চাষি আনোয়ার হোসেন জানাচ্ছেন, বৃষ্টির জলেই শেষ হয়েছে আনাজ। বৃষ্টি থামার পরে অল্প সময়ের মধ্যে ফলন আর বাড়ানো যায়নি।
কৃষি দফতর অনুমোদিত উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার সোয়াই শ্বেতপুর ফারমার্স ক্লাবের সদস্য সনাতন মণ্ডল যোগ করলেন, আবহাওয়ার জন্য চাষ মার খাওয়ার পরে বহু চাষি টাকা জোগাড় করতে না-পেরে আনাজ চাষ আর করেনইনি। ফলে জোগানে ঘাটতি থাকছে। ‘‘ক্ষতি খানিকটা সামাল দিতে যেটুকু আনাজ রয়েছে, তা চড়া দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে,’’ বললেন দেগঙ্গার চ্যাংদানা গ্রামের চাষি সুকুমার সর্দার।
আবহাওয়া অনুকূল থাকলে নদিয়ায় এই সময়ে পাইকারি বাজারে পাঁচ থেকে আট টাকা কেজিতে বাঁধাকপি বিক্রি হয়। এ বার তার দাম ১২-১৫ টাকা। কোলে মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী উত্তম মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘একটু বড় ফুলকপি তাঁদের বাজারেই ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে খুচরো বাজারে সেটা ২৫ টাকার কমে পাওয়া সম্ভব নয়।’’