নিম্নচাপের জেরে পিছিয়ে যেতে পারে শীত

ক্যালেন্ডারে ভরা অগ্রহায়ণ। কিন্তু শীতের নামগন্ধটুকুও নেই! রোদ ঝলমলে আবহাওয়ার বদলে আকাশে মেঘের ঘনঘটা! সৌজন্য বঙ্গোপসাগরের তামিলনাড়ু উপকূলে দানা বাঁধা নিম্নচাপ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ১৮:৩০
Share:

ক্যালেন্ডারে ভরা অগ্রহায়ণ। কিন্তু শীতের নামগন্ধটুকুও নেই! রোদ ঝলমলে আবহাওয়ার বদলে আকাশে মেঘের ঘনঘটা! সৌজন্য বঙ্গোপসাগরের তামিলনাড়ু উপকূলে দানা বাঁধা নিম্নচাপ। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, উত্তুরে হাওয়ার সামনে পাঁচিল তুলে দাঁড়ানো এই নিম্নচাপের জেরে কলকাতায় শীতের আগমন পিছিয়ে যেতে পারে। ধীরলয়ে হাজির হওয়ার পরে তার ছন্দপতনের আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।

Advertisement

শীতের মরসুমে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি হাওয়ার জেরে দক্ষিণ ভারতে বৃষ্টি হয়। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত কিংবা নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার ঘটনাও অমিল নয়। কিন্তু এ বার যে ভাবে ঘনঘন ঘূর্ণাবর্ত কিংবা নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে, তার পিছনে কারণ হিসেবে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু বদলকেই দায়ী করছেন আবহবিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের অনেকে। তাঁদের একাংশের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে সাগরের জলের তাপমাত্রা বেশি হওয়ার ফলেই ঘন ঘন ঘূর্ণাবর্ত কিংবা নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে। এবং তার প্রভাবেই বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন এলাকার আবহাওয়ার অস্থির হয়ে উঠছে।

কী রকম?

Advertisement

সোমবার ছিল নভেম্বরের শেষ দিন। এ দিন কলকাতার আলিপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি। ২০১৩ সালেও এমনটা হয়েছিল। সে বছর ৩০ নভেম্বর কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি। গত বছর অবশ্য এ দিন স্বাভাবিকের থেকে নীচেই ছিল রাতের তাপমাত্রা। আবহবিদদের একাংশ বলছেন, এ বছর যেমন সাগরের পরিস্থিতি অস্থির হয়ে রয়েছে, তেমনটাই হয়েছিল ২০১৩ সালে। সে বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে চারটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল।

পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, সাগরের জন্য যেমন আবহাওয়ায় বদল আসছে, তেমনই বদল আসছে শহরের দূষণের জেরেও। শহরের বিভিন্ন গাড়িঘোড়া ও কারখানার থেকে বেরনো ধোঁয়া থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে, তার জেরেও আবহাওয়ায় বদল আসতে পারে। এক পরিবেশবিদের ব্যাখ্যা, এই সব ধোঁয়ার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে কার্বন কণা থাকে। কার্বন কণা তাপ বেশি ধরে রাখে। তার ফলে হাওয়া বিষাক্ত করে তোলার পাশাপাশি তাপমাত্রাও বাড়িয়ে দেয় বাতাসে ভাসমান কার্বন কণা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে কলকাতার বায়ু দূষণ মাত্রাতিরিক্ত বলে জানানো হয়েছিল। সম্প্রতি জাতীয় পরিবেশ আদালতের একটি মামলাতেও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মহানগরের মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কথা জানিয়েছে।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলছেন, শুধু কার্বন ডাই-অক্সাইড নয়, তাপ ধরে রাখার ক্ষেত্রে জলীয় বাষ্প আরও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ব্যাখ্যা, জল বেশি পরিমাণে বাষ্পীভূত হচ্ছে কিন্তু সব সময় তা পুরোপুরি ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি হচ্ছে না। বাষ্প বেশি কিন্তু বৃষ্টি কম, এর ফলেই বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে। তার জেরে বাড়ছে উষ্ণায়নও। বস্তুত, দিন কয়েক আগেই বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ঘোষণা করেছে, ২০১৫ হতে চলেছে উষ্ণতম বছর।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে যে আবহাওয়ার মতিগতি বদলে যাচ্ছে, তা মেনে নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর তথা মৌসম ভবনের একাংশও। আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ বলছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে কোনও কোনও জায়গায় অনাবৃষ্টি হচ্ছে, কোথাও আবার অতিবৃষ্টি হচ্ছে। সাগরের আবহাওয়ার ভোলবদলে ঘনঘন নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছে। শরৎ-হেমন্ত-বসন্ত তো আগেই হারিয়ে গিয়েছিল। এ বার কোপ পড়েছে শীতের উপরেও।

এই পরিস্থিতিতে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের শীতপ্রত্যাশীদের প্রশ্ন, জাঁতিয়ে শীত না পড়ুক, এই মেঘলা আবহাওয়া কাটবে কবে?

‘‘শুক্রবারের পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলবে,’’ জবাব আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথের।

দেখুন গ্যালারি, মেঘের জটে অথৈ জলে শীতের আগমন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন