গরহাজির সাক্ষী, শুরুই হল না খাগড়াগ়ড় মামলা

প্রস্তুতির অভাব ছিল না। আদালত চত্বর জুড়ে আঁটোসাটো নিরাপত্তা। বিচারক এজলাসে বসে। বাদী ও বিবাদী পক্ষের উকিলরা উপস্থিত। ধৃতেরা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে। এসেছেন তাদের আত্মীয়েরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪০
Share:

—ফাইল চিত্র।

প্রস্তুতির অভাব ছিল না। আদালত চত্বর জুড়ে আঁটোসাটো নিরাপত্তা। বিচারক এজলাসে বসে। বাদী ও বিবাদী পক্ষের উকিলরা উপস্থিত। ধৃতেরা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে। এসেছেন তাদের আত্মীয়েরা। কিন্তু যাঁর সাক্ষ্যগ্রহণ দিয়ে বিচার শুরু হওয়ার কথা, সেই পুলিশ অফিসারই গরহাজির! যার ফলে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার বিচার শুক্রবার শুরু করা গেল না।

Advertisement

এই নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন কলকাতা নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক শুভ্রা ঘোষ। তাঁর মতে, সাক্ষী পুলিশ অফিসারের হাজির না হওয়াটা ‘ক্যাজুয়াল অ্যাপ্রোচ’ বা ঢিলেঢালা মনোভাবের পরিচয়।

তবে ওই পুলিশ অফিসারের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজ, শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় নতুন সময় ধার্য করেছেন বিচারক। সাক্ষী যাতে হাজির হন তা নিশ্চিত করতে সরকারি কৌঁসুলি শ্যামল ঘোষ ও বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি তমাল মুখোপাধ্যায়কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

ওই পুলিশ অফিসার আব্দুল গফ্ফর বর্তমানে জগাছা থানার আইসি। খাগড়াগড়ের ঘটনার সময়ে তিনি ছিলেন বর্ধমান থানার আইসি। তাঁর করা এফআইআর-এর ভিত্তিতে মামলা ও তদন্ত শুরু হয়েছিল।

কিন্তু তিনি এলেন না কেন?

সরকারি কৌঁসুলি শ্যামল ঘোষ জানান, ওই পুলিশ অফিসার তাঁর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে ব্যস্ত। তাই তিনি হাজির হতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।

তখনই বিচারক বলেন, ‘‘কীসের ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন?

আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। এত ক্যাজুয়াল অ্যাপ্রোচ কেন?’’ এর পর হাওড়া পুলিশের এক অফিসারের নিয়ে আসা আব্দুল গফ্ফরের লিখিত বক্তব্য বিচারককে দেওয়া হয়।

অভিযুক্তদের কয়েক জনের আইনজীবী ফজলে আহমেদ খান বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাগড়াগড় মামলা। সেখানে শুনানির প্রথম দিনেই সাক্ষী এলেন না! এটা তো হেনস্থা করার সামিল।’’

বিচারক অবশ্য তখন বলেন, ‘‘কোর্টরুমে বসে আমরা কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে পারি না। যেখানে তিনি লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।’’

পরে আব্দুল গফ্ফরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে আইনশৃঙ্খলার দিকটাও দেখতে হয়। তাই যেতে পারিনি। শনিবার হাজির থাকব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘একটা বিশেষ প্রোগ্রামে ল অ্যান্ড অর্ডার ডিউটি চলছে।’’ যদিও হাওড়া পুলিশ সূত্রের খবর, সিটি পুলিশের উদ্যোগে শিবপুর পুলিশ লাইন থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত এ দিন ছিল পথ নিরাপত্তা নিয়ে মিছিল। তাতেই আব্দুল গফ্ফর উপস্থিত ছিলেন।

আদালতে এ দিন দুই মহিলা অভিযুক্ত রাজিয়া বিবি ও আলিমা বিবি-সহ ধৃত ২০ জনকে হাজির করানো হয়। এরা জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সদস্য বলে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র অভিযোগ। বীরভূমের কীর্ণাহার থেকে আসা ধৃত আমজাদ আলি শেখের বাবা সুকুর শেখ বলেন, ‘‘রাত তিনটেয় বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। অথচ প্রথম দিনেই এনআইএ সাক্ষীকে হাজির করাতে পারল না। কষ্ট করে, টাকা খরচ করে আসা বৃথা গেল।’’

খাগড়াগড় মামলার জন্য বিচার ভবনে এ দিন কলকাতা পুলিশের একে-৪৭ধারী কম্যান্ডোদের মোতায়েন করা হয়েছিল। ব্যাঙ্কশাল কোর্ট লাগোয়া বিচার ভবনের প্রধান ফটকে পুলিশকর্মীরা প্রত্যেককে তল্লাশি করেন। সাংবাদিকের জামার পকেটে রাখা ওষুধের স্ট্রিপও বার করে দেখা হয়। এক জন অফিসার চেঁচিয়ে বলেন, ‘‘আজ যতক্ষণ না খাগড়াগড় মামলা শেষ হচ্ছে, এমনই সতর্ক থাকতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন