চলন্ত ট্রেনে জন্মাল মেয়ে, পাশে থাকলেন সহযাত্রী

অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু প্রসব-যন্ত্রণায় কাতর এক সহযাত্রীকে আগলে রেখেছিলেন তিনি। চলন্ত তিরুঅনন্তপুরম-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের কামরায় পৃথিবীতে অভ্যর্থনা করেছেন নবজাতককে।

Advertisement

প্রশান্ত পাল ও শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

পুরুলিয়া ও আদ্রা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০০
Share:

হাসপাতালে মা ও সদ্যোজাত (ডান দিকে শ্রাবণী)। ছবি: সঙ্গীত নাগ

অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু প্রসব-যন্ত্রণায় কাতর এক সহযাত্রীকে আগলে রেখেছিলেন তিনি। চলন্ত তিরুঅনন্তপুরম-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের কামরায় পৃথিবীতে অভ্যর্থনা করেছেন নবজাতককে। সে এখন সুস্থ। মা-ও সুস্থ। সবাই তারিফ করছেন পুরুলিয়া শহরের শ্রাবণী পাণ্ডের। শ্রাবণী বলছেন, ‘‘ভাবিনি এমন পরিস্থিতিতে পড়ব। কী ভাবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলাম জানি না!’’

Advertisement

শনিবার সকাল। সদ্য পুরুলিয়া স্টেশন ছে়ড়েছে ডিব্রুগড়গামী ট্রেন। চেন্নাই থেকে অসংরক্ষিত কামরায় উঠেছিলেন সঞ্জনা তাতি। প্রথম সন্তানকে গর্ভে নিয়ে ফিরছিলেন ডিব্রুগড়ের টাঙ্গাখাট এলাকার বাড়িতে। আচমকা প্রসব যন্ত্রণা। সঞ্জনার স্বামী অমিন তাতি বলেন, ‘‘বুঝতে পারছিলাম না, কী করব! সে সময়ে এগিয়ে এলেন এক মহিলা।’’

তিনিই শ্রাবণী। পুরুলিয়া শহরে বিউটি পার্লার চালান। যাচ্ছিলেন মালদহে শ্বশুরবাড়িতে। পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত পুরুষদের সরিয়ে দেন কামরার এক দিকে। কামরায় হাজির চার মহিলা যাত্রীকে নিয়ে নেমে পড়েন কাজে। দু’জন মহিলা কাপড় দিয়ে জায়গাটা আড়াল করেন। শ্রাবণী বলেন, ‘‘শুধু ভরসা দিচ্ছিলাম। বুঝতে পারি, বাচ্চাটা বেরোচ্ছে। পুরোপুরি বেরিয়ে আসে কিছু ক্ষণ পরে।’’ নাড়ি কাটতে না পারায় মায়ের পাশে বাচ্চাকে আগলে রাখেন তিনি।

Advertisement

ট্রেন জয়চণ্ডী স্টেশনে পৌঁছয়। খবর পেয়ে আদ্রার রেলের বিভাগীয় হাসপাতাল থেকে চলে আসেন ডাক্তার-নার্সেরা। নাড়ি কেটে, প্রাথমিক চিকিৎসার পরে মা ও সদ্যোজাত কন্যাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রঘুনাথপুর হাসপাতালে। ট্রেন বাকি যাত্রীদের নিয়ে গন্তব্যে রওনা দেয়। ওই কামরাতেই ছিলেন পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক স্বপনকুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘বুঝতে পারছিলাম না কী করা দরকার। শ্রাবণী যে ভাবে পুরোটা সামলেছেন, তা থেকে অনেক কিছু শেখার। বিশেষত মানবিকতা।’’

হাসপাতালে সঞ্জনা ও তাঁর সন্তানের চিকিৎসা করছেন স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ সুজয় ভট্টাচার্য। তিনি জানান, ট্রেনের ঝাঁকুনিতে আসন্নপ্রসবাদের যন্ত্রণা বেড়ে যেতে পারে। তবে হাসপাতালের বাইরে যে কোনও জায়গায় প্রসব করানো ঝুঁকির। চিন্তা আরও বাড়ে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ প্রসব করালে। তবে সুজয়বাবুও বলছেন, ‘‘সহযাত্রীরা যা করেছেন, সেটা অনেক। মা ও সন্তান পুরোপুরি সুস্থ। সব ভাল যার শেষ ভাল।’’ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সঞ্জনা বলেন, ‘‘শ্রাবণীকে ধন্যবাদও জানাতে পারিনি। তবে মুখটা চিরদিন মনে থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন