মত্ত যাত্রীর দখলে ট্যাক্সি, চাকায় পিষ্ট মহিলা

নির্দিষ্ট গলিতে না ঢুকে বারবার ভুল পথে এ দিক-ও দিক যেতে বলায় আপত্তি জানিয়েছিলেন ট্যাক্সিচালক। অভিযোগ, তাতেই খেপে গিয়ে তাঁর উপরে চড়াও হয় মত্ত দুই আরোহী। শুধু তা-ই নয়, চালককে মারধর করে তাঁকে সরিয়ে স্টিয়ারিংয়ের দখল নেয় তাদেরই এক জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৮
Share:

দুর্ঘটনার পরে সেই ট্যাক্সি। — নিজস্ব চিত্র

নির্দিষ্ট গলিতে না ঢুকে বারবার ভুল পথে এ দিক-ও দিক যেতে বলায় আপত্তি জানিয়েছিলেন ট্যাক্সিচালক। অভিযোগ, তাতেই খেপে গিয়ে তাঁর উপরে চড়াও হয় মত্ত দুই আরোহী। শুধু তা-ই নয়, চালককে মারধর করে তাঁকে সরিয়ে স্টিয়ারিংয়ের দখল নেয় তাদেরই এক জন। আর তাতেই ঘটল বিপত্তি। সোমবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ কালীপুজোর বিসর্জন সেরে ফেরা একদল লোকের উপরে হুড়মুড়িয়ে উঠে গেল বেপরোয়া ট্যাক্সি। চাকায় পিষে গেলেন এক মহিলা। আহত হলেন আরও পাঁচ জন।

Advertisement

পুলিশ জানায়, মৃতার নাম শীলা দাস (৪৯)। বাড়ি আগরপাড়া নর্থ স্টেশন রোডে। আর ট্যাক্সির ধাক্কায় আহতেরা হলেন অরূপ সাধু, নীলা সাধু, রাধাদেবী অগ্রবাল, সুচিত্রা দাস এবং অমর সাধু। এঁদের প্রত্যেকেই কোমরে বা পায়ে চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ঘটনার পরে অভিযুক্ত দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, কামারহাটির দাশুবাগানের বাসিন্দা বিট্টু আকবর (২৩) ও মহম্মদ উসমান (২৪) নামে ওই দুই যুবকই মত্ত অবস্থায় ছিল। এর পাশাপাশি ওই ট্যাক্সির চালক, সালকিয়ার বাসিন্দা রামকুমার সাউকে প্রথমে আটক করলেও পরে তাঁকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

কী ঘটেছিল ওই রাতে?

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বি কে পাল অ্যাভিনিউ থেকে ১৫০ টাকা ভাড়ায় ডানলপ যেতে রামকুমারের ট্যাক্সিতে ওঠে বিট্টু ও উসমান। ডানলপ পৌঁছে আরও ৫০ টাকা বেশি ভাড়া দেওয়ার কথা বলে ট্যাক্সিটি কামারহাটি মোড়ে নিয়ে যেতে বলে তারা। রামকুমারের অভিযোগ, ইতিমধ্যে রথতলা মোড়ে গিয়ে বেলঘরিয়ার দিকে ট্যাক্সি ঢোকাতে বলে ওই যুবকেরা। এর পরে বিভিন্ন গলিতে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে শুরু করে। তাতেই তিনি আপত্তি জানান বলে ওই ট্যাক্সিচালকের দাবি। এ দিন রামকুমার বলেন, ‘‘এ দিক-ও দিক ঘোরাচ্ছে দেখে আমি আপত্তি জানাই। ওদের বলি, ট্যাক্সি থেকে নেমে যান। আর যাব না। তাতেই ওরা খেপে গিয়ে আমাকে মারধর শুরু করে।’’

ওই ট্যাক্সিচালক পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর পাশেই সামনের আসনে ছিল বিট্টু। অভিযোগ, ট্যাক্সি আর যাবে না বলতেই ওই যুবক রামকুমারের গলা টিপে ধরে মারধর শুরু করে। তাতে যোগ দেয় উসমানও। এর পরেই রামকুমারকে ঠেলে সরিয়ে চাবি কেড়ে নিয়ে বিট্টু বসে পড়ে চালকের আসনে। বাঁ হাতে রামকুমারের মুখে ঘুষি মারতে মারতে ডান হাতে স্টিয়ারিং ঘোরাতে থাকে সে। পিছনের আসন থেকে রামকুমারের গলা চেপে ধরে রাখে উসমান। এ ভাবে রথতলার ভিতরে বিভিন্ন গলি ঘোরার পরে ফের তারা ট্যাক্সি নিয়ে বি টি রোডে উঠে পড়ে। সেখানে দুই বাইক আরোহীকেও হাল্কা ধাক্কা মারে বিট্টুরা। তখন ট্যাক্সিটির পিছনে ধাওয়া করে ওই দু’টি বাইক। তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে আগরপাড়া ইলিয়াস রোডে ঢুকে পড়ে ট্যাক্সিটি। ভিতরে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে রামকুমার চিৎকার করলেও রাত সাড়ে ১২টার সুনসান রাস্তায় কেউ তা টের পাননি।

এর পরেই আগরপাড়ার হরিমোহন চ্যাটার্জি স্ট্রিটে ঢুকে পড়ে ট্যাক্সিটি। স্থানীয় একটি ক্লাবের কালীপ্রতিমা বিসর্জন দিয়ে তখন পাড়ায় ফিরছিলেন মহিলা, পুরুষ সদস্যেরা। আচমকাই পিছন থেকে হুড়মুড়িয়ে তাঁদের উপরে উঠে পড়ে ট্যাক্সিটি। সেই ধাক্কায় রাস্তার এ দিক-ও দিক ছিটকে পড়েন অনেকে। চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে সামনে এগিয়ে যাওয়া ক্লাবের বাকি সদস্যেরা ছুটে এসে ট্যাক্সি থামান। বিট্টু, উসমান ও রামকুমারকে নামিয়ে এনে বেধড়ক মারধর শুরু হয়। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় খড়দহ থানার টহলদার গাড়ি। ওই তিন জনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।


শীলা দাস।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বেপরোয়া ট্যাক্সির চাকায় পিষে যাওয়া শীলাদেবীর আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাঁকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। বাকি আহতদের নিয়ে যাওয়া হয় সাগর দত্ত হাসপাতাল এবং বলরাম বসু হাসপাতালে।

পুলিশ জানায়, বোন নীলা সাধুর বাড়িতে এসে বিসর্জনে অংশ নিয়েছিলেন শীলাদেবী। মঙ্গলবার তাঁর বোন নীলাদেবী বলেন, ‘‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্যাক্সিটা আমাদের উপরে চলে এল। সবাই এ দিক-ও দিক ছিটকে গেলাম। পরে দেখলাম, ট্যাক্সির চাকা দিদির বুকের উপরে উঠে গিয়েছে। কোথা থেকে কী হয়ে গেল!’’

এ দিন বিট্টু ও উসমানকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’জনকেই পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে এ দিন জবানবন্দি দিয়েছেন ট্যাক্সিচালক রামকুমারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন