আপনার মাংস কী ভাবে হরিণের বিপদ ডেকে আনে, বাংলা ভাষার প্রাচীনতম কবিতাসংগ্রহ চর্যাগান সেই বৃত্তান্ত শুনিয়েছে। চর্যার সন্ধ্যাভাষার রহস্যভেদের রাস্তায় না-গিয়েও যদি বলা যায়, এই হরিণ আসলে মেয়ে এবং মেয়েরা, অত্যুক্তি হয় না। কেননা শুধু বহির্জগতে নয়, নিজের ঘরেও মেয়েদের বিপদ পদে পদে। তার প্রমাণ হাওড়া জগৎবল্লভপুরের পূর্ণা সরকার (নাম বদল)। তার প্রমাণ উত্তর ২৪ পরগনার আয়েশা সর্দার (নাম পরিবর্তিত)-ও।
বছর বারোর পূর্ণা মার্চে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক শিশুপুত্রের জন্ম দেয়। দিনের পর দিন ধর্ষণের জেরে ওই নাবালিকা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। একই ভাবে ধর্ষিত হতে হতে গর্ভবতী হয়ে পড়ে বছর পনেরোর কিশোরী আয়েশা।
তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, ওই দুই নাবালিকাকেই ধর্ষণ করেছে কোনও নিকটাত্মীয়। পূর্ণার শিশুপুত্রের বাবা তারই দাদু! আর আয়েশাকে দাদুর সঙ্গে নিয়মিত ধর্ষণ করতেন তার কাকাও!!
রাজ্যের শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের পর্যবেক্ষণ, স্কুল বা রাস্তাঘাটের দুষ্কৃতীদের চেয়ে বাড়ির লোকেদের হাতে নাবালিকা-নিগ্রহের অভিযোগ বেশি। কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমরা চিন্তিত নির্যাতনের জায়গা নিয়ে। বাইরে নির্যাতনের কথা বাড়িতে জানালে পুলিশে অভিযোগ করার সুযোগ থাকে। নির্যাতিতারা আমাদের কাছেও আসতে পারে। কিন্তু বাড়ির ক্ষেত্রে তো ভয়েই অনেক মেয়ে পিছিয়ে যাবে! যাচ্ছেও।’’
শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী গত এক বছরে ‘প্রোটেকশন ফর চিল্ডড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স অ্যাক্ট’ (পকসো)-এ ৪৫০টি অভিযোগ পেয়েছে তারা। নির্যাতনের ঘটনা স্কুল বা বাইরের অন্য জায়গার মতো বাড়িতেও ঘটেছে প্রায় সমান-সমান।
কমিশন জানাচ্ছে, শুধু নাবালিকা নয়। বাড়িতে যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছে নাবালকেরাও।