রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতি সম্পাদক খাদিজা বানু।
পদ্মাপাড়ে ডোমকলের মেহেদিপাড়ায় আমার জন্ম। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পড়ার সময়েই বাধা আসে বাড়ি থেকে। বিয়ের কথা উঠতেই আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সময়টা ১৯৭২-৭৩ সাল। উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ দেখে পরিবারের লোকজন বাধ্য হন কলেজে পড়াতে। বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সামাজিক কাজে গতি আরও বেড়ে যায়। পরে শিক্ষকতার চাকরি পাই। তত দিনে সমাজসেবামূলক কাজের ভূত আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই সে চাকরি ছেড়ে দিই। নির্যাতিতা, অসহায়, অত্যাচারিত, নিপীড়িত মেয়েদের পাশে দাঁড়ানো শুরু করি।
ওই কাজ করতে গিয়ে জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরেছি। খুব কাছ থেকে দেখার সুবাদে গ্রামের তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের জীবন, যন্ত্রণা অনুভব করেছি। ২০০৬ সালে এমনই মহিলাদের নিয়ে একটা সভায় তাঁদের দুর্দশার কাহিনি শুনে আর স্থির থাকতে পারিনি। ২০০৭ সাল তৈরি হয় রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতি। তখন থেকেই তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের সামাজিক ও আর্থিক সুরক্ষা দেওয়ার কাজে পুরোপুরি ডুবে যাই। প্রশাসনিক কর্তাদের উপরে সম্পূর্ণ নির্ভর না করে সংস্থার তরফে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ওই মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলার পাশাপাশি নির্যাতিতাদের আইনি সহায়তা, নিজেদের অধিকার বোধ সম্বন্ধে সচেতন করতে শিক্ষা ও কর্মশালার আয়োজন করা হয় নিয়মিত। এমন কাজ করতে গিয়ে নানা বাধার মুখেও পড়তে হয়। ‘তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের ঘরের বাইরে নিয়ে এসে আমাদের সমাজকে ছোট করা হচ্ছে’ বলে যেমন একাংশের হুমকি মিলছে, তেমনি সমাজের মোড়ল-মাতব্বরদের চোখরাঙানি সইতে হচ্ছে আমাদের। আমরাও তাঁদের সবিনয়ে পাল্টা বলি— আপনারা অসহায় নারীদের ঘর থেকে উচ্ছেদ করে নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দেন। আর আমরা তাঁদের রক্ষা করি। এতে সমস্যাটা কোথায়? এ ছাড়াও ‘খুব বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে’ বলে কাছের লোকজনের কাছ থেকেও কত কথা শুনতে হয়। এত বাধার মধ্যে দিয়ে নির্যাতিতাদের কবে কবে আমি ‘মা’ হয়ে উঠেছি, বুঝতে পারিনি। কাজের প্রেরণা তাঁরাই।