অনুমতি ছাড়াই সভা

পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘‘সভার অনুমতি ছিল না। আমরা অয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল 

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪১
Share:

জমায়েত: পুরুলিয়ার ২ ব্লকের ভাঙরা নবকুঞ্জ মাঠে। ছবি: সুজিত

যোগী এলেন। আড়াই ঘণ্টা দেরি হল। বক্তৃতা দিলেন, আঠারো মিনিট। ফিরে গেলেন। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘‘সভার অনুমতি ছিল না। আমরা অয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Advertisement

পুরলিয়া ২ ব্লকের ভাঙরা নবকুঞ্জ মাঠে মঙ্গলবার সভা করেছে বিজেপি। মাঠের থেকে একটু দূরে তৈরি হয়েছিল হেলিপ্যাড। কিন্তু প্রশাসন কপ্টার নামার অনুমতি দেয়নি। এ দিন ঝাড়খণ্ড সীমানায় কপ্টার থেকে নেমে সড়ক পথে পুরুলিয়া আসেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। দু’টি পথে আসা যেত। একটি চাষমোড় হয়ে। সেখানে চলছিল তৃণমূলের সভা। চন্দনকেয়ারি ঘুরে অন্য রাস্তায় আসে যোগীর কনভয়। প্রায় ৫০টি গাড়ি ছিল তাতে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রাহুল সিংহ মঞ্চ থেকে বলেন, ‘‘এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সৌজন্য না দেখালেও আমাদের রঘুবর দাস রয়েছেন। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী। তিনিই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাও ছিল।’’

এ দিন দুপুর ২টোয় আসার কথা ছিল যোগীর। বিজেপি সূত্রের খবর, পুরুলিয়া সীমানা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের বারমেশিয়ায় যখন তাঁর কপ্টার নামে, প্রায় ৪টে বাজে। মিনিট চল্লিশের মধ্যে সড়ক পথে সভাস্থলে পৌঁছন যোগী। দুপুর ১টা থেকেই মাঠে জমায়েত শুরু হয়েছিল। মাঠের কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন অল্প কিছু পুলিশকর্মী। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এসে পৌঁছতেই ‘‘যোগী-যোগী’’ রব ওঠে জমায়েত থেকে। যোগী বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার উপরে আমার হেলিকপ্টার চক্কর কেটেছে। কিন্তু নামতে দেওয়া হয়নি। আমি কথা দিয়েছিলাম আসব। এসে দেখিয়েছি।’’ ঝাড়া আঠারো মিনিটের বক্তৃতায় যোগী নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে। ৫টার কিছু পরেই ফিরতি পথে রওনা দেয় তাঁর কনভয়।

Advertisement

এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে পুরুলিয়ায় দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে উঠে এসেছে বিজেপির নাম। জেলা পরিষদে ৭টি আসন পেয়েছে তারা। বোর্ড গড়েছে গোটা চল্লিশ পঞ্চায়েতে। দলের নেতারা দাবি করেছেন, প্রায় ৭০টি পঞ্চায়েতে একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অধিকাংশ জায়গায় শাসকদলের ‘বাধা’ পেয়ে বোর্ড গড়তে পারেননি। যে এলাকায় এ দিনের সভা ছিল, তার আশপাশের চারটি পঞ্চায়েতই বিজেপি দখল করেছে। মঞ্চ থেকে এ দিন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সভাপতি অমিত শাহ লোকসভায় রাজ্যের ২৩টি আসনে জেতার লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন। আমরা তালিকায় পুরুলিয়ার নামটাই প্রথমে রেখেছি।’’

দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, এ দিনের জমায়েত তাঁদের লোকসভায় জয়ের ব্যাপারে প্রত্যয়ী করেছে। তাঁর দাবি, ভিড় হয়েছিল প্রায় ২ লক্ষ। পুলিশ বলছে, ৩০ হাজার। জয়পুরে তৃণমূলের সভা থেকে আবার দলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা পুরুলিয়ার জেলা সভাধিপতি সুজয় বন্দোপাধ্যায় দাবি করেছন, বিজেপির সভায় মেরেকেটে দশ হাজার লোক গিয়েছিল। তাঁদের সভায় তিরিশ হাজারেরও বেশি মানুষ এসেছিলেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘বিজেপি দিবাস্বপ্ন দেখছে। পুরুলিয়ায় লোকসভা ভোটে আমরা গত বারের থেকেও বেশি ব্যবধানে জিতব। এক লক্ষের বেশি ব্যবধানে না জিতলে আমরা মনে করব আমাদের নৈতিক পরাজয় হয়েছে।’’

এ দিনও পুরুলিয়া জেলা পুলিশ দাবি করেছে, মাঠের মালিকদের একাংশ স্থানীয় থানায় তাঁদের আপত্তির কথা জানানোয় সভার অনুমতি দেওয়া হয়নি। শান্তিরামের কটাক্ষ, ‘‘সাংবিধানিক পদে থাকা একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সেই সভায় যোগ দিলেন, যে সভার অনুমতিটাই নেই। সেই অবৈধ সভায় যোগ দেওয়াটাই তো সব থেকে বড় অপরাধ।’’ বিজেপি নেতৃত্ব এ দিনও দাবি করেছে, মাঠের মালিকদের সবাই ‘নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট’ দিয়েছেন। পুলিশের কাছে সেই নথি জমাও দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন