স্ত্রী ও মেয়েকে খুন, ধৃত যুবক

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, অম্তরঙ্গ মুহূর্তেই মনুয়ারার সঙ্গে বচসা বাধে তাঁর স্বামী সামসুল আলির। বচসা চলাকালীনই হাতের কাছে থাকা হ্যাক্সো ব্লেড দিয়ে স্ত্রীর গলার নলি কেটে দেয় সামসুল। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি। বিছানায় ঘুমন্ত মেয়ে মুসকান খাতুনকেও খুন করে বছর চব্বিশের ওই যুবক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কেশপুর শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫০
Share:

দিন পনেরো বাপের বাড়িতে থাকার পরে বুধবার সন্ধেতেই দেড় বছরের মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ফিরেছিলেন মনুয়ারা বেগম (২০)। আর রাতেই খুন হতে হল দু’জনকে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, অম্তরঙ্গ মুহূর্তেই মনুয়ারার সঙ্গে বচসা বাধে তাঁর স্বামী সামসুল আলির। বচসা চলাকালীনই হাতের কাছে থাকা হ্যাক্সো ব্লেড দিয়ে স্ত্রীর গলার নলি কেটে দেয় সামসুল। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি। বিছানায় ঘুমন্ত মেয়ে মুসকান খাতুনকেও খুন করে বছর চব্বিশের ওই যুবক। এবং এ বারও হ্যাক্সো ব্লেড দিয়েই গলার নলি কেটে দেয়।

Advertisement

বুধবার রাতে এই ঘটনার পরে চম্পট দিয়েছিল কেশপুরের ইছাইপুরের যুবক সামসুল। তবে বৃহস্পতিবার কেশপুরেরই কলাগ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ, শুক্রবার তাকে মেদিনীপুর আদালতে তোলা হবে। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী-মেয়েকে খুনের কথা কবুল করেছে সামসুল। জানিয়েছে, রাগের মাথায় এই কাণ্ড ঘটিয়েছে সে।

কেন এই জোড়া খুন? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের এক কর্তার জবাব, ‘‘বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে বলে মনুয়ারা ও সামসুল পরস্পরকে সন্দেহ করত। ঘটনার রাতে তা নিয়েই বচসা বাধে।’’ কিন্তু মেয়েকে কেন মারল সামসুল? তদন্তকারীদের ব্যাখ্যা, সামসুল মনে করত মেয়ে তার ঔরসজাত নয়। তাই তাকেও পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

ইছাইপুরেই বাপের বাড়ি মনুয়ারার। ফেরিওয়ালা সামসুলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল বছর আড়াই আগে। মনুয়ারার দাদা শেখ মোর্তাজা আলির অভিযোগ, “বিয়ের পরে বোনের উপর অত্যাচার করত শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তা ছাড়া, সামসুলের সঙ্গে অন্য মেয়ের সম্পর্ক ছিল। তা নিয়ে বললে বোনের উপর নির্যাতন বাড়ত।” মোর্তাজার আরও অভিযোগ, মাস কয়েক আগে মনুয়ারাকে পুড়িয়ে খুনের চেষ্টাও হয়।

বুধবার রাতে এক প্রতিবেশীর থেকে খবর পেয়ে মোর্তাজা যখন বোনের শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছন, তত ক্ষণে সব শেষ। ঘরের মেঝেতে রক্ত গড়াচ্ছে। পাশে মনুয়ারার দেহ। আর ছোট্ট মুসকান ছিল খাটে। প্রতিবেশী সেলিমা বিবি, আনসুরা বেগমরা বলছিলেন, “সে ভয়ানক দৃশ্য। ভেবেছিলাম, বাচ্চাটা ঘুমোচ্ছে। পরে পরে বুঝলাম ওর দেহেও প্রাণ নেই।”

কিন্তু খুনের সময় কেউ কোনও চিৎকার শুনতে পেলেন না কেন? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বাড়ির জানলা-দরজা সব বন্ধ ছিল। তা ছাড়া, ঘরে টেবিল পাখা চলছিল। তাই কিছু শোনা যায়নি। ঘটনার সময় সামসুলের মা, বোন বাড়িতেই ছিলেন। তবে পরে তাঁরা পালিয়েছেন। তাঁদের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।

মেয়ে ও নাতনির এই পরিণতি মানতে পারছেন না মনুয়ারার মা মোমেনা বিবি। তাঁর আক্ষেপ, “ওরা বুধবারই আমাদের বাড়ি থেকে গেল। না গেলে হয়তো বেঁচে যেত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন