নির্মল বিশ্বাস
মদের নেশা ছাড়াতে এক যুবককে পাঠানো হয়েছিল নেশামুক্তি কেন্দ্রে। বাড়ির কাউকে দেখা করতে দেওয়া হত না। ফোনে সরাসরি কথা বলারও উপায় ছিল না। সবই নাকি ‘রোগী’র স্বার্থে।
দিন সাতেকের মাথায় খবর এল, অসুস্থ হয়ে পড়েছেন নির্মল বিশ্বাস (৩৫) নামে ওই যুবক। পরিবারটিকে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে আসতে বলা হয়। শনিবার বিকেলে সেখানে গিয়ে বাড়ির লোকজন দেখেন, বাইরে একটি গাড়িতে বসে নির্মল। কাছে গিয়ে বোঝা যায়, দেহে প্রাণ নেই তাঁর। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরাও তাঁকে মৃত বলে জানান। সে সময়ে নেশামুক্তি কেন্দ্রের কাউকে ধারেকাছে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে নির্মলের পরিবার।
রবিবার আমডাঙা থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের মালিক সঞ্জয় দে-কে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তে।
নির্মলের বাড়ি দেগঙ্গার বাগজোলা কলসুর গ্রামে। মদে আসক্ত যুবকটি মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। নিয়মিত নেশা করা নিয়ে পরিবারে অশান্তি ছিল। নির্মলের ভাইপো ধনঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘কাকাকে সুস্থ করতে চেয়েছিলাম। অশোকনগরের একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রের খোঁজ পাই।’’ ওই কেন্দ্রের আমডাঙা শাখায় নির্মলকে রাখার কথা ঠিক হয়।
দিন সাতেক আগে বাড়িতে গিয়ে গাড়ি করে নির্মলকে আমডাঙার গাদামাড়ায় নিয়ে আসেন কেন্দ্রের লোকজন। ধনঞ্জয় বলেন, ‘‘আমরা ফোন করে কাকার খবর নিতাম। বলা হত, চিকিৎসা ভাল কাজ দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হবেন উনি।’’ বাড়ির কাউকে দেখা করতে বারণ করা হয়েছিল। ফোনেও কথা বলা ছিল নিষেধ। মাসে সাড়ে ৬ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। দিন কয়েক কাটতে না কাটতে শারীরিক পরীক্ষার জন্য আরও কিছু টাকা নেওয়া হয় ধনঞ্জয়দের থেকে।
নির্মলের বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, শনিবার সকালেও ফোনে জানানো হয়েছিল, ভাল আছেন নির্মল। বিকেলে ফোন করে অসুস্থতার খবর দেওয়া হয়। ধনঞ্জয়দের দাবি, নেশামুক্তি কেন্দ্রে অত্যাচারের ফলেই মারা গিয়েছেন কাকা।