National news

আইএসের ইন্ধনে জেহাদ করতে এ রাজ্য থেকেও তরুণদের মধ্যে কাশ্মীরে যাওয়ার ঝোঁক বেশি

কাশ্মীরে গিয়ে জেহাদের নেশা চাপছে এ রাজ্যের তরুণদের মধ্যেও। গত এক বছরের বেশি সময়ে গোটা পূর্ব ভারতেই এই প্রবণতা তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে এই রাজ্যও রয়েছে, যা এখন গোয়েন্দাদের চিন্তার কারণ।

Advertisement

সিজার মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৬:৪৪
Share:

কানপুর থেকে গ্রেফতার হওয়া যুবক কামার-উজ-জামা। —নিজস্ব চিত্র।

কাশ্মীরে গিয়ে জেহাদের নেশা চাপছে এ রাজ্যের তরুণদের মধ্যেও। গত এক বছরের বেশি সময়ে গোটা পূর্ব ভারতেই এই প্রবণতা তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে এই রাজ্যও রয়েছে, যা এখন গোয়েন্দাদের চিন্তার কারণ।

Advertisement

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (আইবি) পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং অসমের মতো রাজ্যকে সতর্ক করেছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, এর পিছনে রয়েছে ইসলামিক স্টেট (আই এস)-এর ইন্ধন। সিরিয়াতে নিজেদের কৌশলগত অবস্থান খারাপ হওয়ার পর থেকে আইএস তাদের নিজস্ব প্রচারমাধ্যম ‘দাবিক’ এবং ‘আমাক নিউজ’-এ এক বার্তা দিয়েছে। সেই বার্তায় আইএস অনুগামীদের জানানো হয়েছে, তাদের এই মূহূর্তে সিরিয়া যাওয়ার প্রয়োজন নেই। পরিবর্তে তারা যাতে তাদের সংলগ্ন এলাকায় যেখানে জেহাদ চলছে সেখানে যোগ দেয়, সেই আহ্বান জানানো হয়েছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, ওই বার্তার ফলেই অনেক তরুণ তাদের জেহাদি কার্যকলাপে যুক্ত হওয়ার আদর্শ জায়গা হিসাবে কাশ্মীরকে বেছে নিচ্ছে।

গত এক বছরে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ থেকে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর অন্তত ছ’জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। দলাই লামার সফরের সময় বুদ্ধগয়াতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করার জন্য তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেয়। ধৃতেরা খাগড়াগড় বিস্ফোরণ পরবর্তী সময়ে শীর্ষ জেএমবি নেতা সালাউদ্দিন এবং কওসরের তৈরি মডিউলের সদস্য। তাদের জেরা করতে গিয়েই জানা গিয়েছিল, ওরাও কাশ্মীরে গিয়ে জেহাদে অংশ নিতে চেয়েছিল। ওই ধৃতদের এক জন রেকাউল শেখ।

Advertisement

আরও পড়ুন: দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালুর আর্জি জানিয়ে মোদীকে চিঠি ইমরানের

রাজ্যের এক গোয়েন্দা কর্তা স্বীকার করেন যে, ধৃত তরুণ জেএমবি সদস্যদের মধ্যে অনেকেই জেরার সময় বলেছিল যে, তারা কাশ্মীরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। যেমনটা প্রায় পাকা করে ফেলেছিল রেকাউলও। ওই গোয়েন্দা কর্তা বলেন, “এ রাজ্যে সক্রিয় জিহাদি সংগঠনগুলোর মধ্যে এত দিন জেএমবি ছিল সবচেয়ে প্রভাবশালী। যে হেতু তাদের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশ, তাই কৌশলগত কারণে তারা কখনই কাশ্মীরের জিহাদে অংশগ্রহণে অনুমোদন দিত না বা উৎসাহিতও করত না। বিকল্প হিসেবে তারা তুলে ধরেছিল রোহিঙ্গাদের। তাদের পরিকল্পনা ছিল, বুদ্ধগয়াতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা রোহিঙ্গা জনজাতির মানুষকে বার্তা দেবে যে, জেএমবি তাদের পাশে। সেই সুযোগে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজেদের দলে টেনে জেএমবি সংগঠনকে শক্তিশালী করবে।”

আরও পড়ুন: ‘দলিত’কে বিয়ে, রাস্তায় ফেলে মেয়েকে কাস্তে দিয়ে কোপালেন বাবা

কিন্তু, জেএমবি-র শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার পর ফের চাঙ্গা হয়েছে কাশ্মীরে যাওয়ার প্রবণতা। এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন,“সালাউদ্দিন এবং কওসরের তৈরি জেএমবির ওই নতুন মডিউলের সবাইকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। অনেতেই গ্রেফতারি এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছে। অথচ ইতিমধ্যেই তারা জেহাদি ভাবধারাতে উদ্বুদ্ধ। তারা আরও তরুণদের সেই একই ভাবধারাতে উদ্বুদ্ধ করছে।” সেখান থেকেই গোয়েন্দাদের আশঙ্কা অসম বা এ রাজ্যে যারা ধরা পড়েছে, তার থেকে অনেক বেশি সংখ্যায় যুবকরা হয়তো ইতিমধ্যেই কাশ্মীরের জেহাদি শিবিরে নাম লিখিয়েছে। যেমন, ২০১৪ সালে মুম্বইয়ের চার যুবক নিখোঁজ হবার আগে পর্যন্ত গোয়েন্দারা টের পাননি এ দেশ থেকেও সিরিয়াতে আইএসে যোগ দিতে যাচ্ছে অনেকে। ওই ঘটনা সামনে আসার পর দেশের কেরল,হায়দরাবাদ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খোঁজ মেলে নিখোঁজ যুবকদের, যারা সিরিয়া পাড়ি দিয়েছিল। রেকাউল বা তার সঙ্গীদের কাশ্মীর পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছে যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, তার প্রমান মিলেছে অসমে।

আরও পড়ুন: সেতুর হাল খারাপ? এই নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করুন, বললেন মন্ত্রী

এক সপ্তাহ আগে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ কানপুর থেকে কামার-উজ-জামা নামে অসমের হোজাই জেলার এক যুবককে গ্রেফতার করে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের দাবি, সে সক্রিয় হিজবুল মুজাহিদিন। এ বছর এপ্রিল মাসে সোশ্যাল মিডিয়াতে হাতে একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে তার ছবি দেখা যায়। কামার-উজ-জামাকে জেরা করে উত্তরপ্রদেশ এবং অসম পুলিশ আরও ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে অসমের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন