আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে বাম বিধায়ক প্রতিনিধিরা। নিজস্ব চিত্র।
এফআইআর দায়ের হওয়ার পরেও প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন কাঁথির খেজুরি ও সুনিয়া কাণ্ডের অভিযুক্ত তৃণমূল নেতারা। তাঁদের অবশ্য ‘খোঁজ’ পায়নি পুলিশ। এ দিকে, খেজুরির নিগৃহীতা তৃণমূল সদস্যা বৃহস্পতিবারও দাবি করেছেন, তৃণমূল নেতা স্বপন দাসের ভয়ে এলাকাবাসীর একাংশ এখনও তাঁকে ‘বয়কট’ করছেন। মিলছে না মুদির জিনিস। খেজুরি লাগোয়া সুনিয়াতেও ঘরছাড়া সিপিএম নেতার স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠার পরে একই রকম ভাবে একঘরে হয়ে গিয়েছিলেন নিগৃহীতার বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি।
খেজুরি-কাণ্ডে তৃণমূল জেলা নেতৃত্বের অর্ন্তদ্বন্দ্ব সামনে আসায় বুধবার রাতেই পরিস্থিতি সামাল দিতে অভিযুক্ত স্বপন দাস এবং অভিযোগকারিনী, দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের পরিকল্পনা করেছিলেন খেজুরি ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সত্যরঞ্জন বেরা। কিন্তু, স্বপন-সহ তৃণমূলের একটি অংশ সেখানে না-আসায় ওই বৈঠক আর হয়নি। কেন গেলেন না? স্বপন বৃহস্পতিবার বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। যা ভিত্তিহীন। ওই অভিযোগ প্রত্যাহার না-করলে বৈঠকের কোনও মানে হয় না।” স্বপনকে সমর্থন করেছেন জেলা স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস।
সুনিয়ায় সামনে এসেছিল অভিযুক্ত দলীয় কর্মীকে তৃণমূল নেতাদের আড়াল করার প্রবণতা। সিপিএম-সহ বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ওই মহিলাকে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে চালাতে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেই তত্পর ছিল জেলা পুলিশও। সেই ঘটনায় এফআইআর রুজু হওয়ার দশ দিন পার হলেও মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দেবাশিস ভুঁইয়া অবশ্য অখনও অধরা। খেজুরিতে গণধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে এফআইআর দায়ের হওয়ার পরেও বুধবার প্রকাশ্যে বিক্ষোভ-মিছিলে হেঁটেছিলেন ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা স্বপন দাস।
পুলিশ কী তবে অভিযুক্তদের আড়াল করছে? অভিযোগ উড়িয়ে সুকেশকুমার জৈন বলেন, “খেজুরির ঘটনার তদন্ত চলছে। আর, সুনিয়ায় তিনজনকে ইতিমধ্যেই ধরা হয়েছে। বাকিদের ধরতে চল্লাশি চলছে।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটের পরে খেজুরির ওই পঞ্চায়েতে কে প্রধান (মহিলা) হবেন, তা নিয়ে অভিযোগকারিণীর সঙ্গে স্বপনের বিরোধের সূত্রপাত। মঙ্গলবার খেজুরির মধ্য চল্লিশের এক পঞ্চায়েত সদস্যা স্বপন-সহ দলেরই কয়েকজনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ আনেন। মহিলার দাবি, গত ২৪ অগস্ট স্বপন দলবল-সহ তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে স্বামী ও ছেলের সামনেই তাঁকে মারধর করে, গণধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ ছাড়া, মহিলাকে একঘর করে রাখার অভিযোগও ওঠে। এলাকার পুলিশ ক্যাম্প থেকে পাওয়া মুড়ি-চিড়ে খেয়ে কোনও রকমে দিন কাটিয়েছেন অশীতিপর দম্পতি। এখন অবশ্য তাঁরা আত্মীয়দের থেকে খাবার পাচ্ছেন।
খেজুরির নির্যাতিতা এ দিনও বয়কটের অভিযোগ তুলেছেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন তিনি এলাকার কয়েক জনের বাড়ি গিয়েছিলেন। তাঁরা ঢুকতে দিলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যেহেতু বয়কটের কথা মাইকিং করে প্রচার করা হয়েছে তাই তাঁরা চান না ওই নির্যাতিতা তাঁদের বাড়িতে ভবিষ্যতে যান। স্থানীয় একজনের অভিযোগ, জরিমানার ভয়েই এমনটা বলতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। বয়কট তুলে নেওয়া হল এই মর্মে ফের প্রচার না-হলে এই ‘ভয়’ কাটবে না বলে তাঁর দাবি। যদিও কিছু বাসিন্দা বলেছেন, পুরোটাই তৃণমূলের অন্তর্কলহ বই অন্য কিছু নয়!
অভিযুক্ত স্বপন এ দিনও দাবি করেছেন, “বয়কটের অভিযোগ মিথ্যে। কোনও প্রচার করা হয়নি।” তবে বয়কটের কথা মেনেছেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি। তিনি আশ্বাস দেন, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হবে।
অন্য দিকে, এ দিন সুনিয়ায় যান আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে বাম বিধায়কদের আট সদস্যের প্রতিনিধি দল। নিহতের শ্বশুর ও শাশুড়ির কাছে তাঁরা সে দিনের বিবরণ শোনেন। পরে তাঁরা পুলিশ সুপারের সঙ্গেও দেখা করেন। বিষয়টি বিধানসভায় তোলা হবে বলে জানান সিপিএম নেতা আনিসুর রহমান। প্রতিনিধি দলের দুই মহিলা সদস্যা সিপিএমের দেবলীনা হেমব্রম ও অপর্ণা সাহার কথায়, “নিন্দার কোনও ভাষা নেই।” সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সিপিএমের যুব সংগঠনের প্রতিনিধি দলের সুনিয়ায় যাওয়ার কথা রয়েছে।