সুব্রত রায়।
দশ মাস ধরে তাঁকে খুঁজে পায়নি পুলিশ বা বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট), কেউই। বুধবার আদালত চত্বরে এসে ঘুরে বেড়িয়ে, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা সেরে আত্মসমর্পণ করলেন পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষ হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত সজলকান্তি রায় ওরফে সুব্রত রায়।
এ দিন ঘণ্টা দুয়েক আদালত চত্বরে থাকলেও ফেরার অভিযুক্তকে ধরার উদ্যোগ নেয়নি পুলিশ। এমনকী তোলপাড় ফেলে দেওয়া এই মামলার এমন এক অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য সিটের তরফেও কেউ আদালতে হাজির ছিলেন না। সিউড়ি আদালত সুব্রত রায়ের জামিনের আর্জি খারিজ করে তাঁকে জেল-হাজতে পাঠান। মাসখানেক আগে এই মামলার আর এক অভিযুক্ত ভগীরথ ঘোষের আত্মসমর্পণের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। পরে অবশ্য সিট ভগীরথকে হেফাজতে পেতে আবেদন করে।
সুব্রত পুলিশের খাতায় ‘পলাতক’ ছিলেন। তাঁকে ধরতে না পেরে কয়েক মাস আগে হুলিয়া জারি করেছিল সিট। এহেন ‘ফেরার’ অভিযুক্তের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তেরও নির্দেশ দেয় আদালত। সেই সুব্রত যে ভাবে আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন, তার পরে তদন্তকারীদের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠেছে। সাগরবাবুর ছেলে হৃদয় ঘোষের ক্ষোভ, “পুলিশ ইচ্ছে করেই অপরাধীদের ধরেনি। ৯০ দিনেও চার্জশিট জমা দিতে পারেনি। তারই সুযোগে সহজে জামিন পাওয়ার আশায় দুষ্কৃতীরা আত্মসমর্পণ করছে।”
সকালে সুব্রত আইনজীবী নুরুল আলমের মাধ্যমে জামিন চেয়ে ও গোপন জবানবন্দি দিতে আদালতে আর্জিও জানান। যদিও দু’টি আর্জি নামঞ্জুর করে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট জ্যোৎস্না রায় অভিযুক্তকে ৩ জুন পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সে দিন সুব্রত, ভগীরথ-সহ সব ধৃতদের হাজিরের নির্দেশ দেন বিচারক। মামলার সরকারি আইনজীবী কুন্তল চট্টোপাধ্যায় জানান, তার আগে সুব্রতকে হেফাজতে চেয়ে আর্জি জানাবে সিট।
পাড়ুই থানার কসবা পঞ্চায়েতের বাঁধনবগ্রামের বাসিন্দা, ওই পঞ্চায়তের নির্দল প্রার্থী (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ গত বছর জুলাইয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতে গুলিবিদ্ধ হন। বর্ধমান মেডিক্যালে মারা যান। ওই ঘটনায় তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, জেলার সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী-সহ অভিযুক্ত ৪১ জন। নিহতের পুত্রবধূ শিবানী ঘোষ যে চার জনের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ করেছিলেন, সুব্রত তাঁদেরই অন্যতম। গুলি চালানোয় অভিযুক্ত চতুর্থ অভিযুক্ত, কসবা এলাকার বাসিন্দা শেখ আসগর এখনও অধরা।
এ দিন কিছু সঙ্গী নিয়ে আদালত চত্বরে যান সুব্রত। সাংবাদিকদের কাছে সাগরবাবুর খুনে যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করে সুব্রতর দাবি, “অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী কিছু লোক আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়েছে। সত্যিটা বলতেই আত্মসমর্পণ করলাম।” তা হলে আগে আত্মসমর্পণ করেননি কেন? এই প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি।