আইন কানুনের তোয়াক্কা না-করেই রাজ্য কৃষি অধিকর্তা নিয়োগ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জানিয়ে দিল রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। শুধু তা-ই নয়, তাদের বার্ষিক রির্পোটেও ওই অনিয়মের কথা উল্লেখ থাকবে বলে জানিয়েছেন পিএসসি কর্তৃপক্ষ। জট কাটাতে এখন মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা শুরু করেছে সরকার।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১২-র জুনে । ওই সময় কৃষি অধিকর্তা সার্থক বর্মাকে সরিয়ে দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্যকে ওই পদের দায়িত্ব দেয় রাজ্য সরকার। তবে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় ‘অ্যাড হক’ ভিত্তিতে।
আইন অনুযায়ী কৃষি অধিকর্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে পিএসসি-র আগাম অনুমোদন নেওয়াটা বাধ্যতামূলক। তবে পিএসসি-র আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার জরুরি প্রয়োজনে অনুমোদন ছাড়া ‘অ্যাড হক’ নিয়োগ করতে পারে। কিন্তু নিয়োগের ছ’মাসের মধ্যেই পিএসসি-র অনুমোদন নিতে হবে। আইন অনুযায়ী ‘অ্যাড হক’ ভিত্তিতে নিযুক্ত ব্যক্তিকে কোনও অবস্থাতেই এক বছরের বেশি ওই পদে রাখা যায় না। কিন্তু কৃষি দফতর পরিতোষবাবুর ‘অ্যাড হক’ নিয়োগে পিএসসি-র অনুমোদন চেয়ে চিঠি পাঠায় ২০১৩-এর ১২ নভেম্বর। তত দিনে ওই পদে এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে পরিতোষবাবুর কার্যকাল। গত মার্চ মাসে পিএসসি জানিয়ে দেয়, এত দেরিতে আসা ওই আবেদন তাদের পক্ষে মঞ্জুর করা সম্ভব নয়।
কৃষি-কর্তাদের একাংশ বলছেন, রাজ্য সরকারের গাফিলতির জেরে এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ দফতরের কাজকর্মই শিকেয় ওঠার জোগাড় হয়েছে। অধিকর্তার পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদে কাজ চালানো অফিসারের নিয়োগই যদি বৈধ না হয়, তবেও এই সময়ের মধ্যে তাঁর নেওয়া আর্থিক বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। এর ফলে দফতরে এক ধরনের প্রশাসনিক সঙ্কট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য কী করছে?
কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর জবাব, “আমি কোনও মন্তব্য করব না। যা বলার মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলবেন।” কৃষি উপদেষ্টা অবশ্য এ’টিকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলেই মনে করছেন। প্রদীপবাবু বলেন, “পিএসসি-র কাছে যথা সময়ে ফাইল পাঠানোর দায়িত্ব কৃষিসচিবের। কেন তা করা হয়নি, তা কৃষিসচিবের পক্ষেই বলা সম্ভব।”
কৃষিসচিবের দাবি পিএসসি-র কাছে কৃষি অধিকর্তা নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইল যথা সময়েই পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, “কোনও গাফিলতি নেই। পিএসসি কেন এই নিয়োগকে বেআইনি বলেছে, তা তারাই জানে। তবে মন্ত্রিসভা এই জট কাটাতে পারে।” সচিব জানান, পিএসসি কোনও নিয়োগকে বেআইনি বললেও তাকে আইনি করার অধিকার মন্ত্রিসভার রয়েছে। তার চেষ্টাও শুরু হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী কৃষি উপদেষ্টাও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তবে সরকারি কর্তাদের একাংশ মনে করছেন, পিএসসি যদি তাদের বার্ষিক রিপোর্টে বিষয়টির উল্লেখ করে, তবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিষ্পত্তির পরেও কিন্তু ওই নিয়োগের গায়ে ‘অনিয়ম’-এর কালিটা লেগেই থাকবে।