চাষের দিশা

আম-লিচু গাছের পরিচর্যা এই সময়ে

শুরুতেই বলি, মুকুল আসার অন্তত দুই থেকে তিন মাস আগে লিচু বা আম বাগানে সার প্রয়োগ, চাষ দেওয়া, জলসেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। এই সময় কোনও ভাবে গাছকে বিরক্ত করা যাবে না। কারণ পরিচর্যার জেরে গাছে নতুন শাখা-প্রশাখা তৈরি হলে মুকুল আসার সম্ভাবনা কমে যায়।

Advertisement

সামিমা সুলতানা

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:০৩
Share:

শুরুতেই বলি, মুকুল আসার অন্তত দুই থেকে তিন মাস আগে লিচু বা আম বাগানে সার প্রয়োগ, চাষ দেওয়া, জলসেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। এই সময় কোনও ভাবে গাছকে বিরক্ত করা যাবে না। কারণ পরিচর্যার জেরে গাছে নতুন শাখা-প্রশাখা তৈরি হলে মুকুল আসার সম্ভাবনা কমে যায়। এই গাছগুলিতে পুরনো শাখায় ফুল আসে। যে সব শাখা বসন্ত বা গ্রীষ্মে জন্মায়, তাতে পরের বছর মাঘ-ফাল্গুন মাসে ফুল আসে।তবে, ফুল আসার আগে কিছু রোগপোকার আক্রমণ হলে মুকুল প্রস্ফুটিত হতে পারে না। এই সময় রোগপোকার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

Advertisement

আমের কীটশত্রু

Advertisement

আমের কীটশত্রুর মধ্যে অন্যতম হল শোষক পোকা, দয়ে পোকা, কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা এবং পাতা মোড়া পোকা। রোগগুলির মধ্যে অন্যতম হল ক্ষতরোগ বা অ্যানথ্রাকনোজ, সাদা গুঁড়ো ইত্যাদি। ক্ষত রোগ ধরলে মুকুল বা গুটি ঝরে পড়ে। এর প্রতিকারে মার্বেল অবস্থায় বা মুকুলে থায়োফ্যানেট মিথাইল ৭০% ডব্লুপি ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়। কচি পাতা, ফুলের থোকা ও ডালের ডগায় সাদা গুঁড়ো দেখতে পেলে মুকুল আসার আগে ট্রাইডিমর্ফ ৮০% ইসি ০.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে স্প্রে করতে হবে। আম গাছে শোষক পোকার সমস্যা সবচেয়ে ব্যাপক। সাদা, সবুজাভ হলুদ বা হাল্কা হলুদ রঙের পোকাগুলি আমের মুকুল আসার পর ঝাঁকে ঝাঁকে আক্রমণ করে। শোষক পোকার শুষে নেওয়া রসের (যা পোকার দেহের বাইরে নিষ্ক্রমণ হয়) উপরে ছত্রাকের আক্রমণ হয়। প্রতিকার হিসাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষ সবচেয়ে জরুরি। মুকুল আসার আগে আশ্বিন-কার্তিক মাসে থায়োক্লোরপ্রিড ২৫% এসসি ১ মিলি বা ইমিডাক্লোপ্রিড ০.৩ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। মুকুল আসার পর ক্লোথায়ানিডিন ৫০% ডব্লুডিজি ১ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার জলে বা অ্যাসিফেট ৭৫.৫ ডব্লুপি ০.৭৫ গ্রাম বা থায়োক্লোরপ্রিড ১ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। সাদা তুলোর মতো দয়ে পোকা মুকুলে ধরতে পারে। এরা থাকলেই পিঁপড়ে আসবে। প্রতিকারের ব্যবস্থা হিসাবে গাছের চারপাশ পরিষ্কার করতে হবে। বিঘা প্রতি ক্লোরোপাইরিফস পাউডার ৩ সাড়ে ৩ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। পলিথিনের ব্যান্ড আঠা দিয়ে গাছের গোড়ায় বেঁধে রাখলে পোকা উপরে উঠতে পারবে না। বেশি পোকার আক্রমণ হলে ডাইক্লোরোভস ৭৬% ইসি ০.৭৫ মিলি বা ডাইমিথোয়েট ৩০% ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

লিচুর মাকড়

লিচু গাছে যে নতুন শাখা আছে, তাতে মাকড়ের আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। পরিচর্যা না করলে মুকুলের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। আক্রান্ত ডাল-পাতা তুলে পুঁতে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে দিতে হবে। আক্রমণ না হলেও গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিমজাত কৃষি বিষ ১০,০০০ পিপিএম ২-৩ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে দু’সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েকবার স্প্রে করতে হবে। আক্রমণ দেখা গেলেই জলে গোলা সালফার ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে ও তার ৫-৭ দিন পর প্রোপারজাইট ২ মিলি বা অ্যাবামেকটিন ২ মিলি প্রতি লিটার জলে আঠা দিয়ে স্প্রে করতে হবে।

কুয়াশায় ক্ষতি

অনেক সময় কুয়াশার জন্য আম-লিচুর মুকুলে কালো ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এর জন্য ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। এর সঙ্গে কোনও রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়াও ম্যানকোজেব ৭৫.৫ ডব্লুপি ২-২.৫ গ্রাম বা থায়োফেনেট মিথাইল ৭০% ডব্লুপি ১ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক

ফুল ভাল আসা বা ফুল, ফল যাতে না ঝরে, সে জন্য আম-লিচু গাছে এন-ট্রায়াকন্টানল গ্রুপের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ০.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে আঠা-সহ স্প্রে করতে হবে।

অণুখাদ্যের মিশ্রণ

অনেক সময় গাছের অণুখাদ্যের অভাবে মুকুল ফোটায় অসুবিধা হয়। মুকুল ঝরে পড়ে। এই জন্য অণুখাদ্যের মিশ্রণ গ্রেড ২ থেকে গ্রেড ৫ (২ মিলি) প্রতি লিটার জলের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

লেখিকা মালদহ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement