উজ্জ্বল হাঁটছিলেন রেললাইনে, বলছে পুলিশ

পরিকল্পিত ভাবে তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সিপিএম-কর্মী উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের বাবা। আর রেল পুলিশ বলছে, রবিবার সন্ধ্যায় বিধাননগরের রেললাইন ধরে অন্যমনস্ক ভাবে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছিল উজ্জ্বলকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২০
Share:

উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়

পরিকল্পিত ভাবে তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সিপিএম-কর্মী উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের বাবা।

Advertisement

আর রেল পুলিশ বলছে, রবিবার সন্ধ্যায় বিধাননগরের রেললাইন ধরে অন্যমনস্ক ভাবে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছিল উজ্জ্বলকে। তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্য ভেদ করতে নেমে তারা প্রাথমিক ভাবে এই তথ্যই পেয়েছে বলে রেল পুলিশের দাবি। বেশ কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে তারা। ওই প্রত্যক্ষদর্শীদের বেশির ভাগই রেললাইনের পাশের ঝুপড়িতে থাকেন। তাঁরা রবিবার সন্ধ্যায় এক যুবককে বিধাননগরের রেললাইন বরাবর হেঁটে যেতে দেখেছেন বলে পুলিশকে জানান।

উজ্জ্বলের বাবা উদয় মুখোপাধ্যায় রেল পুলিশের কাছে খুনের মামলা দায়ের করেছেন ঠিকই। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সেই অভিযোগের সমর্থনে তেমন কোনও তথ্যপ্রমাণ তাদের হাতে আসেনি বলে জানাচ্ছে রেল পুলিশ। তাই এটা খুন, না দুর্ঘটনা, নাকি আত্মহত্যা— সেই ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে। রেল পুলিশের এডিজি মৃত্যুঞ্জয় সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘এখনই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।’’

Advertisement

শনিবার বিধাননগর পুর নিগমের নির্বাচনে ব্যাপক হাঙ্গামার পরের রাতে রেললাইনে উজ্জ্বলের দেহ মেলায় ওই মৃত্যু নিয়ে রহস্য ঘনিয়েছে। সল্টলেকের কে-সি ব্লকের বাসিন্দা উজ্জ্বল ওই ভোটে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে সিপিএম প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ছিলেন। অভিযোগ, সে-দিন প্রচুর বহিরাগত লোক ওই বুথে ঢুকে ছাপ্পা ভোট দেয়। প্রতিবাদ করায় উজ্জ্বলকে বারবার হুমকি দেওয়া হয়। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, ভোট চলাকালীনই মাঝপথে তিনি বুথ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন।

সিপিএমের অভিযোগ, শনিবার বিকেলে উজ্জ্বলকে আবার জোর করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পোলিং এজেন্ট হিসেবে নির্দিষ্ট ফর্মে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরের দিন, রবিবার বাবার সঙ্গে দমদম ক্যান্টনমেন্টে নিজেদের নতুন ফ্ল্যাটে যান ওই যুবক। তার পরে তিনি বাবাকে সল্টলেকে ফিরে যেতে বলেন এবং নিজে সন্ধ্যায় কাজ সেরে বাড়ি ফিরবেন বলে জানান। আর সেই রাতেই বিধাননগর স্টেশন ছাড়িয়ে রেললাইনের উপরে তাঁর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

পুলিশি সূত্রের খবর, মৃত্যুর কারণ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সন্দেহ, দুর্ঘটনায় মারা গিয়ে থাকতে পারেন উজ্জ্বল। আবার আত্মহত্যার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সোমবার তাঁর দেহের ময়না-তদন্তের পুরোটাই ভিডিওয় তুলে রাখা হয়েছে। তাঁর পাকস্থলীতে নেশার কোনও জিনিস পাওয়া যায়নি। এক অফিসারের কথায়, ‘‘আত্মহত্যা করে থাকলেও সেটা প্রমাণ করা মুশকিল হবে। সরাসরি বলা যাবে না। পুরোটাই পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের উপরে নির্ভর করবে।’’ প্রশ্ন উঠছে, বিধাননগর স্টেশনে নেমে সল্টলেকের কে-সি ব্লকের বাড়িতে ফিরতে চাইলে উজ্জ্বল স্টেশনে নেমে রেললাইন ধরে শিয়ালদহের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন কেন? ভোট পর্বে উপর্যুপরি হুমকির মুখে তিনি কি ভীত হয়ে পড়েছিলেন বা অবসাদে ভুগছিলেন? এই ধরনের সব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

উজ্জ্বলের মোবাইলটি পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনাস্থলে একটি মোবাইল ফোনের ব্যাটারি পেয়েছে পুলিশ। উজ্জ্বল যে-মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করতেন, উদয়বাবুর কাছে তার আইএমইআই নম্বর চাওয়া হয়েছে। সেটা পেলে ওই ফোনের কল লিস্ট বার করা সম্ভব হবে।

এ দিন কে-সি ব্লকে উদয়বাবু ও উজ্জ্বলের মা ইলাদেবীর সঙ্গে দেখা করতে যান সিপিএমের নেতানেত্রীরা। পুত্রহারা দম্পতিকে সারা দিন ঘিরে রেখেছিলেন পড়শিরা। স্থানীয় সিপিএম নেত্রী অলকা পাত্র বলেন, ‘‘আমি যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু উজ্জ্বলের মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর মতো মানসিক জোর ছিল না। কী বলব তাঁকে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন