দাগাপুরের একটি বিনোদন পার্কে সিআইআইয়ের বিজনেস মিটে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
উত্তরবঙ্গে যে সমস্ত বিনিয়োগের কথা মুখ্যমন্ত্রী আগে ঘোষণা করেছিলেন সেগুলির কাজ কোথায় কতটা হয়েছে তার কোনও দিশা সরকারের তরফে কেউই দেখালেন না সোমবার উত্তরবঙ্গের শিল্প সম্মেলনে। তবে বেসরকারি উদ্যোগে ১৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে তিনটি শিল্প পার্ক গড়ার প্রস্তাব মিলেছে বলে দাবি করলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
এ দিন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই)-র উদ্যোগে শিলিগুড়ির দাগাপুরে আয়োজিত ‘নর্থ বেঙ্গল বিজনেস সামিট’-এ নতুন ওই তিনটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘তিনটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তোলার প্রকল্প প্রস্তাব পেয়ে রাজ্য তাতে অনুমোদন দিয়েছে।’’ সম্মেলনে ওই তিনটি প্রকল্পের উদ্যোগীদের হাতে নীতিগতভাবে সরকারের অনুমোদনপত্র তুলে দিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করতে বলা হয়।
অন্য দিকে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান থেকে যে ৪২ জন প্রতিনিধি এসেছিলেন, তাঁরা বিনিয়োগের কোনও প্রস্তাব দেননি। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে শিল্পোদ্যোগীদের নিয়ে ‘কনক্লেভ’ করতে মুখ্যমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন। তিনি নিজেও বারবার উত্তরবঙ্গে আসছেন। সে জন্যই এখানে কাজ এগোচ্ছে।’’
যে-তিনটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক হবে, তাতে প্রায় ৫৫ হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে দাবি করা হয়। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পই এখানে গড়ে উঠবে। তার মধ্যে একটি জলপাইগুড়ির চৌভিটা এলাকায়। সেখানে ৩২.৩৭ একর জায়গায় ১৭৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন অনিল অগ্রবাল এবং তাঁর অংশীদাররা। ফুলবাড়ি এলাকায় শিল্পাঙ্গন বলে আরও একটি পার্ক করবেন বীরপাড়ার বাসিন্দা কিসান অগ্রবাল। সেখানে তিনি ৬৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন বলে জানানো হয়েছে। জলপাইগুড়ির সন্ন্যাসীকাটার বিন্নাগুড়ি এলাকায় শিল্পব্রত পার্ক গড়ে তুলবেন মুরারীলাল এবং তাঁর অংশীদাররা। সেখানে ৬৮৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দেন। কিসানবাবু অবশ্য জানিয়েছেন তিনি নিজে ১৬৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। লোহা এবং ম্যাগনেশিয়ামের দুটি কারখানা হওয়ার কথা।
গজলডোবায় যে ট্যুরিজম হাব গড়ে তোলার কথা মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, সেখানে একটি তিনতারা এবং দুটি সাধারণ হোটেল তৈরির জন্য উদ্যোগীরা প্রকল্প গড়তে সরকারের কাছে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির টাকা জমা করেন। সম্মেলনে অমিতবাবুর হাতে তাঁরা তা তুলে দেন। জমি নেওয়া হলেও যাতে না পড়ে না-থাকে, তা নিশ্চিত করতে সকলের সামনেই অর্থমন্ত্রী উদ্যোগীদের আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসা করেছেন, কবে তাঁরা কাজ শুরু করবেন। এই আর্থিক বছরেই তিনতারা হোটেলের কাজ শুরু হবে বলে জানানো হয়। বাকি উদ্যোগীরাও শীঘ্রই কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন।
এ দিন সম্মেলনে উপস্থিত বাংলাদেশের রংপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবুল কাসেম জানান, তাঁদের বিদেশে বিনিয়োগ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই। তবে ভবিষ্যতে সম্ভব হলে নার্সিংহোম, বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে তুলতে বিনিয়োগের কথা জানান পার্থ বসু, আসরাফুল আলমের মতো বাংলাদেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা। অমিত মিত্রকেও তিনি একান্তে সে কথা জানিয়েছেন বলে পার্থবাবু দাবি করেছেন। তাঁরা চান পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্যোগীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহী হোন। আলাদা ভাবে একই কথা জানিয়েছেন ভুটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সাধারণ সচিব পাব শেরিং। তাঁদেরও বিদেশে বিনিয়োগের উপায় নেই। নেপাল থেকে আসা ফেডারেশন অব নেপালিজ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সদস্য কেশব রাজ পাণ্ডে জানান, ভারতের সঙ্গে তাঁদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। রাজনৈতিক কারণে আপাতত সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিছু অবাঞ্ছিত লোক জলঘোলা করতে চাইছে। ভারতের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলিকে তিনি বিষয়টি মেটাতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বিনিয়োগের সম্ভবনা নিয়ে তাঁরাও কিছু জানাতে পারেননি।
সিআইআই-এর আঞ্চলিক অধিকর্তা সৌগত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিনিয়োগের জন্য অনেকেই এগিয়ে আসছেন। ধীরে ধীরে তাঁরা কাজও শুরু করছেন।’’ শিল্পোদ্যোগীদের উৎসাহিত করতে সরকার যে সচেষ্ট, তা বোঝাতে ১৫ জন পুরনো শিল্পোদ্যোগীর হাতে বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ ২ কোটি ১২ লক্ষ ২৬ হাজার ৩৭৫ টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা এ দিন ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী।
গত জানুয়ারি মাসে উত্তরকন্যায় ‘নর্থ বেঙ্গল কলিং’ শিল্প সম্মেলনে উত্তরবঙ্গে ২২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে আরও দুটি শিল্প সম্মেলনে ১৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়। সেগুলির কাজ ঠিক কতটা এগিয়েছে তা নিয়ে অবশ্য ধন্দ রয়েই গিয়েছে। অবশ্য সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান নরেশ অগ্রবালের দাবি, সে সব প্রকল্পের একাংশের কাজ এগিয়েছে।