উপকূলে মাদক রুখতে অস্ত্র জনসংযোগ

টহলদারি আছে, আছে তল্লাশি-অভিযানও। তবুও এ রাজ্যের উপকূলে মাদক পাচারকারীদের গতিবিধি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না গোয়েন্দা, পুলিশ কিংবা উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তারা। এ বার তাই মাদক পাচার রুখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে জনসংযোগকেই হাতিয়ার করতে চাইছেন তাঁরা।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও অপ্রমেয় দত্তগুপ্ত

কলকাতা ও হলদিয়া শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৮:৩৮
Share:

টহলদারি আছে, আছে তল্লাশি-অভিযানও। তবুও এ রাজ্যের উপকূলে মাদক পাচারকারীদের গতিবিধি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না গোয়েন্দা, পুলিশ কিংবা উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তারা। এ বার তাই মাদক পাচার রুখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে জনসংযোগকেই হাতিয়ার করতে চাইছেন তাঁরা।

Advertisement

উপকূলরক্ষী বাহিনী জানাচ্ছে, ভারত-বাংলাদেশ জলপথ সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচারকারীদের গতিবিধি বাড়ছে। সেটা রুখতে নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি), আইবি-সহ একাধিক সংস্থাকে নিয়ে সমন্বয় গড়ে তোলা হচ্ছে। এ নিয়ে সম্প্রতি হলদিয়ায় একটি বৈঠকও হয়েছে। এর পাশাপাশি মাদক পাচারকারীদের রুখতে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দা, মৎস্যজীবী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছেও সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে সমন্বয়ও।

উপকূলরক্ষী বাহিনীর কলকাতা আঞ্চলিক দফতরের মুখপাত্র ডেপুটি কম্যান্ডান্ট অভিনন্দন মিত্র জানান, পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে তাঁরা নিয়মিত টহলদারি ও তল্লাশি চালান। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকারের উপকূলীয় থানাগুলিও নিজেদের এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু এর পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এ নিয়ে সচেতনতা না বাড়লে পুরোপুরি মাদক পাচার রোধ করা যাবে না। সে কারণেই স্থানীয় মৎস্যজীবীদের এ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।

Advertisement

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বাহিনী বা প্রশাসনের জনসংযোগ না থাকলে কতটা খেসারত দিতে হতে পারে, তা বোঝাতে দিয়ে আট বছর আগের একটি ঘটনার কথা বলছেন গোয়েন্দাকর্তারা। ২০০৮ সালে নভেম্বরের এক সন্ধ্যায় মুম্বইয়ে কয়েক জন যুবককে ডিঙি থেকে নামতে দেখেছিলেন এক মৎস্যজীবী। ব্যাপারটি অস্বাভাবিক লাগলেও পুলিশ বা উপকূলরক্ষী বাহিনীকে জানাননি তিনি। যার পরের কয়েক ঘণ্টায় দেশের ইতিহাসে ঘটে গিয়েছিল জঙ্গিহানার নয়া দৃষ্টান্ত। ২৬/১১-র হামলা। ওই ঘটনার পর থেকেই উপকূলীয় নিরাপত্তা ঢেলে সাজার পাশাপাশি জনসংযোগ বাড়াতেও বলা হয়েছিল নিরাপত্তাবাহিনীগুলিকে।

উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, সম্প্রতি মাদক পাচারের চিরাচরিত পথে বদল আসছে। বহু ক্ষেত্রেই স্থলপথের পাশাপাশি তুলনায় কম সুরক্ষিত জলপথকে বেছে নিচ্ছে পাচারকারীরা। ভারত ও বাংলাদেশের জলপথ সীমান্তের ক্ষেত্রে বহু জায়গাতেই নিরাপত্তার ফাঁক রয়েছে। সে কারণে পাচারকারীরা এই পথ বেছে নিচ্ছে। চোরাপথে আমদানি-রফতানি হচ্ছে হেরোইন, গাঁজা, ব্রাউন সুগার বা কাশির সিরাপের।

উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক কর্তা বলছেন, এ রাজ্যে উপকূলীয় এলাকার গা ঘেঁষে ঘন জনবসতি রয়েছে। ভারত এবং এ রাজ্যের লোকজনের মধ্যে শারীরিক গঠন, ভাষা, আচার-ব্যবহারে মিলও রয়েছে। ফলে পাচারকারীরা সহজেই উপকূলীয় এলাকার লোকজনের সঙ্গে মিশে যেতে পারছে কিংবা সহজেই তাদের কাজে লাগাতে পারছে। এরই পাল্টা হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দাদেরই কাজে লাগাতে চাওয়া হচ্ছে। যার মধ্যে সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে সাগরের একেবারে পাড়ে থাকা মৎস্যজীবীদের। ‘‘ওঁরা যেমন ডাঙায় থাকেন, তেমন সমুদ্রেও যান। ফলে উপকূলীয় এলাকার সব থেকে বেশি জানেন ওঁরাই,’’ বলছেন এক উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তা।

মৎস্যজীবীদের অনেকেই বলছেন, দেশের নিরাপত্তার খাতিরে এমন সাহায্য তাঁরা নিশ্চয়ই করবেন। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেরাও সমস্যায় পড়ছেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (মৎস্য) দেবব্রত দাস বলছেন, বায়োমেট্রিক কার্ড না থাকায় অনেক সময় মৎস্যজীবীদের পরিচিতি নিয়েই সমস্যা হচ্ছে। আগামী ১ জুলাই থেকে এই বায়োমেট্রিক কার্ডের কাজ শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন