উভয় সঙ্কটেও ফের মুখ বন্ধের চেষ্টা তৃণমূলে

বারেবারেই চেষ্টা হয়েছে এবং বিফলে গিয়েছে! তবু দলের মধ্যে বিদ্রোহে লাগাম পরাতে ফের সক্রিয় হতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এবং এ বারও তার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থাকছে! দলের বিধায়ক-সাংসদদের প্রকাশ্যে মুখ খুলে বিদ্রোহ ঘোষণার হিড়িকে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেত্রী চাইছেন শৃঙ্খলার বার্তা দিতে। তাঁরই পরামর্শে সম্ভবত বুধবার বসতে চলেছে দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠক। দলের একাধিক বিধায়ক ও সাংসদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হবে সেখানে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫১
Share:

বারেবারেই চেষ্টা হয়েছে এবং বিফলে গিয়েছে! তবু দলের মধ্যে বিদ্রোহে লাগাম পরাতে ফের সক্রিয় হতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এবং এ বারও তার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থাকছে!

Advertisement

দলের বিধায়ক-সাংসদদের প্রকাশ্যে মুখ খুলে বিদ্রোহ ঘোষণার হিড়িকে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেত্রী চাইছেন শৃঙ্খলার বার্তা দিতে। তাঁরই পরামর্শে সম্ভবত বুধবার বসতে চলেছে দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠক। দলের একাধিক বিধায়ক ও সাংসদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হবে সেখানে। শাসক দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “শুধু সংবাদমাধ্যমের কাছে অবাঞ্ছিত মন্তব্য করাই নয়, আরও কিছু অভিযোগ বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে জমা পড়েছে। সব কিছুই বিবেচনা করা হবে।” দলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন রবিবার আরও এক ধাপ এগিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন, “সংবাদের শিরোনামে আসার জন্য দু-এক জন কিছু মন্তব্য করে পরিস্থিতি জটিল করছেন। শীঘ্রই দল এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। কাউকে কাউকে সাসপেন্ড করা হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই!”

কিন্তু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত দমন করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে তৃণমূলের অন্দরেই। অতীতে বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডেকে দলীয় বিষয়ে বাইরে মুখ খুলতে নিষেধ করার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। দলীয় সূত্রেরই খবর, এখন তৃণমূলের কেউ কেউ বরং চাইছেন দল তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিক! তাতে তাঁদের অন্য দলে (আসলে বিজেপি) যেতে সুবিধা হবে! আবার তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন, কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হলে মনে হবে, দলে শৃঙ্খলার কোনও বালাই নেই। তখন আরও বেশি করে বিশৃঙ্খলা বাড়বে। তাই মরিয়া হয়েই শৃঙ্খলারক্ষার চেষ্টা ফের করতে চাইছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সীরা। কিন্তু উভয় সঙ্কট থেকে মুক্তির ইঙ্গিত তাতে মিলছে না!

Advertisement

গত কয়েক দিনে সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী বা দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন ছিলেন উত্তরবঙ্গ সফরে। শনিবার তিনি কলকাতায় ফেরার দিনই আবার বিদ্রোহ করে বসেছেন বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত! তাঁর বক্তব্যেই প্রবল ক্ষুব্ধ হয়েছেন মমতা। সরস্বতী পুজো উপলক্ষে কালীঘাটে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিয়ে রবিবারের ঘরোয়া আসর না বসলেও রাজ্য নেতাদের কাছে নিজের মনোভাব গোপন করেননি মুখ্যমন্ত্রী। তার জেরেই ফের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি সক্রিয় হয়েছে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “বিধায়ক স্বপন ঘোষ তা-ও অভিযোগ জানিয়ে দলকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু সব্যসাচীর মতো নেতারা অতীতে সতর্কিত হয়েও দলকে অহেতুক বিড়ম্বনায় ফেলছেন। এই প্রবণতা বন্ধ হওয়া দরকার!”

পূর্বস্থলীর বিধায়ক তপনবাবু অতীতে দলকে চিঠি দিয়ে ‘বিচার’ না পেয়েই বিদ্রোহী হয়েছিলেন। আবার দেবব্রতবাবু নিজের মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে বলে দাবি করেও পুরোপুরি দলের লাইনে হাঁটেননি! এমন অগ্নিগর্ভ অবস্থায় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি জল ঢালতে পারবে কি না, প্রশ্ন আছে দলেই! যে কারণে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও কটাক্ষ করেছেন, “সারদা বা অন্যান্য জায়গা থেকে তৃণমূলের কিছু নেতা বেশি ননী-ক্ষীর খেয়েছেন! যাঁরা কম ননী-ক্ষীর পেয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে বাকিদের বিরোধ স্বাভাবিক!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন