বরবটি সাধারণত খরিফ মরসুমে ভাল হয়। কিন্তু দিবস নিরপেক্ষ জাত বছরের যে কোনও সময়ে চাষ করা যায় এবং এই সব্জির বছরভর চাহিদা থাকে। এই চাষ করলে মাটির উর্বরতাও বাড়ে। খরিফ মরসুমের (মার্চ-সেপ্টেম্বর) চাষটা একটু আগে করলে বাজারে ভাল দাম পাওয়া যায়। খরিফ ও প্রাক খরিফে চাষ করার জন্য পুসা ফাল্গুনী, পুসা দোফসলী, পুসা বর্ষাতি, অর্ক গরিমা ভাল জাত।
জমি ও মাটি
প্রায় সব ধরনের মাটিতে বরবটি চাষ হলেও দোঁয়াশ মাটিই ভাল। সামান্য অম্ল মাটিতে এই চাষ হলেও ক্ষার মাটিতে ভাল বাড়ে না। মাটিতে উপযুক্ত পরিমাণে জৈব সার এবং পাতাপচা সার ব্যবহার করা দরকার। জলনিকাশি নালা তৈরি করতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় জল না জমে।
জমি তৈরি
বীজ বোনার আগে জমিতে ৩-৪টি চাষ দিয়ে এবং মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও মোলায়েম করে নিতে হবে। তারপর নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্ত করতে হবে। প্রতিটি গর্তে ৩-৫ কেজি পচা ঝুরঝুরে গোবর সার, ৭৫ গ্রাম এসএসপি, ১০০ গ্রাম নিমখোল দিয়ে ভাল ভাবে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে।
বীজ বোনা
পশু খাদ্য বা সবুজ সারের জন্য বরবটি চাষ করলে বীজ হাতে ছিটিয়ে বোনা যায়। তবে সব্জি হিসাবে চাষ করলে সারিতে বুনতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১.৫ মিটার। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১.৫ ফুট। বোনার আগে বীজগুলো ভাল ভাবে শোধন করে নিতে হবে। এর জন্য কার্বেন্ডাজিম ৫০% ডব্লুপি এক গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে তাতে বীজগুলি আধ-এক ঘণ্টা ডুবিয়ে রেখে জমিতে বুনতে হবে। তারপর প্রয়োজন মতো জলসেচ দিতে হবে।
সার প্রয়োগ
এই জাতীয় ফসলে নাইট্রোজেনঘটিত সার কম প্রয়োগ করা হয়। কারণ এরা পরিবেশের নাইট্রোজেন মাটিতে আবদ্ধ করে। চারার উচ্চতা ১৫-২০ সেমি হলে মাচা দিতে হবে। এরপর চাপান সার হিসাবে বিঘা প্রতি ৫ কেজি ডিএপি এবং পটাশ ৬ কেজি ভাল করে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় রিং টেনে প্রয়োগ করতে হবে। যদি অণুখাদ্যের অভাব হয়, তা হলে প্রয়োজন মতো অণুখাদ্যের মিশ্রণ ২ গ্রাম প্রতি লিটার হিসাবে জলে গুলে পাতায় স্প্রে করতে হবে। প্রয়োজন মতো জলসেচ দেওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে গাছের গোড়ায় যেন জল না জমে। গাছের চারপাশ আগাছমুক্ত রাখতে হবে।
ফসল তোলা
বীজ বোনার দু’মাস পরে ফসল আসে। কচি অবস্থাতেই বরবটি তোলা যায়। কারণ বেশি পুষ্ট হলে সব্জি হিসাবে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। আর বীজের জন্য শুঁটি সম্পূর্ণ পেকে গেলে সংগ্রহ করতে হবে। তবে শুঁটি এক সঙ্গে পাকে না। কয়েক বারে সংগ্রহ করতে হবে।
লেখিকা মালদহ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ।