লগ্নি সংস্থা এমপিএসের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করলেন দুর্গাপুরের বেশ কিছু আমানতকারী। সোমবার নিউটাউনশিপ থানায় ওই সংস্থার কর্ণধার প্রমথনাথ মান্না, পাঁচ ডিরেক্টর এবং পরিচালন মণ্ডলীর ৯ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে মাসে মাসে টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। মেয়াদ শেষেও আমানত ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে।
এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ জনা ৫০ আমানতকারী অভিযোগপত্র জমা দেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়েছে। অভিযোগকারী শ্রীনগরপল্লির বাসিন্দা অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে মাসিক ক্ষুদ্র সঞ্চয় এবং স্থায়ী আমানতে মোট ৬ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা লগ্নি করেছিলেন। গত বছর জুলাই থেকে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের মাসিক টাকা ফেরত বন্ধ। স্থায়ী আমানত এ বছর অক্টোবরে ফেরত পাওয়ার কথা ছিল। তা মেলেনি। তাঁর দাবি, “টাকার অভাবে এক মেয়ের উচ্চশিক্ষা, আর এক মেয়ের বিয়ে আটকে গিয়েছে। চরম বিপাকে পড়েছি।” আর এক অভিযোগকারী ভিকে নগর, এমএএমসি এলাকার তাপসকুমার বাগচি জানান, ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে তিনি ২ লক্ষ টাকা লগ্নি করেছিলেন। গত বছর অক্টোবর থেকে টাকা ফেরত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁর দাবি, “প্রশাসন ওই সংস্থার কর্তাদের ধরে আমার মতো হাজার-হাজার আমানতকারীর টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরে বেঙ্গল অম্বুজা এলাকায় এমপিএস অফিস খুলেছিল। এজেন্টরা জানান, এক সময়ে বর্ধমান ছাড়াও বীরভূম ও বাঁকুড়া জেলার কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত হত দুর্গাপুর থেকে। পরে অবশ্য আসানসোল, সিউড়ি, বাঁকুড়ায় আলাদা অফিস হয়। কয়েক মাস আগে অভিযোগ পেয়ে দুর্গাপুরের অফিসটি ‘সিল’ করে দেয় পুলিশ। তবে আসানসোলে এখনও অফিস চলছে বলে দাবি এজেন্টদের। তাঁদের আরও দাবি, সংস্থার আমানতের এক তৃতীয়াংশ উঠেছিল দুর্গাপুর থেকে। এখানে আমানতকারী বেশ কয়েক হাজার। সময়ে টাকা ফেরত না পেয়ে তাঁরা এজেন্টদের ধরেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কার্যত গা-ঢাকা দেন অনেক এজেন্ট। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সংস্থার কর্ণধার প্রমথনাথবাবু এবং এক কর্তাকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরে তৎপর হয়ে ওঠেন দুর্গাপুরের আমানতকারীরা। দুর্গাপুরে দু’টি বৈঠক করে পুজোর দিনগুলিতে এজেন্টদের বাড়ির সামনে ধর্নায় বসার সিদ্ধান্তও নেন তাঁরা। তবে উৎসবের সময়ে অশান্তি ছড়াতে পারে, পুলিশের এমন আশঙ্কা জানানোয় শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসেন আমানতকারীরা। শেষে এ দিন তাঁরা থানায় অভিযোগ করেন।
সংস্থার বর্তমান ডিরেক্টর অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দু’জনেই দাবি করেন, আমানতকারীরা কেউ প্রতারিত হবেন না। তাঁরা জানান, আমানতকারীরা মোট ফেরত পাবেন ১৮০০ কোটি টাকা। সেখানে সংস্থার সম্পত্তির পরিমাণ ২৯৪৮ কোটি টাকা। সেবি এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের সম্পত্তি ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সংস্থার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। রেহাই মিললেই দ্রুত আমানকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে অমিয়বাবুদের দাবি। তাঁদের আশ্বাস, “প্রত্যেক আমানতকারীর অর্থ সুরক্ষিত রয়েছে। কেউ বঞ্চিত হবেন না।”