কোন জাদুতে বিরোধী ভ্যানিশ, জানেন পি সি

ম্যাজিকের মঞ্চে প্রচার নয়! প্রচারের মঞ্চে ম্যাজিক নয়! বরং জনগণই এ বার ম্যাজিক দেখাবেন জাদু-সম্রাটকে! এই রকমটাই মনে করছেন লোকসভা ভোটে বারাসতের বিজেপি প্রার্থী প্রদীপ চন্দ্র সরকার।

Advertisement

সুকান্ত সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৪ ০৯:২৬
Share:

ম্যাজিকের মঞ্চে প্রচার নয়! প্রচারের মঞ্চে ম্যাজিক নয়!

Advertisement

বরং জনগণই এ বার ম্যাজিক দেখাবেন জাদু-সম্রাটকে! এই রকমটাই মনে করছেন লোকসভা ভোটে বারাসতের বিজেপি প্রার্থী প্রদীপ চন্দ্র সরকার। লোকে যাঁকে চেনে জাদুকর পি সি সরকার (জুনিয়র) নামে। প্রকৃতপক্ষে দলে যোগ দেওয়ার আগেই যাঁকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি! দলে যোগ দেওয়ার মিনিট পনেরো পরে এক বন্ধু ফোনে পিসি সরকারকে জানান তাঁর প্রার্থী হওয়ার কথা। “শুনে প্রথমে একটু অবাকই হয়েছিলাম! আমি তো মিনিট কয়েক আগে দলের সদস্য হলাম!” শুক্রবার কবুল করলেন জাদু-সম্রাট। তাঁর কথায়, “বৃহস্পতিবার রাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে দলে যোগ দিলেও ব্রিগেডে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলার পরেই মানসিক ভাবে বিজেপি-র অংশ হয়েছিলাম। তবে আমাকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত আমি দলে যোগ দেওয়ার সময়েও জানতাম না!”

বিজেপি-র প্রথম তালিকার আর এক তারকা প্রার্থী জর্জ বেকার আপাতত অপেক্ষা করছেন দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের জন্য। তিনি ফিরলে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে প্রচারের কৌশল ঠিক করবেন হাওড়ার বিজেপি প্রার্থী। বর্ষীয়ান অভিনেতার বক্তব্য, “বহু বছর ধরে কংগ্রেসকে সমর্থন করেছি। কিন্তু এখন আমি হতাশ! আর তৃণমূল বা সিপিএম তো দিল্লিতে ক্ষমতায় আসবে না। আমি জনপ্রতিনিধি হিসাবে রাজ্যের জন্য কাজ করতে চাই। তাই বিজেপি-তে এসেছি।”

Advertisement

জর্জের মতোই প্রার্থী হওয়ার খবরে খুশি জাদুকর পি সি। বস্তুত, বারাসত কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে বাড়তি খুশি তিনি! কেন? জাদুকরের জবাব, “আমি হলাম ‘উডেন’ বাঙাল! এক্কেবারে কাঠ বাঙাল! পূর্ব বঙ্গের টাঙ্গাইলের আশকপুর গ্রামে আমার জন্ম। আমি জানি, বারাসতের অধিকাংশ মানুষের শিকড় রয়েছে পূর্ববঙ্গে। তাই বারাসতের লোকজনের সঙ্গে আমার আত্মিক যোগাযোগে কোনও

সমস্যাই হবে না।” জাদুকাঠি ছেড়ে পদ্মফুলের পতাকা, এই ভূমিকায় তাঁর ভক্ত বা ফ্যানেদের কারও কারও খারাপ লাগতে পারে না কি? আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই জাদুকরের সরস উত্তর, “জানি আমার ফ্যানেদের মধ্যে সব ধরনের রাজনৈতিক দলের সমর্থক রয়েছেন। তবে তাঁরা কেউই আমার এই সিদ্ধান্তে অখুশি হবেন না। যদি কেউ হন, তিনি তা হলে ভাতের ফ্যান!”

অভিনেতা জর্জের শু্যটিং-সূচি আপাতত ভোট-প্রচারের সঙ্গে সংঘাত বাধাচ্ছে না। কিন্তু পি সি-র শো থেকে পিছিয়ে আসার উপায় নেই। ভোটে দাঁড়ালেও পেশা থেকে সরবেন না, জানিয়ে দিচ্ছেন পি সি। আজ, শনিবার ভোরের বিমানে চলে যাচ্ছেন গুয়াহাটি। অসমের বিভিন্ন জায়গায় ম্যাজিকের শো আগে থেকেই বুক করা। জাদুকরের কথায়, “কথা দিলে কথা তো রাখতেই হবে। আর এটা আমার রুটি-রুজির ব্যাপার। পূর্বনির্ধারিত সব ক’টি শো-ই করব।” আগামী ১৭ এপ্রিল বারুইপুরে শো করার পরে ১৮ এপ্রিল থেকে ২৭ মে প্রচার এবং ভোট-সংক্রান্ত কাজকর্ম করতে চান তিনি। তার পরে ২৮ মে থেকে ফের শো’য়ের প্রস্তুতি। পি সি-র মন্তব্য, “২৯ মে চন্দননগরে ইন্দ্রজাল দেখাতে হবে!”

ইন্দ্রজালের বিনোদনের বাইরে মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদেই রাজনীতির মঞ্চে এসেছেন। পি সি-র বক্তব্য, “ব্রিগেডে মোদীকে প্রশ্ন করেছিলাম, সত্যি কথা বলুন তো, আপনি প্রধানমন্ত্রী হলে এ রাজ্যের জন্য কী করবেন? সত্যি না বললে আমি কিন্তু বুঝতে পারি! কারণ শুধু জাদুকর নই, আমি মনোবিদও!” উত্তরে মোদী তাঁকে জানিয়েছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে রাজ্য থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সব প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠাবেন, দ্রুত তিনি তা অনুমোদন করবেন। কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে এ রাজ্যের বিশাল ঋণও মকুব করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মোদী দিয়েছেন বলে জাদুকরের দাবি।

বেশ কয়েক বছর আগে ভোটার লিস্ট থেকে সপরিবার নাম বাদ পড়ায় প্রথমে খুব হতাশ হয়েছিলেন। পরে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, ওটা ছিল ভোটের ম্যাজিক! ইন্দ্রজালে দূরপাল্লায় ট্রেন ভ্যানিশ করে দিয়েছেন। ভোটের ময়দানে বিরোধীদের ভ্যানিশ করার জাদু কি তাঁর জানা আছে? “আছে! একটা মন্ত্র দিয়েই ভ্যানিশ করে দেওয়া যায়। শুধু ভালবাসা!”

রহস্য ভাঙলেন জাদু-সম্রাট!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন