সারদা কেলেঙ্কারি

কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত চাইবেন মুকুল

তদন্ত চলছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। আর তারই ধাক্কায় বেসামাল তৃণমূলের এখন আর্জি, সারদা তদন্ত হোক সুপ্রিম কোর্টেরই নজরদারিতে! এ ব্যাপারে নজির হিসেবে তারা সামনে রাখতে চাইছে কয়লাখনি বণ্টন মামলার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিকে। তৃণমূল সূত্রে খবর আজ, সোমবার শীর্ষ আদালতে এ নিয়ে একটি স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন বা এসএলপি দাখিল করা হবে দলের ঘনিষ্ঠ কাউকে দিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১১
Share:

তদন্ত চলছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। আর তারই ধাক্কায় বেসামাল তৃণমূলের এখন আর্জি, সারদা তদন্ত হোক সুপ্রিম কোর্টেরই নজরদারিতে! এ ব্যাপারে নজির হিসেবে তারা সামনে রাখতে চাইছে কয়লাখনি বণ্টন মামলার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিকে।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে খবর আজ, সোমবার শীর্ষ আদালতে এ নিয়ে একটি স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন বা এসএলপি দাখিল করা হবে দলের ঘনিষ্ঠ কাউকে দিয়ে। দলেরই একটি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের গ্রেফতারি এড়ানোই এই আর্জির মুল লক্ষ্য। এবং এই কাজের জন্যই গত ক’দিন ধরে দিল্লিতে হত্যে দিয়ে রয়েছেন উদ্বিগ্ন মুকুল। শনিবার যাননি দলের কোর কমিটির বৈঠকেও।

ধর্মতলায় গত ৩০ নভেম্বরের সভায় বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ ঘোষণা করেছিলেন, “২০১৪-য় ভাগ মদন ভাগ, ২০১৫-য় ভাগ মুকুল ভাগ আর ২০১৬-য় ভাগ মমতা ভাগ।” ২০১৪-তেই (গত ১২ ডিসেম্বর) গ্রেফতার হয়েছেন মদন মিত্র। নতুন বছরের শুরুতে দলে ও বিভিন্ন মহলে তাই জল্পনা, তবে কি এ বার মুকুল রায়? যার রেশ গিয়ে পড়েছে দলের ওই সর্বভারতীয় নেতা তথা দলের শীর্ষ নেতৃত্বে উপরেও।

Advertisement

এই অবস্থায় শীর্ষ আদালতে মূলত দু’টি আর্জি রাখা হবে তৃণমূলের তরফে। এক, সারদা তদন্তে নজরদারির জন্য সুপ্রিম কোর্ট কোনও বিচারপতিকে নিয়োগ করুক। দুই, সিবিআই বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, যে কোনও একট সংস্থা তদন্ত করুক। কারণ, দু’টি সংস্থা সমান্তরাল ভাবে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।

দলীয় সূত্রের খবর শীর্ষ আদালতে তৃণমূলের তরফে অভিযোগ আনা হবে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাজ করছে সিবিআই। সরাসরি কোনও প্রমাণ না-থাকা সত্ত্বেও গ্রেফতার করা হচ্ছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি যাঁদের গ্রেফতার করতে চায়, তাঁদের সম্পর্কে তথ্যপ্রমাণ ও চার্জশিট শীর্ষ আদালতে পেশ করুক গোপনে। আদালতের নির্দেশ পেলে তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হোক।

কয়লাখনি বণ্টন নিয়ে দুর্নীতির মামলায় ঠিক এই রকম নির্দেশই দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই নজির তুলে ধরা হবে তৃণমূলের আবেদনে। দলীয় সূত্রের খবর, এই মামলায় রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয় পক্ষকেই যুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি, মামলায় ইতিবাচক ফল পেতে কপিল সিব্বল কিংবা রাম জেঠমলানীর মতো পোড়খাওয়া আইনজীবীর দ্বারস্থ হতে চলেছেন মুকুল রায়রা। তবে যাঁকে নিয়ে তৃণমূলে এই তৎপরতা, রবিবার সারা দিনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

সিবিআই অবশ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেফতার করার অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের বক্তব্য, সারদা কেলেঙ্কারির পিছনে কোনও বড়সড় ষড়যন্ত্র ছিল কি না, থাকলে কারা তাতে জড়িত সেটাই তদন্ত করে দেখতে বলেছে শীর্ষ আদালত। ওই সব ব্যক্তিদের বেশির ভাগই যথেষ্ট প্রভাবশালী। মামলায় দোষী সাব্যস্ত করার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করার আগেই তাঁদের গ্রেফতার করা জরুরি। নয়তো ওই সব প্রমাণ লোপাট হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া, এ ধরনের আর্থিক মামলায় ষড়যন্ত্রে জড়িত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে বহু তথ্য প্রকাশ্যে আসে। সেগুলির ভিত্তিতে নতুন করে সূত্রের খোঁজ পাওয়া যায়। যে ভাবে সৃঞ্জয় বসু, মদন মিত্রকে হেফাজতে নেওয়ার পরে তাঁদের থেকে তৃণমূলের এক সর্বভারতীয় নেতার সারদায় জড়িত থাকা নিয়ে তথ্য হাতে এসেছে সিবিআইয়ের।

সারদা-তদন্ত নিয়ে দল যে এ বার আইনি লড়াইয়ে নামছে, এ দিন তার ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর কথায়, “সারদা কাণ্ডে সিবিআই-কে যে ভাবে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে এটা স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত, এই প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমরা রাজনৈতিক এবং আইনি ভাবে লড়াই করব। সংসদীয় গণতন্ত্রে যে পথে সম্ভব, সব ভাবেই প্রতিরোধ করব।” দলের এক শীর্ষ স্তরের নেতার কথায়, “সিদ্ধার্থনাথ সিংহ ঘোষণা করে যাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই যে ভাবে মদনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, মুকুল তাতে খুবই চিন্তিত। সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে এটা স্পষ্ট, খুব দ্রুত সারদা তদন্তের জাল গোটাতে চাইছে সিবিআই। সে কারণেই লড়াইটা শীর্ষ আদালতে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্যে তৎপর মুকুল।” শুধু মুকুল নয়, সারদা তদন্তের ধাক্কায় বেসামাল তৃণমূল এখন এই এসএলপি-কে আঁকড়েই অক্সিজেন খুঁজতে চাইছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন