কারও প্যাকেটে কেক-লাড্ডু, কেউ সারছেন বিস্কুটে

সবার আগে দেব। তার পরে মমতা। আর একেবারে পিছনের সারিতে রয়েছেন মুনমুন। না, ভোটের লড়াইয়ে নয়। কর্মিসভায় টিফিনের প্যাকেটের নিরিখে এই ফলাফল। দিন কয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরে অরবিন্দ স্টেডিয়ামে দেব-সন্ধ্যা কর্মিসভার শেষে কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল বেশ বড় সাইজের টিফিনের প্যাকেট।

Advertisement

গৌরব বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২৫
Share:

কৃষ্ণনগরে মমতার সভায় ছোড়া টিফিনের প্যাকেট। —ফাইল চিত্র।

সবার আগে দেব। তার পরে মমতা। আর একেবারে পিছনের সারিতে রয়েছেন মুনমুন।

Advertisement

না, ভোটের লড়াইয়ে নয়। কর্মিসভায় টিফিনের প্যাকেটের নিরিখে এই ফলাফল।

দিন কয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরে অরবিন্দ স্টেডিয়ামে দেব-সন্ধ্যা কর্মিসভার শেষে কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল বেশ বড় সাইজের টিফিনের প্যাকেট। পাউরুটি, ডিম, কেক ও একটি করে লাড্ডু ছিল সেই প্যাকেটে। মন ও পেটের খিদে দুই-ই মিটেছিল। হইহই করে বাড়ি ফিরেছিলেন কর্মীরা।

Advertisement

সম্প্রতি মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ায় কর্মিসভা সেরে ফিরলেন তৃণমূলের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুর্শিদাবাদে তেমন কোনও আয়োজন না থাকলেও মালদহের মেনুতে ছিল ভুজিয়া, মিষ্টি ও কচুরি। আর নদিয়াতে ডিম, সন্দেশ ও পাউরুটি।

কিন্তু শ্রীমতী দেববর্মা ওরফে মুনমুন সেনের সভায় তৃণমূল ফেরাল শুধু মুখে। বাঁকুড়া স্টেডিয়ামে বিরাট ওই কর্মিসভায় জুটল ফক্কা। মুনমুন ও মঞ্চের উপরে যাঁরা ছিলেন শুধু তাঁদের জন্যই ছিল চা-বিস্কুটের ব্যবস্থা। দূরদুরান্ত থেকে আসা কর্মীরা হোটেলে খেয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

ভোটের বাদ্যি বাজতেই প্রায় সব দল কর্মিসভা শুরু করেছে। বালুরঘাট কেন্দ্রে অর্পিতা ঘোষ সম্প্রতি কর্মিসভা করেছেন গঙ্গারামপুরে। প্রায় ৮০ জন কর্মীর খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল স্থানীয় একটি হোটেলে। মেনুতে ছিল ভাত, সঙ্গে মাছ কিংবা ডিম। দার্জিলিঙে ভাইচুং এর কর্মিসভায় মেনুতে ছিল রুটি, ডিম, তরকা। কর্মীদের জন্য কোনও দল ‘সামান্য’ জলযোগের ব্যবস্থা করছে। কোনও দল আবার চা-বিস্কুটেই চালিয়ে দিচ্ছে ঘণ্টা দেড়েকের সভা। নদিয়ায় যেমন সিপিএম এবং বিজেপি চা-বিস্কুটেই ভরসা রেখেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে কংগ্রেস, সিপিএম কিংবা বিজেপিও টিফিনের ব্যবস্থা তেমন ভাবে রাখছে না। তাঁরাও আপাতত আস্থা রাখছেন চা-বিস্কুটে।

কিন্তু চা-বিস্কুটের সঙ্গে কি আর টিফিনের তুলনা চলে? নদিয়ার করিমপুর এলাকা থেকে মমতার কর্মিসভায় এসেছিলেন কার্তিক মণ্ডল, অসিত বিশ্বাস, সঞ্জয় হালদাররা। তাঁরা বলছেন, “ধুস, চা তো চাইলেই মেলে। কিন্তু বাক্সবন্দি টিফিনের মজাই আলাদা। ওই ভিড়ের মধ্যে অনেকে হয়তো টিফিনও পায়নি। কিন্তু তাতে কী হয়েছে? যদি হও সুজন, এক টিফিনেই দু’জন।” মেদিনীপুরের সৌমাশিস পাল, তন্ময় বসাকরা তো আবার রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। তাঁরা বলছেন, “জিও দেব! দেব ও তার সভার টিফিন দুইয়েরই কোনও জবাব নেই।”

কিন্তু টিফিন হোক বা চা-বিস্কুট, তার জন্য খরচ তো হচ্ছে। সে খরচের হিসেব রাজনৈতিক দলগুলি জানাচ্ছে তো কমিশনকে? রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও দল প্রচার কিংবা সভাতে কী খরচ করছে সেটা দেখার জন্য কমিশনের নজরদারি টিম রয়েছে। সেই টিমের প্রতিনিধিরা সব হিসেব রাখছেন। লোকসভা নির্বাচনে এক জন প্রার্থী ৭০ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারেন। ফলে যাই হোক না কেন, সেই টাকার মধ্যেই ধরা হবে। নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “সভার অনুমতি নেওয়ার সময়ে সেই দলের কাছ থেকে তাদের সম্ভাব্য খরচও আমরা জেনে নিচ্ছি।”

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত ঘোষ কিংবা নদিয়ার জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলছেন, “সমস্ত খরচের হিসেব আমরাও রাখছি। প্রয়োজন হলে তা কমিশনকেও জানিয়ে দেওয়া হবে।” নদিয়ায় সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলছেন, “টিফিনের ব্যবস্থা আমরা কোথাও রাখছি না। বড়জোর চা-বিস্কুট। তার খরচের খতিয়ান আমরা রাখছি।” হাসতে হাসতে নদিয়ার এক বিজেপি নেতা বলছেন, “টিফিনে কী যায় আসে। এখন চায়ে পে চর্চাতেই জোর বেশি।”

মুখ চালাতে

• ১০০ কাপ চায়ের জন্য খরচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা।

• বিস্কুট প্রতিটি ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা।

• পাউরুটি, ডিম, কেক, মিষ্টির প্যাকেটে খরচ গড়ে ১৬-২০ টাকা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement