হতবাক খাতড়া

কোরপান খুনে গ্রেফতার ঘরের ছেলে

ছেলের হস্টেলে কোরপান শা’কে পিটিয়ে মারার খবরটা জানার পরেই দুর্ভাবনায় পড়ে গিয়েছিল খাতড়ার বিদ্যাসাগর পল্লির মণ্ডল পরিবার। কিন্তু ছেলে সে দিন আশ্বস্ত করে জানিয়েছিলেন, তিনি ওই ঘটনায় জড়িত নন। তবে হস্টেলের সবাই খুব উদ্বেগে রয়েছেন। ছাত্রেরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছেন। কিন্তু সেই ছেলে অরিজিৎ মণ্ডলকেই পুলিশ কোরপান শাহকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে শুনে অবাক হয়ে গিয়েছেন তাঁর পরিবার। হতবাক হয়ে গিয়েছেন অরিজিতের পরিজনেরাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা খাতড়া

খাতড়া শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৮
Share:

ছেলের হস্টেলে কোরপান শা’কে পিটিয়ে মারার খবরটা জানার পরেই দুর্ভাবনায় পড়ে গিয়েছিল খাতড়ার বিদ্যাসাগর পল্লির মণ্ডল পরিবার। কিন্তু ছেলে সে দিন আশ্বস্ত করে জানিয়েছিলেন, তিনি ওই ঘটনায় জড়িত নন। তবে হস্টেলের সবাই খুব উদ্বেগে রয়েছেন। ছাত্রেরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছেন। কিন্তু সেই ছেলে অরিজিৎ মণ্ডলকেই পুলিশ কোরপান শাহকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে শুনে অবাক হয়ে গিয়েছেন তাঁর পরিবার। হতবাক হয়ে গিয়েছেন অরিজিতের পরিজনেরাও।

Advertisement

মঙ্গলবার নিজের বাড়ির দরজার সামনে অরিজিতের বাবা স্বপন মণ্ডল বলেন, “ওই খুনের পরেই ছেলে বলেছিল, সে জড়িত নয়। কিন্তু কেন যে পুলিশ ওকে ধরল ভেবে পাচ্ছি না। ও নির্দোষ।” কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হস্টেলে গণপ্রহারে নিহত কোরপান শা খুনের অভিযোগে ধৃত ডাক্তারি ছাত্র অরিজিৎ সম্পর্কে তাঁর পড়শিরা মন্তব্য করেন, তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। শান্ত ও লাজুক স্বভাবের। কোনও দিন ঝগড়া-বিবাদেও জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়নি।

এ দিন শিয়ালদহ আদালতে অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক অর্পিতা ঘোষের এজলাসে ওই খুনের মামলায় অরিজিতের সঙ্গে ধৃত আরও তিন হবু চিকিৎসক জাভেদ আখতার, অনুরাগ সরকার, ইউসুফ জামালকে তোলা হয়। বিচারক তাঁদের আগামী ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেন।

Advertisement

খাতড়া শহরের বিদ্যাসাগর পল্লিতে অরিজিতের বাড়ি। আদিবাড়ি সারেঙ্গার পানচূড় গ্রামে। বাবা একটি বিমা সংস্থার বড় এজেন্ট। দু’ভাইয়ের মতো অরিজিৎ ছোট। দাদা অরিন্দমও বাবার মতোই বিমা সংস্থার এজেন্ট। পরিবার সূত্রে জানা যায়, খাতড়া কংসাবতী হাইস্কুল থেকে স্টার মার্কস নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন অরিজিৎ। এরপর বিজ্ঞান বিভাগে খাতড়া হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করেন তিনি। স্কুলে বরাবর প্রথম অথবা দ্বিতীয় স্থান পাওয়া অরিজিৎ ২০০৯ সালে উচ্চমাধ্যমিকের পরে জয়েন্টের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেছিলেন। চিকিৎসক হওয়া তাঁর ইচ্ছা ছিল। সে বার উত্তীর্ণ হতে না পারলেও পরের বছর জয়েন্টে মেডিক্যালে তার র্যাঙ্ক হয় ৯৯। এনআরএসে তিনি ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি মেডিক্যালের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

বাড়ির ছেলেকে পুলিশ যে ওই খুনের ঘটনায় ডেকেছে সে কথা রবিবারই জেনেছিলেন মণ্ডল পরিবারের সদস্যেরা। তারপর থেকেই অরিজিতের বাবা, মা ও দাদা উৎকন্ঠায় ছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় তাঁরা টিভিতে ছেলের গ্রেফতারের খবর জানার পর থেকেই মুষড়ে পড়েছেন। মঙ্গলবার ভোরে কলকাতার রওনা দেন অরিন্দম। এ দিন সকালে বিদ্যাসাগর পল্লির মণ্ডল বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় দু’তলা বাড়িটা একেবারে নিস্তব্ধ। গ্রিলের গেটের সামনে ডাকাডাকি করতে অরিজিতের মা মিঠুদেবী বেরিয়ে আসেন। অরিজিতের কথা তুলতেই প্রায় কাঁদোকাঁদো গলায় তিনি বলেন, “বাড়িতে এখন আমি ছাড়া কেউ নেই। অরি খুব ঠান্ডা ছেলে। খুনের ঘটনায় তাকে পুলিশ ধরেছে শুনেই অবাক হয়ে গিয়েছি। ও জড়িত নয়। তদন্তকারীদের কাছে আমার ছেলের নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেউ বলেছে।”

তাঁর কথা বলার সময়েই বাইরে থেকে বাড়িতে আসেন স্বপনবাবু। তিনি বলেন, “ওই খুনের পরেই ছেলে ফোন করে জানিয়েছিল, সে ওই ঘটনায় জড়িত নয়। আমাদেরও এ নিয়ে দুর্ভাবনা করতে বারণ করেছিল। তবু পুলিশ ওকে কেন ধরল? ও নির্দোষ।” তিনি জানান, অরিজিৎ শেষ বাড়িতে এসেছিলেন কালীপুজোর সময়। দিন সাতেক কাটিয়ে তারপরে হস্টেলে যান। আর আসেননি। রবিবার তিনি বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছিলেন, ওই খুনের ঘটনায় তার নাম এক বন্ধু পুলিশকে বলেছে। কলেজের অধ্যক্ষ তাঁদের সোমবার দুপুরে তদন্তকারীদের সঙ্গে কথা বলতে থানায় যেতে বলেছেন। তারপর থেকে ছেলের আর ফোন পাননি।

অরিজিৎকে ছোটবেলা থেকেই যাঁরা চেনেন, খাতড়ার সেই সম্রাট চক্রবর্তী, তোতন মণ্ডলদের কথায়, “আমরা একসঙ্গে খেলাধুলা করেছি, একই স্কুলে পড়েছি। ওর ব্যবহার খুবই মিষ্টি। কোনও দিন কারোর সঙ্গে ওর ঝামেলা হয়নি। সে খুনের ঘটনায় জড়িত বলে বিশ্বাস করতে পারছি না।” অভিযোগ মানতে নারাজ অরিজিতের উচ্চমাধ্যমিকের স্কুল শিক্ষক পার্থসারথী গড়াই-ও। তিনি বলেন, “স্কুলে সবার ও প্রিয় ছিল। কোনও দিন কারও সঙ্গে তাঁকে দুর্ব্যবহার করতে দেখিনি। সেই ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে জেনে কষ্ট হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন