ক্ষতিপূরণ-মামলায় ইডেন সমারোহের প্রসঙ্গ

কেকেআর-কে সংবর্ধনা দিতে রাজ্য সরকার দেদার টাকা খরচ করছে। অথচ আয়লার বলি একটি মেয়ের বাবাকে মাত্র দু’লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ কেন দিতে পারছে না, মঙ্গলবার সে প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। এ দিন দুপুরে হাইকোর্টের ঢিল ছোড়া দূরত্বে ইডেন গার্ডেন্সের সামনে তখন হাজারো মানুষের ভিড়। বারান্দায় দাঁড়ালে কানে আসছে সংবর্ধনামঞ্চের মাইকের আওয়াজ। আদালতকক্ষের ভিতরে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসের এক কোণে দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০২:৫৭
Share:

কেকেআর-কে সংবর্ধনা দিতে রাজ্য সরকার দেদার টাকা খরচ করছে। অথচ আয়লার বলি একটি মেয়ের বাবাকে মাত্র দু’লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ কেন দিতে পারছে না, মঙ্গলবার সে প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

এ দিন দুপুরে হাইকোর্টের ঢিল ছোড়া দূরত্বে ইডেন গার্ডেন্সের সামনে তখন হাজারো মানুষের ভিড়। বারান্দায় দাঁড়ালে কানে আসছে সংবর্ধনামঞ্চের মাইকের আওয়াজ। আদালতকক্ষের ভিতরে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসের এক কোণে দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোক। পরনে ধুতি, শার্ট। তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের এক মানবাধিকার-কর্মী গোপাল কর্মকার। যিনি মৃত শিশুটির বাবার হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। উদ্দেশ্য, সুন্দরবনের ওই কন্যাহারা পিতা তাঁর নায্য পাওনাটা পান।

সুন্দরবনে পাঁচ বছর আগে সেই কালান্তক ঘূর্ণিঝড়ের হানায় একরত্তি মেয়েকে হারিয়েছেন কুমিরমারি গ্রামের অরবিন্দ ঢালি। আদালতের কাছে গোপালবাবুদের সংগঠনের অভিযোগ: প্রাকৃতিক দুর্যোগে মেয়ের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ পেতে অরবিন্দবাবু পাঁচ বছর ধরে প্রশাসনের দরজায়-দরজায় ঘুরছেন। কিন্তু সরকার ঘোষিত ক্ষতিপূরণের টাকা জোটেনি। এখন গোপালবাবুর আর্জি, হাইকোর্ট এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক।

Advertisement

আইনজীবীর মুখে অরবিন্দবাবুর কাহিনি শুনে জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার)-র খোঁজ করেন বিচারপতি দত্ত। রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি জানান, জিপি এ দিন হাইকোর্টে আসেননি। শুনে আদালতের নির্দেশ: বুধবার সব মামলার আগে এই মামলাটির শুনানি হবে, কাজেই জিপি যেন কোর্টে যথাসময়ে হাজির থাকেন। বিচারপতি বলেন, অরবিন্দবাবু কেন তাঁর মেয়ের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ পেলেন না, সেটা তিনি জিপি’র মুখেই জানতে চান। “যখন কেকেআরের সংবর্ধনার পিছনে সরকার এত টাকা খরচ করতে পারছে, তখন সামাজিক মঙ্গলের স্বার্থে সরকারের টাকার অভাব হচ্ছে কেন?” প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি দত্ত।

এজলাসের দরজা খুললে তখন ভেসে আসছে অধীর জনতার উদ্দেশে ইডেনের ঘোষণা, ‘আপনারা ধৈর্য্য ধরে বসুন। শাহরুখ খান কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন।’ এবং বিচারপতির এজলাসে তখনও দাঁড়িয়ে গোপালবাবু। ক্যানিং থেকে উজিয়ে ওঁকে হাইকোর্টে আসতে হল কেন?

গোপালবাবুর কৌঁসুলি মৌমিতা মণ্ডল আদালতকে জানিয়েছেন, ২০০৯-এর মে’তে আয়লা ঘূর্ণিঝড়ে গোটা সুন্দরবন বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। বহু লোকের প্রাণ যায়, ভিটেহারা হয় অসংখ্য পরিবার। সে ক্ষত এখনও শুকোয়নি। অরবিন্দবাবুর মেয়ে পূর্ণিমা তখন চার বছর কয়েক মাসের হবে। সে-ও মারা যায় ঝড়ে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তখন ঘোষণা করেছিল, আয়লায় মৃতদের পরিবারপিছু দু’লক্ষ টাকা এককালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। “অরবিন্দবাবু তা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু নানা মহলে ঘুরেও তিনি টাকা পাননি, প্রশাসনের তরফেও মেলেনি কোনও সাহায্য।” অভিযোগ কৌঁসুলির। কেন পাননি?

মৌমিতাদেবীর দাবি, “কখনও বলা হয়েছে, আবেদনে ভুল রয়েছে। উনি ফের আবেদন করেছেন। কোনও না কোনও অছিলায় তা-ও বাতিল হয়েছে। শেষমেশ ২০১২-য় ওঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আয়লায় মৃতদের পরিবারকে টাকা দেওয়ার প্রকল্প বন্ধই করে দেওয়া হয়েছে।”

তবে এ দিন আদালতের নির্দেশে গোপালবাবুরা কিছুটা হলেও আশা দেখছেন। গোপালবাবু বলছেন, “অরবিন্দ এখন দিনমজুরি করে কোনও মতে সংসার চালায়। টাকাগুলো যদি ওর হাতে তুলে দিতে পারি.......।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন