‘কথা’ দিল টিএমসিপি, ইস্তফা ফেরালেন অধ্যক্ষ

পরীক্ষায় নকলের আবদার আর নয়। নদিয়ার বাঙালঝি কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের শর্তে এ কথা মেনে নিল কলেজের টিএমসিপি নেতৃত্ব।বুধবার কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠক শেষে টিএমসিপি-র দখলে থাকা ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব শেখ, তাঁদের দৌরাত্ম্যের জন্য অনুতাপ জানিয়ে অধ্যক্ষ কৃষ্ণগোপাল রায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাপড়া শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৮
Share:

পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের পরে অধ্যক্ষ। বুধবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

পরীক্ষায় নকলের আবদার আর নয়। নদিয়ার বাঙালঝি কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের শর্তে এ কথা মেনে নিল কলেজের টিএমসিপি নেতৃত্ব।

Advertisement

বুধবার কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠক শেষে টিএমসিপি-র দখলে থাকা ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব শেখ, তাঁদের দৌরাত্ম্যের জন্য অনুতাপ জানিয়ে অধ্যক্ষ কৃষ্ণগোপাল রায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। বিপ্লব বলেন, “অধ্যক্ষকে কথা দিয়েছি, অন্তত আমি যত দিন সাধারণ সম্পাদক পদে থাকব, তত দিন কলেজে নকল করাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।” কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি অজিত তরফদারও কবুল করেছেন, “বৈঠকে ওই ছাত্র নেতা অধ্যক্ষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। ভবিষ্যতে যে এমন আর হবে না সে বিষয়েও কথা দিয়েছেন তিনি।” এই পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত নিজের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন কৃষ্ণগোপালবাবু। তবে নিঃশর্তে নয়। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ছাত্র সংসদ কোনও ভাবেই কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে সংবিধান নির্ধারিত সীমার বাইরে যেতে পারবে না।

তবে বিষয়টি মুখ খুলতে চাননি টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। তিনি বলেন, “অধ্যক্ষ কী শর্ত দিয়েছেন জানি না। কলেজের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।” তবে রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপি-র দৌরাত্ম্যে রাজ্য সরকারও যে অস্বস্তিতে রয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায় এ দিন তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “ওই কলেজে পরীক্ষায় নকল করা হয়ে থাকলে ফের পরীক্ষা হবে। কলেজ চলবে নিজের নিয়মেই। অধ্যক্ষকে তা জানিয়ে দিয়েছি।”

Advertisement

এ দিন পরিচালন সমিতির বৈঠকে অধ্যক্ষের দেওয়া প্রধান শর্তই ছিল কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে অধ্যক্ষই শেষ কথা বলবেন। এ ব্যাপারে ছাত্র সংসদের কোনও প্রশ্ন থাকলে তা কলেজ পরিচালন সমিতিকে জানাতে হবে। অধ্যক্ষ সরাসরি ছাত্রদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবেন না। সেই সঙ্গে কলেজে ভবিষ্যতে কোনও দিন নকল করাকে প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি।

শুক্রবার ওই কলেজে ঢুকে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের আবদার ছিল, ছাত্রছাত্রীদের নকলে বাধা দিলে চলবে না। অধ্যক্ষ তা মানতে চাননি। ছাত্র সংসদের দাবি না মেনে তিনি ছাত্র-নেতাদের কলেজ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন। তাতেও কাজ না-হওয়ায় পুলিশ ডেকেছিলেন।

তারই বদলা নিতে দীর্ঘক্ষণ কলেজের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল টিএমসিপি-র দখলে থাকা ছাত্র সংসদের নেতারা। সোমবার ফের ওই কলেজে ঢুকে জোর করে নকল করার দাবি তোলে তারা। অভিযোগ, বাধা দিলে অধ্যক্ষকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। অপমানিত অধ্যক্ষ ওই দিন রাতেই পদত্যাগপত্র লিখে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে পাঠিয়ে দেন।

ঘটনাটা জানাজানি হতেই শাসক দলের স্থানীয় নেতারা পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে থাকেন অধ্যক্ষকে। শিক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি অধ্যক্ষের পাশে রয়েছেন। মঙ্গলবার, তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় কৃষ্ণগোপালবাবুকে। সেখান থেকে তাঁকে টেলিফোনে কথা বলিয়ে দেওয়া হয় শিক্ষামন্ত্রী এমনকী দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সঙ্গেও।

দলের শীর্ষ নেতাদের আশ্বাস এবং টিএমসিপি নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি পেয়ে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগপত্র প্রত্যহার করে নিলেন অধ্যক্ষ। কৃষ্ণগোপালবাবু এ দিন বলেন, “ওঁরা যখন সবাই কথা দিয়েছেন তখন আর এক বার চেষ্টা করে দেখা যাক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন