কম দামে ফ্ল্যাটটি নিজের নামেই কেনেন পিয়ালি

সারদা গোষ্ঠীর ভরাডুবির পরে মায়ের সঙ্গেই এক ফ্ল্যাটে থাকতেন ওই সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের দ্বিতীয় স্ত্রী পিয়ালি সেন। তবে বাগুইআটির নারায়ণতলার ওই ফ্ল্যাটটি তাঁর মায়ের নয়। সেটি পিয়ালির নিজের নামেই কেনা। প্রতিবেশীদের বক্তব্য থেকে জানা যাচ্ছে, মা এবং দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে অত্যন্ত সাধারণ ভাবে থাকতেন পিয়ালি। পাড়ায় বিশেষ মেলামেশা করতেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:১০
Share:

বাগুইআটির এই ফ্ল্যাটেই থাকতেন পিয়ালি সেন। —নিজস্ব চিত্র।

সারদা গোষ্ঠীর ভরাডুবির পরে মায়ের সঙ্গেই এক ফ্ল্যাটে থাকতেন ওই সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের দ্বিতীয় স্ত্রী পিয়ালি সেন। তবে বাগুইআটির নারায়ণতলার ওই ফ্ল্যাটটি তাঁর মায়ের নয়। সেটি পিয়ালির নিজের নামেই কেনা। প্রতিবেশীদের বক্তব্য থেকে জানা যাচ্ছে, মা এবং দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে অত্যন্ত সাধারণ ভাবে থাকতেন পিয়ালি। পাড়ায় বিশেষ মেলামেশা করতেন না। কাউকে জানতে-বুঝতেও দেননি যে, তিনি সারদা-প্রধানের স্ত্রী।

Advertisement

আগে সল্টলেকে সুদীপ্তের একটি বাড়িতে থাকতেন পিয়ালি। সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পরে পুলিশ সেই বাড়িটি সিল করে দেয়। তার পরেই মা এবং ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাগুইআটির ওই ফ্ল্যাটে উঠে যান পিয়ালি। বুধবার বিকেলে সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর ১৫ বছরের মেয়ে এবং ১৩ বছরের ছেলে দিদিমার সঙ্গে এখনও সেখানেই আছে। তবে শুক্রবার ওই ফ্ল্যাটের কেউ দরজা খোলেননি।

২০১২ সালের জানুয়ারিতে বাগুইআটির ফ্ল্যাটটি ওই এলাকারই বাসিন্দা কাশীনাথ ভকতের কাছ থেকে কিনেছিলেন পিয়ালি। ৭৪৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন ১০ লক্ষ টাকায়। যা ওই সময়ের বাজারদরের থেকে বেশ কিছুটা কম। তবে পিয়ালি যখন ফ্ল্যাটটি কেনেন তখন কাশীনাথবাবু জানতেন না যে, ওই মহিলা সুদীপ্তের স্ত্রী। শুক্রবার দুপুরে বাগুইআটির নারায়ণতলার এক প্রোমোটারের অফিসে বসে এমনটাই দাবি করলেন কাশীনাথবাবু।

Advertisement

শুক্রবার পিয়ালির মা আর সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি। এ দিন বেলা ৩টে এবং বিকেল সাড়ে ৪টেয় দু’বার তাঁদের ফ্ল্যাটে গিয়েও তাঁর সাক্ষাৎ মেলেনি। বারবার কলিং বেল বাজানো সত্ত্বেও পিয়ালির মা দরজা খোলেননি। তবে ভিতর থেকে দরজার আই-হোলে কেউ কেউ যে চোখ রাখছেন, সেটা বিলক্ষণ টের পাওয়া গিয়েছে।

পিয়ালির ফ্ল্যাটের কাছেই তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়ি। পিয়ালি যে-ফ্ল্যাট কিনেছেন, তার প্রোমোটার তিমির বিশ্বাস জানান, ওই আত্মীয়তার সূত্র ধরেই কাশীনাথবাবুর সঙ্গে পিয়ালির পরিচয় হয়। তার পরে কাশীনাথবাবুর কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি কেনেন ওই মহিলা। কাশীনাথবাবু ২০০৫ সালে ফ্ল্যাটটি কিনলেও তিনি সেখানে থাকতেন না বলেই জানান। পিয়ালি যখন তাঁর ফ্ল্যাটটি কেনেন, তখন তার বাজারদর ২০ লক্ষ টাকার আশেপাশে। তা হলে কাশীনাথবাবু এত কম দামে সেটি পিয়ালিকে বিক্রি করলেন কেন? কাশীনাথবাবু জানান, মেয়ের বিয়ের জন্য তখনই তাঁর টাকার দরকার ছিল। তাই তাড়াহুড়ো করে ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দেন।

ওই আবাসনে গিয়ে জানা গেল, পিয়ালি যে সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী, সেটাই অনেকে জানতেন না। আবাসনের দোতলায় একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা বলেন, “ওই মহিলা খুব কম মিশতেন। ফলে আমরা ভাল করে চিনতামই না। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পারলাম, পিয়ালি সেন সুদীপ্ত সেনের দ্বিতীয় স্ত্রী।” পিয়ালির এক প্রতিবেশী জানান, আসলে উনি এতটাই কম মিশতেন আর এতটাই অনাড়ম্বর ভাবে থাকতেন যে, কখনওই মনে হয়নি, উনি বিশাল কোনও বড়লোকের স্ত্রী। নাম জানাতে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, “পিয়ালিকে অনেক সময়েই রিকশাওয়ালার সঙ্গে ভাড়া নিয়েও বচসা করতে দেখেছি। কী করে বুঝব বলুন, রিকশার ভাড়া নিয়ে বচসা করা ওই মহিলা আসলে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন