খাগড়াগড় নিয়েও চাপে, বোঝালেন মমতা

সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তের পাশাপাশি খাগড়াগড় বিস্ফোরণের এনআইএ তদন্ত নিয়েও যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কতটা বিড়ম্বনায়, শনিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বক্তৃতা তার সাক্ষী। খাগড়াগড় বিস্ফোরণে তৃণমূলের যোগসাজশের অভিযোগ তুলে আগেই সরব হয়েছে বিজেপি। এ দিন তার জবাব দিতে গিয়ে এই বিস্ফোরণের পিছনেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের হাত খুঁজে পেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৯
Share:

সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তের পাশাপাশি খাগড়াগড় বিস্ফোরণের এনআইএ তদন্ত নিয়েও যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কতটা বিড়ম্বনায়, শনিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বক্তৃতা তার সাক্ষী। খাগড়াগড় বিস্ফোরণে তৃণমূলের যোগসাজশের অভিযোগ তুলে আগেই সরব হয়েছে বিজেপি। এ দিন তার জবাব দিতে গিয়ে এই বিস্ফোরণের পিছনেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের হাত খুঁজে পেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।

Advertisement

ক্ষিপ্ত কণ্ঠে শনিবার মমতা বলেন, “জঙ্গি, না কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘র’-কে দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, তা-ও দেখতে হবে!” বিজেপি নেতৃত্বের উদ্দেশে তিনি বলেন “তুমি মশলা নিয়ে লোক ঢোকাবে, তুবড়ি ফাটাবে, আর আমার দোষ হয়েছে বলবে!”

খাগড়াগড় কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি-জালের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ায় পর থেকেই মমতা বলে আসছেন, সীমান্তে অনুপ্রবেশ আটকানো কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী বিএসএফের কাজ, রাজ্য পুলিশের নয়। এ দিনও তিনি প্রশ্ন করেন, “ওই ব্যক্তি বর্ধমানে পৌঁছল কী করে? এটা তো অনুপ্রবেশ! অনুপ্রবেশ রোখার দায়িত্ব পুরোটাই তো বিএসএফের। রাজ্যের কি দোষ?” মমতা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্যের। কিন্তু সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব যাদের, তারা যদি রাজ্য সরকারকে সময় মতো তথ্য না দেয়, তা হলে রাজ্য ব্যবস্থা নেবে কী ভাবে?

Advertisement

তৃণমূলের সঙ্গে বাংলাদেশের মৌলবাদী দল জামাতে ইসলামির বোঝাপড়ার অভিযোগ খাগড়াগড় কাণ্ডের আগেই উঠেছিল। এ বিষয়ে যোগসূত্র হিসেবে তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য আহমেদ হাসান ইমরানের নাম উঠেছিল। ইমরান জঙ্গি সংগঠন সিমি-র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সম্প্রতি সারদা তদন্তে সিবিআই আবার ইমরানকে ফের তলব করেছে। সারদার কোটি কোটি টাকা বাংলাদেশি জঙ্গিদের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। কুণাল ঘোষ আগেই দাবি করেছেন, ইমরানের হাত ঘুরে সারদার টাকা জঙ্গিদের কাছে হিয়েছে। বাংলাদেশ থেকেও এই অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে সিবিআই ইমরানকে গ্রেফতার করে এনআইএ-র হাতে তুলে দিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এই আশঙ্কা থেকেই মমতা এ দিন সিবিআই ও কেন্দ্রকে আক্রমণে বেনজির লাগামহীন হয়ে উঠেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এ দিন সভায় তৃণমূল নেত্রী বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ষড়যন্ত্র করেই চলেছে। খাগড়াগড় কাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গত মে মাসে এখানে এসে উনি (নরেন্দ্র মোদী) বলেছিলেন, অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে হবে। এর পর জুন মাসে ওই লোক (খাগড়াগড় কাণ্ডের নায়ক) বর্ধমানে এল!” কয়লাখনি ও টু-জি তদন্তে সুপ্রিম কোর্ট যে ভাবে সিবিআইয়ের প্রধানকে ভর্ৎসনা করেছেন, তার উল্লেখ করে মমতা বলেন, এর পর সিবিআইয়ের তো আর থাকাই উচিত নয়। তাঁর কথায়, “নতুন কোনও সংস্থা হোক। তা কিন্তু আরএসএস মার্কা লোক দিয়ে চালানো যাবে না!”

মমতার আক্রমণের জবাবে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের অবশ্য বক্তব্য, “বোমা যে ওঁর দলের লোকেরাই বানিয়েছে, তা প্রমাণিত। তদন্তে অনেক কথা বেরিয়ে আসার উপক্রম হওয়ায় উনি এখন যা খুশি তাই বলছেন।” রাহুলবাবু ফের বলেন, “তৃণমূল জামাতে ইসলামিকে ভোটের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। বিনিময়ে জঙ্গি কাজে তাদের বাংলার মাটি ব্যবহার করতে দিয়েছে।”

রাজ্যে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের বাড়বাড়ন্ত রুখতেও মমতা প্রশাসনিক নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর। তিনি কর্মীদেরও সতর্ক থাকতে বলেন। তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ বিভিন্ন স্থানে আরএসএসের শাখা বন্ধ করে দিচ্ছে বলে এ দিনই রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির কাছে অভিযোগ জানিয়েছে সঙ্ঘ। সংগঠনের দক্ষিণবঙ্গের প্রান্ত-সঙ্ঘচালক অতুলকুমার বিশ্বাস রাজ্যপালের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, সরকারের কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট তলব করে ব্যবস্থা নিতে বলুন রাজ্যপাল। সরকারি মদতে রাজ্যে আরএসএসের উপর যে হামলা শুরু হয়েছে, সে বিষয়ে কেন্দ্রকে রিপোর্ট পাঠানোর আর্জিও জানিয়েছে সঙ্ঘ।

রাজ্যপালকে দেওয়া অভিযোগে আরএসএস জানিয়েছে, বারুইপুর থানা এলাকার জয়াতলা বৃন্দখালি গ্রামে তাদের শাখা চলছিল। সে সময় বারুইপুর থানার আইসি সুব্রত কংসবণিক সেখানে গিয়ে আরএসএস সদস্যদের জানিয়ে দেন, বারুইপুর থানা এলাকায় প্রকাশ্যে সঙ্ঘের কোনও কাজ করা যাবে না। বাড়ির ভিতর কেউ কিছু করতে পারে। গোসাবা এলাকাতেও একই ঘটনা ঘটে। সেখানকার আইসি মহম্মদ বাজরুল খানও গোসাবা এলাকায় প্রকাশ্যে আরএসএসের কাজ করতে নিষেধ করেছেন বলে সঙ্ঘের কর্তারা রাজ্যপালের কাছে নালিশ জানান। তাঁদের আরও অভিযোগ, পুলিশ সুপারকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। আরএসএসের রাজ্য মুখপাত্র জিষ্ণু বসু বলেন, সম্প্রতি সঙ্ঘের প্রশিক্ষণ শিবিরে সুন্দরবন এলাকা থেকেই ৫০০ যুবক যোগ দিয়েছিলেন। সেই কারণেই দিশেহারা হয়ে সরকার পুলিশ পাঠিয়ে সঙ্ঘের কাজ কাজ বন্ধ করতে চাইছে।

আরএসএস-বিজেপি সম্পর্কে মমতার সমালোচনার কটাক্ষ করেছে সিপিএমও। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদী মুখ্যমন্ত্রী হলে উনি (মমতা) অভিনন্দন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন। ১৯৯৮-৯৯ সালে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গড়েছিলেন। দিল্লিতে আরএসএস মুখপত্রের অনুষ্ঠানে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, মনোবাসনা পূর্ণ হল। আরএসএস নেতাদের দেশপ্রেমিকও বলেছিলেন।” বিমানবাবুর প্রশ্ন, এত দিনে তাঁর বোধোদয় হল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন