খরচের খাতায় ফেলবেন না, সনিয়ার দ্বারে মানস-সোমেন

সংগঠন ভাঙনের গ্রাসে। পথে নেমে তেমন কোনও আঁচড় কাটার চেষ্টাও বিশেষ নেই। তবু আন্দোলনের পথে থেকেই পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের পক্ষে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখা সম্ভব। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০২
Share:

সংগঠন ভাঙনের গ্রাসে। পথে নেমে তেমন কোনও আঁচড় কাটার চেষ্টাও বিশেষ নেই। তবু আন্দোলনের পথে থেকেই পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের পক্ষে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখা সম্ভব। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। দলের সর্বভারতীয় সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে দেখা করে সেই আর্জিই জানালেন প্রদেশ কংগ্রেসের দুই বর্ষীয়ান নেতা সোমেন মিত্র ও মানস ভুঁইয়া। সভানেত্রীর কাছে তাঁদের আবেদন, বাংলায় কংগ্রেসকে এখনই খরচের খাতায় যেন না ফেলা হয়! সীমিত শক্তি নিয়েই বাংলায় কংগ্রেস এখনও লড়াই করতে সক্ষম বলে তাঁদের বিশ্বাস।

Advertisement

সংসদে হট্টগোল করায় এক ধাক্কায় কংগ্রেসের ২৫ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করেছেন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। সাসপেন্ডেড সাংসদদের তালিকায় বাংলার দু’জন আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী ও রাষ্ট্রপতি-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ও আছেন। সেই সিদ্ধান্ত ঘিরে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে সংঘাতে সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বয়ং সনিয়া। জাতীয় রাজনীতিতে এমন ব্যস্ততার মধ্যেও ১০, জনপথে সোমবার পশ্চিমবঙ্গের দুই বর্ষীয়ান নেতাকে যে সময় দেওয়া হয়েছে, তাকেই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলা হচ্ছে কংগ্রেস সূত্রে। রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কংগ্রেসের অবস্থানের বিষয়ে সনিয়াকে অবহিত করেছেন দুই নেতাই। সভানেত্রী তাঁদের বলেছেন, রাজ্যে কংগ্রেসকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে হবে।

বস্তুত, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আগামী ১৯ অগস্ট দলের আসন্ন সংখ্যালঘু সম্মেলনকে ঘিরে কংগ্রেস নেতৃত্ব যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঝাঁপিয়েছেন, তার জন্য সন্তোষ প্রকাশও করেছেন সনিয়া। ওই সম্মেলনে এআইসিসি-র তরফে কাদের পাঠানো যায়, আলোচনা করে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি মানসবাবুকে জানিয়েছেন। সোমেনবাবু অবশ্য সভানেত্রীর সঙ্গে তাঁর এই সাক্ষাৎকে সৌজন্যমূলক বলেই অভিহিত করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি মাঝেমধ্যে দিল্লি এসে সনিয়াজি’র সঙ্গে দেখা করি। এ বারও তা-ই করেছি।’’

Advertisement

মানসবাবু দিল্লি থেকেই মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস যে পশ্চিমবঙ্গে লড়াই করতে তৈরি, সেই কথা জানিয়ে সভানেত্রীর নির্দেশিকা চেয়েছি। সংখ্যালঘু সম্মেলনে এআইসিসি যাতে প্রতিনিধিদের পাঠায়, সেই কথাও বলেছি।’’ সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর কাছে এই ব্যাপারে আগেই চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সংখ্যালঘু শাখার চেয়ারম্যান খালেদ এবাদুল্লা। দিল্লি সফরে গিয়ে মানসবাবু সনিয়ার পাশাপাশিই এআইসিসি-র তরফে রাজ্যে কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক সি পি জোশী, শাকিল আহমেদ, শাকিল আহমেদ খান, এআইসিসি-র সংখ্যালঘু চেয়ারম্যান খুরশিদ আহমেদ সৈয়দের সঙ্গেও দেখা করেছেন। পরে রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের বাড়িতে সোমেন ও মানসবাবুকে নিয়ে বৈঠকেও সংখ্যালঘু সম্মেলন সফল করা নিয়ে কথা হয়েছে।

উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো যে সব জেলায় কংগ্রেসের এখনও প্রভাব রয়েছে, তার সবক’টি এলাকাই সংখ্যালঘু প্রধান। আপাতত গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব পাশে সরিয়ে গোটা প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বই তাই সংখ্যালঘু সম্মেলনে গা ঘামাচ্ছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ইতিমধ্যেই জেলা সভাপতিদের এই ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। মানসবাবুরা চাইছেন সংখ্যালঘু সম্মেলন ‘সফল’ দেখিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে সনিয়ার কাছে দলের অস্তিত্ব জানান দিতে। যাতে ভোটের আগে সম্ভাব্য কোনও জোটের আলোচনায় দলের কোলে ঝোল টানার সুযোগটুকু থাকে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন