গাইঘাটা থানায় অভিযোগ জানিয়ে বেরিয়ে আসছেন সুব্রত ঠাকুর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
তৃণমূল সমর্থকেরা তাঁর গাড়ি আটকে হামলা করেছে বলে অভিযোগ তুললেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী সুব্রত ঠাকুর। ঘটনার সময়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গাড়িও যশোহর রোডের ওই এলাকায় দেখা গিয়েছিল বলে থানায় অভিযোগ করেন সুব্রত।
রবিবার স্বরূপনগর থেকে উপনির্বাচনের প্রচার সেরে গাইঘাটার বাড়িতে ফিরছিলেন বিজেপি প্রার্থী। তাঁর অভিযোগ, রাত ৯টা নাগাদ ফেরার পথে কলাসীমা বাজারে একটি কীর্তনের আসর দেখে প্রসাদ খাওয়ার জন্য গাড়ি থামান। সুব্রতবাবুর দাবি, তিনি গাড়ি থেকে নামার ঠিক মুখে তারক দাস নামে স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী মদ্যপ অবস্থায় গাড়ির সামনে চলে আসে। তারকের সঙ্গে থাকা ৮-১০ জন গাড়ি ঘিরে গালিগালাজ শুরু করে, গাড়িতে লাঠির বাড়িও মারে। সুব্রতর অভিযোগ, তিনি গাড়ি থেকে নামতে গেলে তাঁকেও মারধরের চেষ্টা হয়। কিন্তু বিজেপির স্থানীয় কর্মীরা বাধা দেওয়ায় দুষ্কৃতীরা বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। সুব্রতবাবু পরে বলেন, “আমি কোনও সভা করতে যাইনি। কোনও বক্তৃতা করতেও নয়। স্রেফ প্রসাদ খাব বলে গাড়ি থেকে নামতে যাচ্ছিলাম। সে সময়েই হামলা হল। আসলে তৃণমূল এখানে হারবে বলে ভয় পেয়ে গিয়েছে। সে জন্যই এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছে।” লিখিত অভিযোগে সুব্রতবাবুর দাবি, ঘটনার সময়ে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর গাড়ি ওই এলাকা দিয়ে যেতে দেখেছেন তিনি।
রাতেই কলাসীমা বাজারের কিছু বাসিন্দা সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে বলা হয়, দলীয় পতাকা লাগানো গোটা দশেক গাড়ি নিয়ে হঠাৎই কীর্তনের আসরে এসে হাজির হন সুব্রত। পরপর গাড়ি দাঁড় করানোয় রাস্তা আটকে যায়। ভক্তদের প্রসাদ পেতেও অসুবিধা হচ্ছিল। সে কথা বলতেই সুব্রতবাবুর সঙ্গীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁদের অনেকে মদ্যপ ছিলেন বলেও অভিযোগ। তবে প্রার্থীর গাড়ি ঘিরে হামলার ঘটনা ঘটেনি। বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গেরও অভিযোগ করেছেন ওই বাসিন্দারা।
বিজেপি প্রার্থীর উপরে হামলার চেষ্টা নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে আচমকাই সরগরম বনগাঁ। জেলার বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, সুব্রতর সঙ্গে যা করা হয়েছে, প্রায় সে রকমই ব্যবহার করা হয়েছিল গত লোকসভা নির্বাচনে আসানসোলে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে। সে সময় কখনও তাঁর বিরুদ্ধে মদ্যপ অবস্থায় প্রচারের অভিযোগ করেছে তৃণমূল, কখনও করা হয়েছে অস্ত্র আইনে মামলা। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, এই সব করেও বাবুলের জয় যেমন ঠেকানো যায়নি, তেমনই সুব্রতর জয়ও আটকানো যাবে না।
সুব্রতর অভিযোগকে অবশ্য ‘স্রেফ গাঁজাখুরি গল্প’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, “নিজের গুরুত্ব বাড়াতে চেয়ে এ সব বলছেন উনি (সুব্রত)।” তারক দাস নামে ওই এলাকায় তৃণমূলের কোনও কর্মী নেই বলেও দাবি তাঁর। একই সঙ্গে জেলার তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, এই ঘটনার পিছনে বিজেপিরই বিক্ষুব্ধ অংশের যোগ থাকতে পারে। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সুব্রত এবং তাঁর বাবা তথা মমতা মন্ত্রিসভার প্রাক্তন সদস্য মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগেই তাঁদের নিয়ে গোলমাল শুরু হয়ে গিয়েছে। সে সময় বিজেপির বহু নেতাই ওই দু’জনকে দলে নেওয়ার বিরুদ্ধে এমনকী পথে নেমে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, এ সবের পরেও মঞ্জুল-সুব্রতকে দলে নেওয়া এবং প্রার্থী করায় বিজেপির বনগাঁ এলাকার বহু নেতা-কর্মীই ক্ষোভ দেখিয়েছেন। বনগাঁ এলাকায় বিজেপির দীর্ঘদিনের এক নেতা বিক্ষুব্ধ প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে দল থেকে বহিষ্কৃতও হয়েছেন। এ সব থেকেই স্পষ্ট, সুব্রতকে নিয়ে যথেষ্টই অস্বস্তি রয়েছে বিজেপির অন্দরে। এ সব ঘটনা তারই প্রকাশ বলে জানাচ্ছেন জেলা তৃণমূল নেতারা।