গণভোটের মুখে চিঠিতে দুঃখপ্রকাশ অভিজিতের

ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, গত সপ্তাহে দাবি করেছিলেন তিনি। অথচ তাঁরই পদত্যাগের দাবিতে বৃহস্পতিবার গণভোট শুরু করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় সমাবর্তনে আমন্ত্রিতদের মধ্যে কত জন আসবেন, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। পরিস্থিতি যে মোটেই সহজ নয়, তা বুঝে কার্যত দুঃখ প্রকাশ করে শিক্ষক সংগঠন ‘আবুটা’কে চিঠি দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২৭
Share:

উপাচার্যের ইস্তফার দাবিতে ছাত্রছাত্রীদের গণভোট। বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, গত সপ্তাহে দাবি করেছিলেন তিনি। অথচ তাঁরই পদত্যাগের দাবিতে বৃহস্পতিবার গণভোট শুরু করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় সমাবর্তনে আমন্ত্রিতদের মধ্যে কত জন আসবেন, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।

Advertisement

পরিস্থিতি যে মোটেই সহজ নয়, তা বুঝে কার্যত দুঃখ প্রকাশ করে শিক্ষক সংগঠন ‘আবুটা’কে চিঠি দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের পরে এই প্রথম। ছাত্রছাত্রীদের নিজের সন্তানতুল্য বলে উল্লেখ করে চিঠিতে অভিজিৎবাবু লিখেছেন, ‘আমার সন্তানদের মান-অভিমান ও বেদনার দায় আমারই।’ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর জন্য সকলকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ছাত্র-শিক্ষকদের একটি বড় অংশের বিরোধিতা সত্ত্বেও অভিজিৎবাবুকেই স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করেছেন আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। কিন্তু তাতে আন্দোলনে ভাটা পড়েনি। ক্লাসে ফিরলেও ছাত্রছাত্রীরা রোল-কলে সাড়া দিচ্ছেন না। অভিজিৎবাবুর পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাস জুড়ে স্লোগান-পোস্টার সাঁটা। গণ কনভেনশন করেও নিজেদের দাবি তুলে ধরছেন ছাত্র-শিক্ষকেরা। অভিজিৎবাবুর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ-সহ শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ আধিকারিকের প্রশ্ন, এমন চূড়ান্ত বিরোধিতার আবহে উপাচার্য কাজ চালাবেন কী করে? চাপে পড়েই উপাচার্য এখন আবুটা-কে চিঠি দিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

ঘেরাওকারী পড়ুয়াদের উপরে পুলিশি আক্রমণের পরে প্রায় দেড় মাস কেটে গিয়েছে। স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে অভিজিৎবাবু দায়িত্ব নিয়েছেন তিন সপ্তাহ আগে। এত দিন পরে উপাচার্যের দেওয়া এই চিঠিকে ছাত্রছাত্রীরা খুব একটা আমল দিচ্ছেন না। আন্দোলনকারী ছাত্রী অরুমিতা মিত্র বৃহস্পতিবার বলেন, “ঘটনার দেড় মাস পরে যদি অভিভাবক হিসেবে ওঁর দুঃখ হয়েই থাকে, তা হলে সেটা আমাদের সামনে এসে বলুন। আবুটা-কে চিঠি পাঠিয়ে কী হবে?” ছাত্রছাত্রীরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলবে।

আবুটা অবশ্য উপাচার্যের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অলোক ঘোষ বলেন, “ওঁর চিঠিকে আমরা সদর্থক ভাবে দেখছি। উনি আলোচনা চেয়েছেন। আমরা তাতে রাজি।” জুটা-র সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জনা গুপ্ত উপাচার্যের চিঠির বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে না-জেনে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

চিঠিতে কী লিখেছেন উপাচার্য?

২৮ অক্টোবর, মঙ্গলবার লেখা ওই চিঠিতে অভিজিৎবাবু জানিয়েছেন, ১৬ সেপ্টেম্বর এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি) এবং আইসিসি-র অবরুদ্ধ সদস্যদের উদ্ধার করার জন্যই পুলিশ ডাকা হয়েছিল। কিন্তু অবরুদ্ধদের উদ্ধার করতে গিয়ে ‘সন্তানতুল্য’ ছাত্রছাত্রীদের কোনও ক্ষতি হোক, তা তিনি চাননি। অভিজিৎবাবুর ভাষায় সে-রাতের ঘটনা ‘দুর্ভাগ্যজনক ও অনভিপ্রেত’, ‘দুঃখজনক ও মর্মান্তিক’।

১৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসি-র সদস্যদের ঘেরাও করেন এক দল ছাত্রছাত্রী। তখন উপাচার্য জানিয়েছিলেন, প্রাণ বাঁচানোর তাগিদেই পুলিশ ডেকে ঘেরাওমুক্ত হয়েছিলেন তিনি। অথচ সুর বদলে আবুটা-র কাছে পাঠানো চিঠিতে অভিজিৎবাবু দাবি করেছেন, সে-রাতের ঘটনার ‘আকস্মিক অভিঘাতে’ তিনি বিপর্যস্ত বোধ করেন। তাঁর তৎকালীন প্রতিক্রিয়া সেই বিপর্যস্ত অবস্থারই প্রতিফলন। যদিও ‘অনতিবিলম্বে’ ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক-মানসিক যন্ত্রণা তাঁকে অস্থির করেছে বলে দাবি উপাচার্যের।

এই কথাটা জানাতে তাঁর এত বিলম্ব হল কেন?

উপাচার্যের জবাব মেলেনি। তিনি টেলিফোন ধরেননি। এসএমএস করা সত্ত্বেও জবাব দেননি। গত ১০ অক্টোবর স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিলেও অভিজিৎবাবু ক্যাম্পাসে যান তার এক সপ্তাহ বাদে। সে-দিন থেকেই ছাত্রছাত্রীদের ‘সন্তানতুল্য’ বলে অভিহিত করছেন উপাচার্য।

যদিও এতে বিন্দুমাত্র নরম না-হয়ে মূলত অভিজিৎবাবুর পদত্যাগের প্রশ্নে বৃহস্পতিবার গণভোট শুরু করেছেন কলা শাখার ছাত্রছাত্রীরা। রাত ৮টা পর্যন্ত চলে এ দিনের গণভোট। আজ, শুক্রবার ফের বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ভোট চলবে। তার পরে গণনা করে ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন পড়ুয়ারা। একই প্রশ্নে ১১-১২ নভেম্বর বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার ছাত্রছাত্রীদের গণভোট নেওয়া হবে। ভোটাভুটি স্বচ্ছ ভাবে হচ্ছে কি না, সে-দিকে নজর রাখার জন্য উপস্থিত থাকছেন তিন পর্যবেক্ষক সমাজকর্মী অনুরাধা তলোয়ার এবং সুজাত ভদ্র ও আইনজীবী রুবি মুখোপাধ্যায়। রুবিদেবী জানান, ভবিষ্যতে কেউ আইনি পদক্ষেপ করতে চাইলে এই গণভোটের ফল সহায়ক হতে পারে।

কী ভাবে? রুবিদেবী বলেন, “হাইকোর্টে দায়ের করা একটি মামলায় আবেদনকারীর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ২০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী আন্দোলনে সামিল। তার কোনও ভিত্তি আছে কি না, এই গণভোটের ফলাফলই সেটা বুঝিয়ে দেবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন